বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চাওয়া কোম্পানির পরিমাণ ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশে থাকা ৬৮ শতাংশ জাপানি কোম্পানি আগামী এক থেকে দুই বছরে এ দেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যবসা করার বিষয়ে আস্থা বাড়ার কথাও জানিয়েছে অধিকাংশ জাপানি কোম্পানি।
এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলে জাপানি কোম্পানিগুলোর ব্যবসার পরিস্থিতি নিয়ে জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন বা জেট্রোর করা এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জাপান ও বাংলাদেশের বিনিয়োগ অংশীদারদের নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে সমীক্ষার তথ্য প্রকাশ করা হয়। জেট্রো এবং জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেবিসিসিআই) যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে।
জাপানের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করা সংগঠন জেট্রো গত বছরের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই সমীক্ষাটি চালায়। বাংলাদেশে থাকা ১৯৫টি জাপানি কোম্পানির মধ্যে ৫০টি জরিপে অংশ নেয়। জেট্রোর এ দেশীয় প্রতিনিধি ইউজি আনন্দ জরিপের ফলাফল উপস্থাপনা করেন।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চাওয়া জাপানি কোম্পানির পরিমাণ ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ এ দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগে জাপানি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ বাড়ছে। তবে জাপানি ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ব্যবসা সম্প্রসারণের আগ্রহ দেখিয়েছেন ভারতে—৭০ শতাংশ। এ ছাড়া পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ানে থাকা অর্ধেক জাপানি কোম্পানি ব্যবসা বাড়ানোর চিন্তা করছে।
এদিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে মুনাফা পাওয়া জাপানি কোম্পানির পরিমাণও বেড়েছে। গত বছরে প্রায় ৪৩ শতাংশের বেশি কোম্পানি বাংলাদেশে মুনাফা বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল, যা চলতি বছর তা বেড়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ হতে পারে। তবে গত বছর জাপানি কোম্পানিগুলোর সবচেয়ে বেশি মুনাফা করার পূর্বাভাস ছিল দক্ষিণ কোরিয়ায়—প্রায় ৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৭৭ শতাংশ, চীন ৭২ শতাংশ, পাকিস্তানে ৭০ শতাংশ, ভারতে ৬১ শতাংশ ও ভিয়েতনামে ৫৪ শতাংশ মুনাফার কথা উঠে এসেছে জরিপে।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ জাপানি কোম্পানি অনুকূল পরিবেশ থাকায় বাংলাদেশে ব্যবসা করার বিষয়ে আস্থা (ডিফিউশন ইনডেক্স) বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে। আস্থার সূচকে কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান, অর্থাৎ চতুর্থ। গত বছর বাংলাদেশ ছিল নবম অবস্থানে। জাপানি ব্যবসায়ীরা এ দেশে উচ্চমূল্য সংযোজনকারী পণ্য, সাধারণ ব্যবহার্য পণ্য, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে আস্থা ও বিনিয়োগে উৎসাহ দেখালেও কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধার কথা জানিয়েছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে কর্মীদের মানের ঘাটতি, কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক বিভিন্ন জটিলতা।
সেমিনারে মেট্রোপলিটন চেম্বার অর কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে করপোরেট কর ও প্রশাসনিক হয়রানি কমাতে হবে। লাইসেন্স নবায়নের সময় অন্তত পাঁচ বছর করারও পরামর্শ দেন তিনি।
বিনিয়োগকারীদের আরও আগ্রহী করতে বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কোম্পানিগুলোর প্ল্যাটফর্ম শু-কু-কাইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মিউং-হো লি। তিনি বলেন, প্রায় সব বিদেশি বিনিয়োগকারীই প্রথমে দেশের ক্রেডিট রেটিং দেখে সিদ্ধান্ত নেয়। তাই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ, জেবিসিসিআই সভাপতি আসিফ এ চৌধুরী, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক শাহ মোহাম্মদ মাহবুব, বেপজার নির্বাহী পরিচালক মো. খোরশেদ আলম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন জেবিসিসিআই মহাসচিব তারেক রাফি ভূঁইয়া।