বাজেটে বাড়তি গুরুত্ব পেল না স্বাস্থ্যখাত

করোনা মহামারি অনেক নতুন শিক্ষা দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। মানুষ নতুন করে স্বাস্থ্যের গুরুত্বের কথা ভাবতে শুরু করেছে। কিন্তু জাতীয় বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের কাছে স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বেড়েছে, প্রস্তাবিত বাজেট দেখে তা মনে হওয়ার কারণ নেই। বাজেট প্রণয়নকারীরা এবারও জাতীয় বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ রেখেছেন স্বাস্থ্যের জন্য। এক দশক ধরে এমনই চলছে।

করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতাগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের বর্তমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও চিকিৎসা ব্যয়ের বিবেচনায় জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলে আসছেন, জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। কিন্তু তা হচ্ছে না।

গত অর্থবছরে স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এবার বরাদ্দ হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বেড়েছে ৪ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। তবে অনেকেই মনে করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বড় দুর্বলতা, তারা বরাদ্দ খরচ করতে পারে না। বছর শেষে এই মন্ত্রণালয় থেকে টাকা ফেরত যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোট জাতীয় বাজেট বেড়েছে ১৪ শতাংশ। সেখানে স্বাস্থ্যের বাজেট বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ স্বাস্থ্য খাতে যে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

গত কয়েকটি অর্থবছরে মোট বাজেটের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৬ শতাংশের নিচে থেকে যাচ্ছে। করোনা মহামারি কালে ২০২০–২০২১ ও ২০২১–২০২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

২০২০–২০২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল মোট জাতীয় বাজেটের ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২১–২০২২ অর্থবছরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আর আগের তিনটি অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৭–১৮, ২০১৮–১৯ ও ২০১৯–২০ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ২, ৪ দশমিক ৮ এবং ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি। তবে সরকার হঠাৎ করে বরাদ্দ বাড়াতে পারবে না। ধীরে ধীরে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গত সপ্তাহে রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ও উন্নয়ন সমন্নয় আয়োজিত প্রাক্‌–বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ২০২২–২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতের জন্য ৭ থেকে ৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করেছিলেন।