শত কোটিপতিদের গল্প

বিলিয়ন ডলারের যত বিচ্ছেদ

ঠিক এক সপ্তাহ আগে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস। আকস্মিক বিচ্ছেদের খবরে সারা দুনিয়ায় সরগরম পড়ে যায়। ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের এমন হুট করে সমাপ্তি কেন, সে আলোচনা ছাপিয়ে যেন নেট দুনিয়ার কাছে বড় হয়ে উঠল, কততে আপসরফা হচ্ছে এই বিবাহবিচ্ছেদের। তবে সে বিষয়ে কিছুই প্রকাশ করেননি বিল–মেলিন্ডা। বিশ্লেষকেরাই বোঝার চেষ্টা করছেন বিচ্ছেদের নিষ্পত্তি কত অর্থে হতে পারে।

মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস–এর তালিকায় টানা ১৮ বার শীর্ষ ধনীর আসনে ছিলেন বিল গেটস। একটা সময় মনে হতো, গেমসে কেউ কম ছাপিয়ে যেতে পারবেন। অবশ্য বিশ্বের পট সব সময় পাল্টায়। সেই ধারাবাহিকতায় শীর্ষ ধনীর আসনে আসে পরিবর্তন। ১ নম্বরে চলে আসেন এই কমার্স জায়ান্ট আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। দাম্পত্য জীবনের ক্ষেত্রে এই দুই ধনকুবেরের বেশ মিল পাওয়া যায়। ২০১৯ সালে ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটান জেফ বেজোস ও ম্যাকেনজি স্কট। এবার ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানলেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস।

এখন পর্যন্ত জেফ বেজোস ও ম্যাকেনজিরটাই বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদ। ওই বিচ্ছেদের আপসরফা হয়েছিল প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে। পুরোটাই ছিল আমাজনের শেয়ার। ২০১৯ সালে ভারতের যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল, এটি ঠিক তার অর্ধেক। বিচ্ছেদের সময় বেজোস ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী।

বিচ্ছেদের পর বিশ্বের অন্যতম নারী ধনীতে পরিণত হন ম্যাকেনজি স্কট। তবে বিশ্ব এর আগেও ধনকুবেরদের বিলিয়ন ডলারের বিচ্ছেদ দেখেছে। ১৯৯৯ সালে মার্কিন ধনকুবের অ্যালেক ওয়াইল্ডেনস্টেইন বিচ্ছেদ নেন স্ত্রী জোসিলিন ওয়াইল্ডেনস্টেইনের সঙ্গে। প্রায় ৩৮০ কোটি ডলার খোরপোশ দিতে হয়েছিল জোসিলিনকে। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হ্যারল্ড হ্যামের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের সুবাদে দেশটির শীর্ষ ১০০ নারী ধনীর তালিকায় উঠে যান সু অ্যান। এ রকম আরও অনেক বিলিয়ন ডলারের বিচ্ছেদ সারা ফেলেছিল বিশ্বে।

ধনকুবের অ্যালেক ওয়াইল্ডেনস্টেইনের বিচ্ছেদ

মার্কিন ধনকুবের অ্যালেক ওয়াইল্ডেনস্টেইন জন্মসূত্রে ফরাসি। ব্যবসায়ী অ্যালেক ওয়াইল্ডেনস্টেইন ছিলেন আর্টবিষয়ক ডিলার ও ঘৌড় দৌড়ের মালিক। বেজোসের আগে তাঁদের বিবাহের নিষ্পত্তিই ছিল সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিচ্ছেদ চুক্তি।

রুপার্ট মারডকের বিচ্ছেদ

অ্যালেক ওয়াইল্ডেনস্টেইনের সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি ব্যয়বহুল বিচ্ছেদ খবর জানতে পারে বিশ্ব। তা হলো রুপার্ট মারডকের বিচ্ছেদ। আমেরিকার এই মিডিয়া মোগল জন্মসূত্রে অস্ট্রেলীয়। স্ত্রী অ্যানা মারডকের সঙ্গে ১৯৯৯ সালেই বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁর। ৩১ বছরের বিবাহিত সম্পর্কের পর খোরপোশ দিতে হয়েছিল ২৬০ কোটি ডলার।

আদনান খাসোগির বিচ্ছেদ

১৯৭৯ সালের এ বিচ্ছেদ যেন এক গল্প। প্রথমেই আদনান খাসোগির পরিচয় তুলে ধরা যাক। সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্ম নেওয়া আদনান খাসোগি ছিলেন অস্ত্র ব্যবসায়ী। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালে বিশ্বের বড় বড় অস্ত্র কেনাবেচায় তিনি মধ্যস্থতা করে বিপুল অর্থের মালিক হন। তথাকথিত ধন সম্পদ নয়, তাঁর ছিল ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বিপুল সম্পদ। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকায় তাঁর ১২টি বড় বাগানবাড়ি ছিল।

ম্যানহাটনে ১৬টি অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে ছিল তাঁর দুই ফ্লোরের বাড়ি। তাঁর ছিল ২৮২ ফুট লম্বা বিলাসবহুল নৌযান ‘নাবিলা’। এই বাহন জেমস বন্ড ছবিতেও ব্যবহৃত হয়েছিল। পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প এটি কিনে নিয়েছিলেন। আদনান খাসোগি মিসর এবং আমেরিকায় পড়াশোনা করেন। ১৯৬১ সালে খাসোগি ২০ বছর বয়সী এক ইংরেজ মহিলাকে বিয়ে করেন। সান্ডা নামের সে নারী হয়ে ওঠেন সুরাইয়া। তাঁদের ঘরে ৪ ছেলে ও ১ মেয়ে জন্ম নিয়েছিল। মেয়ের নাম রাখা হয়েছিল নাবিলা। ১৯৭৪ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদ হলে আদালত খাসোগিকে সাড়ে ৮৭ কোটি ডলার দেওয়ার রায় দেন। মূল্যস্ফীতি যোগ করলে আজকের হিসেবে তা ৪৯০ কোটি ডলার। তাই একেও বিলিয়ন ডলারের বিচ্ছেদ বলাই যায়।

বার্নি একলেস্টোনের বিচ্ছেদ

আরেকটি বিলিয়ন ডলারের বিবাহবিচ্ছেদ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী বার্নি একলেস্টোনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী স্লাভিকার। তাঁদের বিচ্ছেদ হয় ২০০৯ সালে। বার্নি স্লাভিকাকে খোরপোশ দিয়েছিলেন প্রায় ১২০ কোটি ডলার।

আরও কিছু আলোচিত বিচ্ছেদ

আরও বেশ কিছু বিচ্ছেদ সাড়া ফেলেছিল বিশ্বে। যেমন মার্কিন ধনকুবের ব্যবসায়ী স্টিভ উইনের সঙ্গে স্ত্রী এলাইন উইনের বিচ্ছেদের খোরপোশও ছিল চমকে দেওয়ার মতো। বিচ্ছেদের জন্য স্ত্রী এলাইন উইনকে মোটামুটি ৭৪ কোটি ডলার খোরপোশ দিতে হয়েছিল স্টিভকে। যৌন হেনস্তার অভিযোগ ছিল স্টিভের বিরুদ্ধে।

ধনকুবের তেল ব্যবসায়ী হ্যারল্ড হ্যামের সঙ্গে অ্যান আর্নালের বিচ্ছেদ হয়েছিল ২০১২ সালে। এটি ছিল প্রায় সাড়ে ৯৭ কোটি ডলারের বিচ্ছেদ চুক্তি। মার্কিন শিল্পপতি ক্রেইগ ম্যাককাওয়ের সঙ্গে ২০১০ সালে বিচ্ছেদ হয় স্ত্রীর ওয়েন্ডি ম্যাককাওয়ের। ওয়েন্ডিকে ক্রেইগের দিতে হয়েছিল ৪৬ কোটি ডলার।

মার্কিন জনপ্রিয় অভিনেতা হ্যারিসন ফোর্ড ও মেলিসা ম্যাথিসনের বিবাহবিচ্ছেদও কম দামি ছিল না। অভিনেতা হ্যারিসন তাঁর চিত্রনাট্যকার ও সমাজকর্মী স্ত্রী মেলিসাকে ২০০৪ সালে ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার দিয়ে বিচ্ছেদ নিয়েছিলেন।

হলিউড বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী অ্যামি ইর্ভিংয়ের বিচ্ছেদ হয় ১৯৮৯ সালে। এ বিচ্ছেদের আপসরফা ছিল ১০ কোটি ডলার।

খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম ব্যয়বহুল বিচ্ছেদ হয় কিংবদন্তি গলফ খেলোয়াড় টাইগার উডসের। স্ত্রী এলিন নরডেগ্রেন সঙ্গে ৬ বছরের সম্পর্ক শেষ করেন তিনি। বিচ্ছেদ চুক্তি ছিল ৭১ কোটি ডলারের। মার্কিন বাস্কেট বল খেলোয়াড় মাইকেল জর্ডানের সঙ্গে স্ত্রী জুনাইতা ভ্যানয়ের বিচ্ছেদ হয় ২০০৬ সালে। জুনাইতাকে জর্ডান দেন ১৬ কোটি ডলার।