প্রতিবেশী ভারতের ব্যাংকগুলো শতভাগ দেশীয় কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার (সিবিএস) ব্যবহার করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি ব্যাংক এখনো বিদেশি সফটওয়্যারনির্ভর রয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং এতে বৈদেশিক মুদ্রা যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আপাতত রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল—এই ছয় ব্যাংককে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের তাগিদ দিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার অনলাইনে ওই ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে ‘দেশীয় কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার ব্যবহার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ’ শীর্ষক বৈঠক করে এ তাগিদ দেন।
জানা গেছে, ছয় ব্যাংকই দেশি সফটওয়্যার ব্যবহারে সম্মত হয়েছে। দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে বর্তমানে ২৮টি দেশীয় সিবিএস ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) জানায়, দেশে সফটওয়্যার খাত থেকে বছরে ১০০ কোটি ডলার আয় হয়। লিড করপোরেশন, ফ্লোরা সিস্টেমস, মিলেনিয়াম সফটওয়্যার, ইনফিনিটি সফটওয়্যার, সাউথটেক, আইআরএ ইনফোটেক হচ্ছে দেশীয় ব্যাংকিং সফটওয়্যার কোম্পানি।
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস্-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের দিকে যাচ্ছি। এ পথে আমাদের যেতেই হবে। কারণ, দেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হলে পরিচালনগত সমস্যায় দ্রুত সেবা পাওয়া যায়।’
সোনালী ব্যাংক
সফটওয়্যার ব্যবহারে মোটা দাগে খরচ হয়, যা দুই রকমের—লাইসেন্স ও রক্ষণাবেক্ষণ। এ ব্যাংক সোনালী ইনটেলেক্ট লিমিটেডের (এসআইএল) সফটওয়্যার ব্যবহার করে আসছে। বৈঠকে সোনালী ব্যাংক জানায়, লাইসেন্স ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তারা এ পর্যন্ত ব্যয় করেছে ১২৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ব্যাংকটি ৫১ শতাংশ মালিকানা হাতে রেখে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মাধ্যমে সহযোগী কোম্পানি গঠন করতে চায়।
জনতা ব্যাংক
জনতা ব্যাংক জানায়, তারা ১ কোটি ৯০ লাখ ৩ হাজার ৮০০ ডলার ব্যয় করেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা দরে) দাঁড়ায় ১৬১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ২০০৯ সালে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক টেমেনস কোম্পানির টিটোয়েন্টিফোর নামক সিবিএস কিনেছে এ ব্যাংক। আর স্থানীয় সমস্যার সমাধান করছে ডেটাসফট সিস্টেমস বাংলাদেশ লিমিটেড। এ ব্যাংকও সহযোগী কোম্পানি গঠন করে দেশীয় সিবিএস তৈরির পক্ষে।
অগ্রণী ব্যাংক
২০০৮ সালে টেমেনস থেকে এ ব্যাংকও লাইসেন্স নেয়। ২০১৮ সালে আবার নবায়ন করে ২০২৮ সাল পর্যন্ত। সফটওয়্যারের লাইসেন্স বাবদ ১৮৫ কোটি ২৩ লাখ এবং রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে তারা। মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৬৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, যা রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
রূপালী ব্যাংক
সোনালীর মতো এই ব্যাংকও ব্যবহার করছে সোনালী ইনটেলেক্টের সিবিএস। এ ব্যাংকের ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ব্যাংকটি চায়, অভিন্ন হোক সেবার ধরন। আর এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে সিবিএস তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হোক।
বেসিক ব্যাংক
শতভাগ ভারতীয় মালিকানাধীন কোম্পানি থ্রিআই ইনফোটেক লিমিটেড থেকে বেসিক ব্যাংক সিবিএস কিনেছে। ব্যাংকটি এযাবৎ ব্যয় করেছে ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১৫০টি শাখায় তা সরবরাহ করা হয়েছে। লাইসেন্স এমনভাবে নেওয়া হয়েছে, যাতে প্রতিবছর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন করা যায়।
বিডিবিএল
সিবিএস কেনা বাবদ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) সবচেয়ে কম ৭৫ লাখ টাকা খরচ করেছে। আইস্টেলার নামক দেশীয় সিবিএস ব্যবহার করছে ব্যাংকটি। ২০১৫ সালে তা কেনা হয়েছে ইআরএ ইনফোটেক লিমিটেডের কাছ থেকে।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক যে কাজটি এগোচ্ছে না। তবে উদ্যোগটিকে আমরা স্বাগত জানাই। ২৮টি ব্যাংক এখন দেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করছে—এটা অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক।’ তিনি আরও বলেন, বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারের বড় বিপদটি হচ্ছে তথ্য পাচারের ঝুঁকি। ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে কেউ তথ্য চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে কি না, সেই আশঙ্কা সব সময়ই থেকে যায়।