নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপের কথা অর্থমন্ত্রী স্বীকার করলেও স্বস্তি দেওয়ার কোনো পথ দেখাননি।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘অল্প লইয়া থাকি, তাই মোর যাহা যায় তাহা যায়।/ কণাটুকু যদি হারায় তা লয়ে প্রাণ করে হায় হায়।’ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষের দশা আসলে এ রকমই। দুই বছরের করোনার প্রাদুর্ভাবে পর যখন উঠে দাঁড়ানোর পালা, তখনই বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে নতুন সংকট।
অতিমারির পর এখন উদ্বেগ অতি মূল্যস্ফীতি। নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতির চাপের কথা স্বীকার করেছেন ঠিকই। কমানোর কথাও বলেছেন। কিন্তু স্বস্তি দেওয়ার মতো কোনো পথ দেখাননি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর নিজের ছাতার নিচে সবাইকে সমানভাবে আশ্রয় দেননি, বরং ছাতাটা তুলে দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের হাতেই। নানাভাবে তাঁদের কর ছাড় দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় শিল্পকে সংরক্ষণের যে নীতি তিনি নিয়েছিলেন, তা আরও জোরদার করেছেন। আবারও প্রণোদনার কথা বলেছেন। অর্থমন্ত্রীর আশা অনেকটা এ রকম—এই পথে বিনিয়োগ বাড়বে, তাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, মানুষ কাজ পাবে, আয় বাড়বে।
এতেই স্বস্তি ফিরবে মানুষের জীবনে। অনেকটা সেই পুরোনো আমলের বাতিল হওয়া উপচে পড়া তত্ত্বের মতো। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেট অনেক বেশি ব্যবসায়ীবান্ধব হলেও সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার বা জনবান্ধব ততটা হতে পারেনি।
বিশ্ব পরিস্থিতি অবশ্য এখন রবীন্দ্রনাথের দুঃসময় কবিতাটার মতোই, ‘মহা আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে, দিক-দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা’। আর এই মহাসংকটের স্বীকৃতি অর্থমন্ত্রী বাজেটে ভালোভাবেই দিয়েছেন। ‘বৈশ্বিক সংকট ও বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ’ অধ্যায়ে একে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে’ বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এর ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে, কমেছে প্রবাসী আয়, ঘটেছে মূল্যস্ফীতি, সরকারের ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার ওপর সৃষ্টি হয়েছে স্মরণকালের চাপ। সংকট থেকে উত্তরণে কয়েকটি কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে সব সংশয় এর বাস্তবায়ন নিয়েই।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় এ নিয়ে বলেছেন যে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যন্ত কৌশলী হতে হবে, কেননা কোনো একটি সমস্যা সঠিকভাবে সমাধান করা না গেলে তা সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে পারে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মূল কৌশল হবে বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বৃদ্ধি করা। সে লক্ষ্যে আমদানিনির্ভর ও কম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যয় বন্ধ রাখা অথবা হ্রাস করা হবে।
নিম্ন অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়নের গতি হ্রাস করা হবে এবং একই সময়ে উচ্চ ও মধ্যম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা হবে। জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের বিক্রয়মূল্য পর্যায়ক্রমে ও স্বল্প আকারে সমন্বয় করা হবে। রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে কর সংগ্রহে অটোমেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। মূল্য সংযোজন কর ও আয়করের নেট বৃদ্ধি করা হবে। বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে এবং আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের বিষয়টি সতর্ক পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার প্রতিযোগিতামূলক রাখা হবে।’
বর্তমান বিশ্ব সংকট সরবরাহ থেকে তৈরি। আর মূল্যস্ফীতি বেড়েছে সরবরাহ সংকট ও ব্যয়ের কারণে। সুতরাং চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সংকটের উত্তরণ কীভাবে হবে, তার ব্যাখ্যা অর্থমন্ত্রী দেননি। অন্যদিকে চাহিদা কমানো হলে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন, তার অর্জন নিয়েও সংশয় তৈরি হবে। কেননা দেশের জিডিপির ভিত্তিই তো খরচ আর ভোগ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বছর বাজেট দেওয়ার দিন টুইট করে লিখেছিলেন, ‘ডোন্ট টেল মি হোয়াট ইয়োর ভ্যালু, শো মি ইয়োর বাজেট অ্যান্ড আই উইল টেল ইউ হোয়াট ইউ ভ্যালু’। অর্থাৎ ‘আপনি কতটা মূল্যবান, তা মুখে বলার দরকার নেই। আপনার বাজেটটা দেখান—আমিই বলে দেব আদতে আপনি কতটা মূল্যবান।’ এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, বাজেট দিলেই হবে না, অর্থ আসলে কোথায় খরচ করা হচ্ছে, কী কাজে লাগছে, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অর্থমন্ত্রীর সংকট এখানেই।
বেতন-ভাতা, মঞ্জুরি ও সাহায্য, ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধেই চলে যায় রাজস্ব ব্যয়ের প্রায় সবটা। আর এবার তো ভর্তুকি নিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে অর্থমন্ত্রীকে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৫৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারে ভর্তুকি ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ থাকছে ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। আর নতুন অর্থবছরে তা আরও বেড়ে হবে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান যে প্রবণতা, এ খাতে ব্যয় আরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এটিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ বলেও মানছেন অর্থমন্ত্রী।
ব্যয়ের চাপে আবারও বিশাল একটি বাজেট দিতে হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয়ই ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা, বাকি ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা হচ্ছে উন্নয়ন ব্যয়। অর্থমন্ত্রীর বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি হচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর বড় অংশই আসবে অভ্যন্তরীণ থেকে। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকেই নেওয়া হবে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ঋণ নেওয়ার কথা ছিল ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। ব্যাংকব্যবস্থা থেকে এত অর্থ সরকার নিলে বেসরকারি খাতের ভাগে কতটা পড়বে, সেটিও এখন বড় প্রশ্ন।
নতুন অর্থবছরে বাংলাদেশকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে ১৭ হাজার কোটি টাকা। আর সব মিলিয়ে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারকে অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া মোট ব্যয়ে বেতন-ভাতা খাতের অংশ ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ, ভর্তুকি ও প্রণোদনার অংশ ১৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং সাহায্য মঞ্জুরির অংশ ১৬ দশমিক ১ শতাংশ।
এত সব খরচ মিটিয়ে অর্থমন্ত্রীর হাতে থাকে সামান্যই অর্থ। কেননা ব্যয় যত বাড়ছে, তত বাড়ছে না আয়। অর্থমন্ত্রী অবশ্য বাজেটে আগের তুলনায় রাজস্ব আয় বৃদ্ধির একটি কৃতিত্ব নিয়েছেন। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সংশোধিত বাজেটে এক টাকাও আয় কমানো হয়নি। অর্থাৎ পুরোটাই আদায় হবে।
আবার তিনি নিজেই হিসাব দিয়েছেন যে গত মার্চ পর্যন্ত সময়ে আদায় হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ শেষ তিন মাসে আদায় করতে হবে আরও ১ লাখ ১৮ কোটি ৩৬১ লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত কতটা আদায় সম্ভব হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। অর্থমন্ত্রী এর ওপর ভিত্তি করেই নতুন অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিশাল এক রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েই বাজেট তৈরি করেছেন। সুতরাং সাধারণ মানুষের ওপর বাড়বে করের চাপ।
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বহু বছর আগে বলে গিয়েছিলেন, ‘মানুষের জীবনে কেবল দুটি জিনিসই সুনির্দিষ্ট। একটি হচ্ছে মৃত্যু, অন্যটি কর।’ এ কথাকেই অনেকে রসিকতা করে বলেন, মৃত্যু তো আসলে একবারই ঘটে, কিন্তু কর আসে প্রতিবছর। যেমনটি এবারও এসেছে।
অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেট বক্তৃতাও বরাবরের মতো বিশাল। এতে ৩৪৩টি অধ্যায় রয়েছে আর পৃষ্ঠাসংখ্যা ১৭২। এর ১১৪টি অধ্যায়েই অর্থমন্ত্রী রাজস্ব কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়েছেন। অতীতে রাজস্ব কার্যক্রম নিয়ে কোনো অর্থমন্ত্রীকে এতটা পৃষ্ঠা খরচ করতে হয়নি। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের কথা মেনে অর্থমন্ত্রী হয়তো কর দেওয়াকে মানুষের জীবনে সুনির্দিষ্ট করেই ছাড়বেন। অর্থমন্ত্রী খানিকটা হতাশা নিয়েই বলেছেন, দেশে মধ্যবিত্ত বা তদূর্ধ্ব শ্রেণির জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি হলেও অধিকাংশই আয়কর দেন না। অর্থমন্ত্রী বাজেটে আয়করের ওপরই বেশি জোর দিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর ক্ষেত্রে কর অব্যাহতিকে অন্যতম বাধা বলে উল্লেখ করেছেন। ফলে বাজেটে বেশ কিছু ক্ষেত্রে কর অব্যাহতির মাত্রা কমিয়েছেন। তবে করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতোই তিন লাখ টাকা রেখেছেন। ব্যবসায়ী মহলের দাবি মেনে করপোরেট করহার শর্ত সাপেক্ষে আড়াই শতাংশ কমিয়েছেন। অর্থাৎ করপোরেট করসুবিধা পেতে হলে সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকব্যবস্থায় করতে হবে। যাঁরা কর ফাঁকির জন্য ব্যাংক লেনদেন এড়িয়ে চলেন, তাঁরা এই প্রস্তাব পছন্দ করবেন না।
আবার অনেক ধরনের সরকারি সেবা পেতে বা বড় কেনাকাটায় টিআইএন দাখিলই যথেষ্ট ছিল। অর্থমন্ত্রী এসব টিআইএনধারীর জীবনও খানিকটা কঠিন করেছেন। নতুন বাজেটের প্রস্তাব অনুযায়ী, এখন ৩৮ ধরনের সেবা পেতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণের জন্য আবেদন, পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ, কোনো কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হওয়া, ব্যবসায়িক সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ, সন্তান বা পোষ্যের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ালেখা করা, অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া ইত্যাদি।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারে কম্পিউটারের ওপর সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সেই ধারার পরিবর্তন আনলেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী। ল্যাপটপ আমদানিতে কর বসিয়েছেন তিনি। ধনী ব্যবসায়ীরা দেশে স্বর্ণ ব্যবসায় নেমেছেন।
অর্থমন্ত্রী তাঁদের জন্য স্বর্ণ আমদানিতে অগ্রিম কর তুলে নিয়েছেন। আর যাঁরা বিদেশে সম্পদ পাচার করেছেন, অন্য দেশে বাড়ি–গাড়ি করেছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়েছেন। পাচার করা অর্থ দেশে আনলে বা ঘোষণা দিয়ে কর পরিশোধ করলে বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। নির্বাচনের আগের বছরে কাদের জন্য এই সুযোগ, সেই প্রশ্নও উঠেছে। অর্থমন্ত্রী ভ্যাটখেলাপিদের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের মতো পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করা এবং ঋণখেলাপিদের কর দেওয়ার ব্যবস্থা করেও প্রশংসা পাচ্ছেন।
সব মিলিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়েই তিনি কর প্রস্তাবগুলো তৈরি করেছেন। যেমন বৈশ্বিক অতিমারিতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়, রপ্তানিমুখী শিল্প বহুমুখীকরণ, তার পশ্চাৎ শিল্পে প্রণোদনা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, ইলেকট্রনিকস, আইসিটি খাত ও ভারী শিল্পের বিকাশ, ব্যবসা সহজ করা, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং স্থানীয় শিল্পের বিকাশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। এর পরপরই জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করতে দাঁড়ান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি জানান, বাজেটে বিস্তারিত তথ্যাদি টেবিলে উপস্থাপিত রয়েছে, তিনি বাজেট বক্তৃতাটি অডিও ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করবেন। পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অডিও ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনায় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর জন্য নির্ধারিত গ্যালারিতে বসে বাজেট উপস্থাপনা দেখেন। এর আগে দুপুরে সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বিশেষ সভায় বাজেট অনুমোদন করা হয়। পরে ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বরাবরের মতোই এবারও বড় চ্যালেঞ্জ বাজেটের বাস্তবায়ন। বৈশ্বিক সংকটের কারণে এই চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। কেননা মানুষ কেবল স্বস্তি চায়; আশা, কমবে জীবনযাত্রার ব্যয়। অর্থমন্ত্রী অবশ্য সবকিছুর জন্য ভরসা রেখেছেন সাধারণ মানুষের ওপরই। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি এবং দৃঢ় ও সাহসী নেতৃত্ব।’
এ সময় রবীন্দ্রনাথ থাকলে হয়তো বলতেন, ‘সঙ্কটের কল্পনাতে হোয়ো না ম্রিয়মাণ।/ মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়।’ আর নিজেকে জয় করতে না পারলে অবশ্য ভবিতব্যের ওপরই ছেড়ে দিতে হবে সবকিছু।
সাধারণ মানুষকে তাহলে গালিবের সেই গজলের মতো করেই ভাবতে হবে, ‘রাত দিন গর্দিশ মেঁ হ্যায় সাত আসমা/ হো রহেগা কুছ না কুছ ঘাবড়ায়ে কেয়া (রাত–দিন আবর্তনে আছে সাত আসমান/ কিছু না কিছু তো হবেই, ঘাবড়ে কী লাভ)। অর্থাৎ খোদ সৃষ্টিজগৎই নিজে ঘুরপাক খেয়ে মরছে, এর মধ্যে নিজের এই ভালো-মন্দে আর কত ঘাবড়াবেন।