প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাশিত স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। উন্নয়ন পরিকল্পনার সঠিক তদারকি ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে নজরদারি বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট কৌশলগত পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
আজ রোববার এক বিবৃতিতে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেছেন।
বাজেটে সরকারি আয় বৃদ্ধিতে বর্ধিত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আরোপের প্রস্তাবের প্রভাব এবং সংকটাপন্ন ও অনিয়মে জর্জরিত ব্যাংক খাত সংস্কারে প্রতিশ্রুত উদ্যোগ না থাকায় বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি। পাশাপাশি বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের সংখ্যা ও মাসিক ভাতার হার বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের নারী উন্নয়নে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রদানের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানি খাতের ঘাটতি পূরণে জনগণের করের টাকায় ভর্তুকি অব্যাহত রাখা ও বিশেষ কৌশলে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে টিআইবি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অনিয়ম, দুর্নীতি ও যোগসাজশের ফলে ধুঁকতে থাকা ব্যাংক খাত সংস্কারে বাজেট প্রস্তাবে কোনো উদ্যোগ না থাকা, আমানতকারীদের আস্থার সঙ্গে সরকারের প্রতিশ্রুতির অন্যায্য বরখেলাপ। ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ ও যোগসাজশের সঙ্গে দুর্নীতিবাজ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনার উদ্যোগ না নিয়ে বিদ্যমান করপোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক।’ এ ছাড়া বাজেট প্রস্তাবে বিশেষ কৌশলে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অর্থাৎ জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার উদ্যোগ যেমন অসাংবিধানিক তেমনি অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি সহায়ক উল্লেখ করে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ ধরনের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে সততা চর্চাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাজেট প্রস্তাবনায় সরকারি আয় বৃদ্ধির জন্য নেওয়া বেশির ভাগ মৌলিক চাহিদার ওপর কর আরোপের ফলে আদতে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের ওপর এর তীব্র প্রভাব পড়বে, যা সার্বিকভাবে সমাজে আয়বৈষম্য ও অসাম্য-বিভেদ বৃদ্ধিতেই ভূমিকা রাখবে। উদ্বেগজনক মাত্রায় বাড়তে থাকা বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে বাজেট প্রস্তাবনায় উল্লেখযোগ্য ও দিকনির্দেশনামূলক কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনা না থাকাটা দুঃখজনক ও হতাশাজনক। তবে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় সুবিধাবঞ্চিতদের সংখ্যা ও মাসিক ভাতার হার বৃদ্ধির প্রস্তাব ইতিবাচক হলেও এ উদ্যোগের সুফল পেতে হলে দুর্নীতি প্রতিরোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ বিশেষত ডিজিটালকরণের মাধ্যমে অর্থছাড়ের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
এ ছাড়া সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালার খসড়ায় জনবান্ধব প্রতিরক্ষা নীতিমালার কথা উল্লেখ থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে বরাবরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা খাতে বিশাল বরাদ্দের বিপরীতে অর্থ ব্যয় বিষয়ে স্পষ্ট করা হয়নি, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জন্য উন্মুক্ত হওয়া প্রয়োজন ও প্রত্যাশিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ইফতেখারুজ্জামান।
এ ছাড়া বাজেট বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থবছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমভাবে অর্থছাড়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে টিআইবি।