একটা কঠিন সময়ে একটা বাজেট দিতে হলো। যখন সারা বিশ্ব এক মহামারির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও এক মন্দ সময় পার করছে। বেকারত্ব বেড়েছে, দারিদ্র্য বেড়ে গেছে। এ দারিদ্র্য হার ২০ শতাংশে নেমে এসেছিল। এখন বলা হচ্ছে তা ৩৫ শতাংশে পৌঁছে গেছে। অনেক মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে খাদ্য প্যাকেট বা নগদ অনুদানের ওপরে। সেটা একটা দিক।
আরেকটি দিক হলো, কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ছে। যত পরীক্ষা হচ্ছে তত শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাজেটটা আসল। কঠিন সময়ে এমন বাজেট দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। সংগতভাবেই বাজেটকে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উত্তরণের বাজেট। এখানে অবশ্য একটা কাজ করেছে। মানুষকে বাঁচাতে হবে। রোগ থেকে মানুষকে বাঁচাতে হবে, সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু আমরা খুব সহায়তা করিনি। নিয়মকানুন মানার ক্ষেত্রে আমরা আন্তরিকতা দেখাইনি। সেখানে অসুবিধা হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলার সক্ষমতা কোনো দেশেরই ছিল না। বাংলাদেশ এখন সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আগে ১০০ পরীক্ষা হতো। এখন সেটা ১৫ থেকে ১৬ হাজার হচ্ছে।
সবাই বলেছিলেন, স্বাস্থ্য খাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হবে। আগে ৫২৯ কোটি দেওয়া হয়েছে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। আরও ৮০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে ডাক্তারদের জন্য। ওই ধারাবাহিকতায় আরও ১০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবিলায়। এখন এগুলো কাজে লাগাতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এটা চিরায়ত যেটা থাকে, বাজেটের ৫ শতাংশ আর জাতীয় আয়ের শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। এটা বাড়েনি। এটা বাড়ানো যেত। কারণ, সর্বজনীন স্বাস্থ্য তো এক বছরে হবে না। কিন্তু এর একটি ভিত্তি নির্মাণের প্রচেষ্টা থাকতে পারত। কমিউনিটি ক্লিনিককে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য পরিষেবা বাড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারত।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অনেক টাকা বাড়ানো হয়েছে। সেটা সঠিক আছে। কারণ অনেক মানুষকে বেশ কিছুদিন সহায়তা করতে হবে। এবার আসি কৃষিতে। ধান-চালের বাইরে অন্য খাত যেমন পোলট্রিতে বেশ অসুবিধা হয়ে গেছে। এখানে ২২ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে কৃষি খাদ্য ও মৎস্যে। পল্লি উন্নয়নে ৩৯ হাজার কোটি টাকা আছে। টাকা আছে কিন্তু ঠিকমতো ব্যয় তো করতে হবে।
এবার আসি আকারে। ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটির বাজেট। রাজস্ব আয় হবে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর থেকে আসবে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি। ৪৮ হাজার কোটি অন্য দিক থেকে। এনবিআরের এ বছর নির্ধারিত যে লক্ষ্য ছিল সেখানে ৫ থেকে ২০ শতাংশ কম হয়েছে। আগামী বছর সমস্যার উন্নতি খুব বেশি হবে বলে আমার মনে হয় না। সেখানে সমস্যা আছে।
উন্নয়ন বাজেটে আছে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি। সেটাও গত বছরের একটু বেশি। উন্নয়ন বাজেটে এটা লাগবে। ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটা জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ। সাধারণত আমরা বলে থাকি যে, ৫ শতাংশ হলে ঠিক আছে। এবারের পরিপ্রেক্ষিতে ঘাটতি বেশি হওয়া প্রয়োজন আছে। ৭ শতাংশ হলেও আমার আপত্তি থাকত না। অবশ্য এর অসুবিধা হলো, পরের বছর সুদের টাকা অনেক বাড়বে। কিন্তু এ বছর তো আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে।
মহামারি মোকাবিলার জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন এক লাখ কোটি টাকার ওপর। এর অনেক কিছুই এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বাজেটের যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেখানে কিছু মোটামুটি ঠিক আছে। একটু কমবেশি হতে পারত। এখন বিষয় হলো একে কাজে লাগাতে হবে। সময় ধরে, কার্যকর বাস্তবায়নটাই দরকার।
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, অর্থনীতিবিদ