একেকটি চামড়া কিনেছিলেন ৩০০-৪০০ টাকা করে। কিন্তু আড়তে এসে প্রতিটি চামড়া ৫০, এমনকি ১০ টাকায়ও বিক্রি করতে পারেননি মৌসুমি কাঁচা চামড়া সংগ্রহকারীরা। চামড়া নিতে আড়তদারদের অনেক অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের মন গলেনি। শেষ পর্যন্ত রাগে-দুঃখে ও হতাশায় সড়কের ওপর চামড়া ফেলে বাড়ি ফিরে যান মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম নগরের আতুরার ডিপোর চামড়ার আড়ত এলাকায় আজ মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ফেলে যাওয়া চামড়া পরিষ্কারে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়ও সব চামড়া সড়ক থেকে সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী ও সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ফেলে যাওয়া চামড়ার সংখ্যা এক লাখ হবে। সড়কের ওপর চামড়া ফেলে যাওয়ার ঘটনা আগে কখনো দেখা যায়নি।
মোরশেদুল আলম চৌধুরী আরও বলেন, হাটহাজারী-অক্সিজেন সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশে কাঁচা চামড়া পড়ে ছিল। প্রতিবছর তাঁরা চামড়ার উচ্ছিষ্ট অংশ পরিষ্কার করেন। এবার ব্যতিক্রম হয়েছে। এখন ফেলে যাওয়া চামড়াও পরিষ্কার করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে চামড়া পরিষ্কারের কাজ শুরু হলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়ও শেষ হয়নি। এর মধ্যে বহদ্দারহাট মোড়েও চামড়া পড়ে থাকার কথা জানা গেছে। তাও পরিষ্কার করতে হবে।
সিটি করপোরেশনের পশ্চিম ষোলোশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলী প্রথম আলোকে বলেন, আতুরার ডিপো এলাকায় তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। কিন্তু কখনো এই পরিস্থিতি দেখেননি। কাঁচা চামড়া সংগ্রহকারী কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, ন্যূনতম দর দিয়েও চামড়া বিক্রি করতে না পেরে তা রাস্তায় ফেলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। রাস্তায় পড়ে থাকার কারণে এসব চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দুর্গন্ধ ছড়ানোর আগেই সেগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বিবিরহাট থেকে ১০০টি চামড়া নিয়ে এসেছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। এসব চামড়ার প্রতিটি ৩০০ টাকা করে সংগ্রহ করেছেন তিনি। গ্রাম থেকে আড়তে আনতে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। কিন্তু আড়তদারদের কেউ চামড়াগুলো নিচ্ছিলেন না। শেষে ১০ টাকা দরে কিনে নেওয়ার আকুতি জানান তিনি। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তা বিক্রি করতে পারেননি। পরে তিনি রাস্তায় ফেলে গ্রামে চলে যান।
রাত পৌনে আটটার দিকে মুঠোফোনে মোহাম্মদ ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চামড়াগুলো নেওয়ার জন্য ২০ জন আড়তদারকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তাঁরা চামড়া নেননি। একেবারে নিরুপায় হয়ে চামড়াগুলো রাস্তায় ফেলে গ্রামে চলে এসেছি। ফেলে আসতে খুব কষ্ট হয়েছে। কিন্তু কী করব? সেগুলো আনার গাড়িভাড়াও নেই। এবার একেবারে ভেসে গেছি।’
সারা দেশের মতো চট্টগ্রাম নগরেও চামড়ার অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এ জন্য আড়তদারদের ‘সিন্ডিকেট’-কে দায়ী করেছেন। তবে চট্টগ্রামের আড়তদারদের অভিযোগ, ঢাকার ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁদের অনেক টাকা বকেয়া। ঈদের এই মৌসুমেও ব্যবসায়ীরা পাওনা টাকা দেননি। তাই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনতে পারছেন না তাঁরা। আর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আড়তে চামড়া নিয়ে আসতে দেরি করেছেন। এ কারণে চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হওয়ায় তা কিনতে আগ্রহ নেই তাঁদের।
আড়তদারেরা এবার চট্টগ্রামে সাড়ে ৫ লাখ পিস গরুর এবং ৮০ হাজার পিস ছাগলের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। তাঁদের ধারণা, চট্টগ্রামে এবার ৪ লাখ গরু, ১ লাখ ২০ হাজার ছাগল, ১৫ হাজারের মতো মহিষ এবং ১৫ হাজারের মতো ভেড়া কোরবানি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান আড়তদারেরা। বাকি চামড়া কয়েক দিনের মধ্যে আতুরার ডিপোর আড়তে চলে আসবে বলে তাঁদের ধারণা।
ঢাকার বাইরে এবার সরকার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। বড় গরুর প্রতিটি চামড়া সাধারণত ১৮ থেকে ২০ বর্গফুট হয়। ছোট গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৫ বর্গফুট পর্যন্ত হয়।
আরও পড়ুন: