অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সরকারির তুলনায় বেসরকারি ব্যাংকের আমানতের সুদের হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেশি হবে। সরকারির হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ আর বেসরকারি ব্যাংকের ৬ শতাংশ। সমান হয়ে গেলে সব আমানত সরকারি ব্যাংকে চলে যেতে পারে।
অর্থমন্ত্রী অবশ্য এও বলেন, তিনি অনুভব করেন যে রাতারাতি বা তিন-ছয় মাসের মধ্যে এ রকম সিদ্ধান্ত কার্যকর করা কঠিন। কিন্তু উপায় নেই। এটা না হলে এ শিল্পায়ন হবে না।
সচিবালয়ে আজ বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের সুদের হার ৯ ও ৬ শতাংশ করার ব্যাপারে সরকার এবার কঠোর বলে জানিয়েছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, শুরুতে বিভিন্ন খাতে সুদের হার পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার কথা ভাবা হয়েছিল। পরে দেখা গেল, শুধু শিল্প খাতে ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করলে অনেক শিল্প বাদ পড়বে। এগুলো দূর করতে প্রধানমন্ত্রী বললেন সফলতা পেতে চাইলে সব ঋণগ্রহীতাকে সুবিধা দিতে। প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, সব খাতেই এটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, স্বল্পমেয়াদি কিছু আমানতের মেয়াদ দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে—এই যুক্তির কথা তুলে ধরে ব্যাংকাররাও অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, সুদের হার ৯ ও ৬ শতাংশ বাস্তবায়নে তাঁরা একমত।
তবে এ জন্য কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে কি না, তা স্পষ্ট করে বলেননি অর্থমন্ত্রী। একবার বলেন, প্রজ্ঞাপন জারি না হলে ভুল বোঝাবুঝি হবে।’ আবার বলেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রজ্ঞাপন জারি না হলেও তারা (ব্যাংকাররা) তা বাস্তবায়ন করবে। তারাও তো সরকারের অংশ।’
আমানতের বিপরীতে কোনো ব্যাংক ৬ শতাংশের বেশি সুদ দিতে পারবে না জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় ব্যাংকে টাকা রাখলে যিনি টাকা রাখেন, তাঁকেই ব্যাংককে টাকা দিতে হয়। বাংলাদেশের মতো কয়েকটি দেশে ব্যাংকে টাকা রাখলে কিছু সুদ দেওয়া হয়। কিন্তু এটা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। এ কারণে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
২০১৮ সালের জুন থেকে বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) উদ্যোগে প্রথম ঋণ ও আমানতের সুদের হার ৯ ও ৬ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ও পরে এ বিষয়ে সরব হয়। কিন্তু দেড় বছরে হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে।
শিল্পঋণে সুদের হার আজ ১ জানুয়ারি থেকে ৯ শতাংশ চালু হওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গত ৩০ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী হঠাৎ বিএবির সঙ্গে বৈঠক করে তা তিন মাস পিছিয়ে দেন এবং জানিয়ে দেন, ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণের সুদই হবে ৯ শতাংশের মধ্যে।