ডয়চে ব্যাংকের শঙ্কা

বিশ্ব অর্থনীতি আবার মন্দার কবলে পড়তে পারে

২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে সারা বিশ্বই ছিল লকডাউনে। স্বাভাবিকভাবেই তখন প্রায় সব দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। মন্দার কবলে পড়ে বিশ্ব। সেখান থেকে বিশ্ব অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু আবারও মন্দার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।

সবচেয়ে বড় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি। উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সবচেয়ে অব্যর্থ অর্থ প্রয়োগ করেছে, সেটা হলো, নীতি সুদহার বৃদ্ধি। কিন্তু এতে অর্থনীতির প্রাণ অর্থাৎ চাহিদাই ব্যাহত হচ্ছে। গত সপ্তাহের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বৃদ্ধি করায় ওয়াল স্ট্রিট প্রায় খাদের কিনারে চলে গেছে।

গত মাসে ডয়চে ব্যাংকের অর্থনীতিবিদেরা সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘আমরা বড় ধরনের মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছি।’ ব্যাংক অব আমেরিকা অতটা নিরাশাবাদী না হলেও বলেছে, চলতি হাওয়ার মধ্যে একধরনের মন্দাভাব আছে। বড় বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর মধ্যে গোল্ডম্যান স্যাকস কিছুটা আশাবাদী হলেও পরিস্থিতি নিয়ে উৎফুল্ল নয়। তাদের ভাষ্য, শ্রমবাজারে সংকট থাকায় মন্দার যথেষ্ট ঝুঁকি আছে।

এদিকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সম্প্রতি নীতি সুদহার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বৃদ্ধি করেছে। এমনিতেই সে দেশে এখন গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এবার ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মনে করছে, নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারে।

অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনীতির চালিকা শক্তি চীনের অবস্থাও বিশেষ ভালো নয়। চীনের সঙ্গে অনেক দেশের অর্থনীতির প্রত্যক্ষ যোগ আছে। ফলে চীনের অর্থনীতির গতি হারানোর কারণে অনেক দেশের পরিস্থিতির অবনতি হবে।

সবচেয়ে বড় কথা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা আবারও বিঘ্নিত হয়েছে। বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা কেবলই মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, কিন্তু তখনই শুরু হলো এই যুদ্ধ। ফলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছুঁয়েছে। জ্বালানির দামও আকাশছোঁয়া। ফলে সবকিছুর দামই এখন বাড়তি।

আইএমএফের পূর্বাভাস, ২০২২ সালে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইতিহাস থেকে যদি শিক্ষা নিতে হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতির এই ধারা থেকে এটা স্পষ্ট, বিশ্ব অর্থনীতি আবারও সংকোচনের দিকে এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যতবার মন্দা হয়েছে, তার মধ্যে একবার ছাড়া প্রতিবারই মন্দার আগে মূল্যস্ফীতি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাম্প্রতিক পূর্বাভাসেও তেমন ইঙ্গিত মিলেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস আইএমএফ এর আগে দিয়েছিল, ইউক্রেন যুদ্ধের বিরূপ প্রভাবের বিষয়টি হিসাবে নিয়ে তা থেকে পুরো ১ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে দিয়েছে তারা।

আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে বলা হয়েছে, রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর পশ্চিমা অবরোধ আরও কঠোর করা হলে বৈশ্বিক উৎপাদনে আবারও বড় ধস নামবে।

সংস্থাটি বলেছে, জ্বালানি, খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। আইএমএফের হিসাবে, এ বছর ইউক্রেনের অর্থনীতি ৩৫ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। রাশিয়ার সংকোচন হবে সাড়ে ৮ শতাংশ। আর এই দুই দেশসহ ইউরোপের অর্থনীতির সার্বিক সংকোচন হবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ।

আইএমএফের পূর্বাভাস, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।