বাণিজ্য মেলায় ভিড় বাড়ছে ছুটির দিনে

বাণিজ্য মেলার একটি স্টলে পণ্য দেখছেন আগ্রহী ক্রেতারা। সাম্প্রতিক তোলা ছবি
প্রথম আলো

শুরুতে ক্রেতার খরা থাকলেও ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে এখন মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় দেখা যাচ্ছে। তাতেই মাসব্যাপী মেলার মাঝামাঝি এসে হাসি ফিরতে শুরু করেছে বিক্রেতাদের মুখে।

এবারের বাণিজ্য মেলায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ১৬২টি স্টল রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠান প্রথম সপ্তাহে আশানুরূপ বিক্রি করতে পারেনি। দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষে সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বিক্রি নিয়ে আগের চেয়ে কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট। গতকাল শনিবার মেলা ঘুরে দেখা গেছে, এখন সব স্টলের কর্মীরা কম-বেশি ক্রেতা সামলাতে ব্যস্ত।

এবারের মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি)। মূল শহর থেকে বেশ দূরে হওয়ায় মেলা শুরুর প্রথম সপ্তাহে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল খুবই কম। সেই কারণে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কপালে। তবে মাঝামাঝি সময়ে এসে ক্রেতা উপস্থিতিতে এখন কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছেন তাঁরা।

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলার প্রথম চার দিনে মোট উপস্থিতি ছিল মাত্র ৩০ হাজার। সেখানে গত শুক্রবার মেলায় এসেছেন প্রায় ৮০ হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থী। আর বৃহস্পতিবার সে সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ হাজার। গতকাল মেলা ঘুরে দেখা গেছে, দেশীয় পোশাক, হস্তশিল্পজাত পণ্য, সাজসজ্জার সামগ্রী, পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক, মেলামিন, আসবাব ও কার্পেটসহ গৃহসজ্জার বিভিন্ন সরঞ্জাম, ব্যাগ-জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ইলেকট্রনিক পণ্য, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, তৈজস, হারবাল ও ইমিটেশন জুয়েলারি পণ্যের স্টলের সামনে ক্রেতাদের বেশি ভিড়।

মেলার প্রথম চার দিনে মোট উপস্থিতি ছিল মাত্র ৩০ হাজার। সেখানে গত শুক্রবার মেলায় এসেছেন প্রায় ৮০ হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থী।

মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে দেশীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পণ্য। এবারের মেলায় প্রায় ১০০ জন দেশীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তাঁদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছেন। এঁদের মধ্যে ইউএনডিপির সহায়তায় ‘আনন্দমেলা’ স্টলে ৬০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, জয়িতা ফাউন্ডেশনের স্টলে ২৫ জন, এসএমই ফাউন্ডেশনের স্টলে ৬ জন এবং বিসিক উদ্যোক্তা ফোরামের স্টলে ৫ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মেলায় অংশ নিয়েছেন।
আনন্দমেলা স্টলের মাধ্যমে মেলায় অংশ নেওয়া সারা বুটিক হাউসের স্বত্বাধিকারী এলিনা জাহান বলেন, ‘শুরুতে কম ক্রেতা থাকলেও এখন খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। বিক্রিও ভালো।’

ক্রেতারা দ্বিতীয়বার আসবেন না ভেবে একবারেই পণ্য কিনে বাড়ি ফিরছেন। আমাদের স্টলে এখন দৈনিক গড়ে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে
রেজবিন হাফিজ, সমন্বয়ক, এসএমই ফাউন্ডেশনের স্টল

এসএমই ফাউন্ডেশনের স্টলের সমন্বয়ক রেজবিন হাফিজ বলেন, ‘পূর্বাচলে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এবারের মেলায় এখন এসে এতটা সাড়া পাব, তা শুরুতে ভাবিনি। মেলা দূরে হওয়ায় অসুবিধা যেমন আছে, কিছু সুবিধাও পাচ্ছি। ক্রেতারা দ্বিতীয়বার আসবেন না ভেবে একবারেই পণ্য কিনে বাড়ি ফিরছেন। আমাদের স্টলে এখন দৈনিক গড়ে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে।’

মিরপুর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় এসেছিলেন রেজওয়ানা পারভিন। তিনি বলেন, একটু দূরে হওয়ায় আসতে অসুবিধা হয়েছে। তবে আসার পর পণ্য দেখে ও কম দামে কিনতে পেরে ভালো লাগছে। সন্তুষ্ট আয়োজকেরাও। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘মেলা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। এখন আমাদের লক্ষ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুন্দরভাবে মেলাটা শেষ করা।’