পূর্বাচলে এখন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার নতুন ঠিকানা। ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি। বেশির ভাগ দর্শনার্থী আশপাশের গ্রামের।
রাজধানীর পূর্বাচল এখন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার নতুন ঠিকানা। মূল পূর্বাচল বললেও কিছুটা ভুল হবে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে পূর্বাচলের শেষ মাথায় কাঞ্চন সেতুর পাশে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে স্থায়ী ঠিকানায় গেছে বাণিজ্য মেলা। কিন্তু ক্রেতা-দর্শনার্থীর বড় অভাব। মেলার আগের স্থান আগারগাঁওয়ে শুক্র-শনিবার ছুটির দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়ে গমগম করত। কিন্তু পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার নতুন ঠিকানায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় নেই। বেচাকেনা কম, ঘোরাঘুরি বেশি।
এবারের মেলার সিংহভাগ দর্শনার্থী আশপাশের গ্রামের। ফলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাটি পরিণত হয়েছে অনেকটা স্থানীয় মেলায়। তাদের কাছে বাণিজ্য মেলায় কেনাকাটার চেয়ে এত বড় আধুনিক স্থাপনা দেখা, ছবি তোলার প্রতিই বেশি আগ্রহ।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে এ চিত্র পাওয়া গেছে। খাবার ও পোশাক-আকাশের দোকানেই ক্রেতারা ঘোরাঘুরি করছেন। আসবাব, ইলেকট্রনিক পণ্য, তৈজসপত্রের দোকানে ক্রেতা-দর্শনার্থী নেই বললেই চলে। এবার বাণিজ্য মেলায় চাকচিক্যময় স্টল কম। নেই কোনো প্যাভিলিয়ন।
বাণিজ্য মেলার পেছনের গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল প্রাণের স্টল। নানা ধরনের মোড়কজাত খাবার মেলে এখানে। কিন্তু ক্রেতার তেমন ভিড় নেই। প্রাণের বিক্রয়কর্মী আশিক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম সপ্তাহে একদম বেচাকেনা ছিল না। শুক্র ও শনিবার কিছুটা হয়েছে। ঢাকায় বাণিজ্য মেলা হলে একই ক্রেতা একাধিকবার আসেন। এখানে তা হবে না।’
খাবারের দোকানগুলো পেরিয়ে যেতেই আসবাবের দোকান। বাণিজ্য মেলায় সাধারণত আসবাবের বেশ চাহিদা থাকে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। বেচাকেনা একদম কম। নাভানা ফার্নিচারের বিক্রয়কর্মী আমিনুল ইসলাম জানান, অন্য বছর বাণিজ্য মেলার প্রথম ৮-১০ দিনে সাধারণত কোটি টাকার মতো বিক্রি হয়। কিন্তু এবার বেচাকেনা ১৫ লাখ টাকাও হয়নি। তিনি জানান, ৯৫ শতাংশের বেশি দর্শনার্থী আশপাশের গ্রামের। কিন্তু আসবাবের ক্রেতাদের প্রায় শতভাগই রাজধানী ঢাকার। এ ছাড়া এবার প্যাভিলিয়ন স্টল না দেওয়ায় সোফা, খাট, ডাইনিং টেবিলসহ আসবাব মনের মতো করে সাজানো যাচ্ছে না।
অন্যবার ছুটির দিনগুলোতে তৈজসপত্রের দোকান দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের দোকানে ব্যাপক ভিড় থাকত। কিন্তু এবার দেখা গেল, ভিড় নেই। বাহারি তৈজসপত্রগুলো ক্রেতার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
তৈরি পোশাকের দোকান ড্রেস লাইন বিডিতে ঢুকতেই দেখা গেল, মোটামুটি ভিড়। তবে বিক্রয়কর্মী জানালেন ভিন্ন কথা, সবাই শুধু দেখেন, কেনেন না। দর্শনার্থীদের বেশির ভাগই স্থানীয় বাসিন্দা।
ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সিংহভাগই আশপাশের গ্রামের। তাঁরা সবাই যেন মেলায় ঘুরতে এসেছেন। সরেজমিনে গতকাল দেখা যায়, ভুলতার পোলাবো গ্রামের তিন তরুণ আবদুল আহাদ, মো. শামীম ও মো. আমান সেলফি তোলায় ব্যস্ত। জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন, তাঁরা সবাই আড়াই হাজার সফর আলী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। কয়েক বছর ধরে তাঁরা শুধু দেখেছেন, এখানে বড় ভবন হয়েছে। এখন সেটি দেখতে এসেছেন।
হাটাবো গ্রামের আবদুল মান্নান ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। তিনি বিভিন্ন স্টলের সামনে গিয়ে ছবি তুলছেন। তিনি জানান, নিজের এলাকায় এমন একটি স্থাপনা হওয়ায় তিনি গর্বিত। ছবি তুলে গ্রামবাসীকে দেখাবেন এখানে কী কী হয়। আবদুল মান্নানের মতো বাণিজ্য মেলায় ঘুরতে এসেছেন বাগদী গ্রামের সুরজ রোজারিও, আমদিয়ার রফিকুল ইসলাম। তাঁরা জানান, নিজের এলাকায় এমন স্থাপনা হওয়ায় খুশি। তবে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি।
তবে ক্রেতাও পাওয়া গেছে। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে বাণিজ্য মেলায় সপরিবার এসেছিলেন মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৭০০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে এখানে এসেছেন। প্রতিবারই মেলা থেকে তৈজসপত্র কেনেন।