বিক্রি বাড়লেও মুনাফা বাড়েনি

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যবসা–বাণিজ্য। চলতি বছর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি যেমন হয়েছে, তেমনি কাঁচমালের মূল্যবৃদ্ধি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে। আবার নতুন করে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে অমিক্রন। বছরটি কেমন গেল, তা নিয়ে শিল্প ও ব্যবসা–বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছয়জনের অভিমত ছাপা হলো আজ। কথা বলেছেন গোলাম মুর্শেদ

গোলাম মুর্শেদ
গোলাম মুর্শেদ

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে চলতি বছর ব্যবসা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের চেয়ে ব্যবসা ভালো হয়েছে। বিক্রিও বেড়েছে। তবে মহামারির কারণে আমরা অন্যভাবে ভুগছি। কাঁচামাল আমদানিতে জাহাজভাড়া আগের চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে। করোনার আগে ৪০ ফুটের একটি কনটেইনারের ভাড়া ছিল ৪-৫ হাজার মার্কিন ডলার। এখন সেটি বেড়ে ১৫-১৬ হাজার ডলার হয়ে গেছে।

তা ছাড়া কাঁচামালের দামও বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে আমাদের কিছুই করার নেই। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার সংকটও আছে। এর কারণে আমাদের কাঁচামাল বাবদ খরচ বেড়েছে ১৪-১৫ শতাংশ। সে তুলনায় আমরা পণ্যের দাম বাড়াতে পারিনি। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেই সেটি আমরা পারিনি। কারণ, পণ্যের দাম বাড়ালে তা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেত। সে জন্য বিক্রি বাড়লেও আমাদের মুনাফা তেমন একটা বাড়েনি; বরং মুনাফা কমে গেছে। মুনাফা কমে যাওয়ার কারণে একধরনের রক্তক্ষরণের মধ্যে রয়েছে আমাদের প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে ভালো আছি বলা যাবে না। তবে ভালো থাকার চেষ্টা রয়েছে।

চলতি বছর শহরের তুলনায় গ্রাম ও শহরতলিতে আমাদের পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। দেশের রেফ্রিজারেটরের বাজারের প্রায় ৭৫ শতাংশ ওয়ালটনের দখলে। চলতি বছর সেটি আরও বেড়েছে। বাকি পণ্যগুলোও ভালো বিক্রি হচ্ছে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র আগে বিলাসবহুল পণ্য হলেও, এখন অনেকেই পণ্যটি কিনছেন। আগে গ্রামগঞ্জের লোকজন ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার না করলেও, এখন করছেন। লিফটের বিক্রিও বেড়েছে। চলতি বছর এই পণ্যে ক্রেতাদের আস্থার জায়গা শক্তিশালী হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যবসা ভালো। কিন্তু কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় মূলধনের ওপর যেন চাপ না পড়ে, সে জন্য বিশেষ কোনো পণ্য বাজারে ছাড়া হয়নি। তবে ওয়ালটনের নিয়মিত পণ্যের ইনোভেশন ও ডেভেলপমেন্ট চলমান।

বর্তমানে অমিক্রন নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। তবে পাশাপাশি সম্ভাবনাও দেখছি। কারণ, দিন দিন ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। প্রযুক্তিপণ্যের দিকে মানুষের নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা ও কাঁচামালের সরবরাহব্যবস্থা ছাড়া অন্য কোনো চ্যালেঞ্জ আপাতত সামনে নেই।

ব্যবসার বর্তমান গতি আগামী বছর ধরে রাখতে হলে সরকারের নীতিসহায়তা হুটহাট পরিবর্তন করা যাবে না। কারণ, টানা দুটি বছর আমরা সেই অর্থে মুনাফা করতে পারিনি। মুনাফা কমিয়ে ব্যবসা করাটা তো আর ব্যবসা না। তবে প্রযুক্তিপণ্যের ওপর সরকারের সুনজর আছে। আশা করছি আগামী বছরও সেটি অব্যাহত থাকবে।