বাজারদর তেতে উঠছে

টানা চার দিনের হরতাল শুরুর পর বাজারে তরিতরকারিসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ কমে গেছে। টানা হরতালের সুযোগ নিয়ে একদিকে ট্রাকমালিকেরা বাড়িয়ে দিয়েছেন ভাড়া। অন্যদিকে সারা দেশ থেকে আসতে পারছে না সবজি। ফলে বরাবরের মতোই সবজির দাম বেড়ে গেছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে হরতালে নিত্যপণ্যবোঝাই ট্রাক ছেড়ে দেওয়া হতো। বড়জোর কিছু ট্রাক ভাঙচুর হতো। এখন পণ্যবোঝাই ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে হরতাল চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য পাঠাতে এখন দ্বিধায় আছেন মোকাম ব্যবসায়ীরা। তাই আগামী তিন দিন বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ কম থাকবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
আবার ট্রাকমালিকেরাও বরাবরের মতো পণ্য পরিবহনে হাঁকছেন বেশি ভাড়া। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহনের ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এসব কারণে পুরো সপ্তাহেই বাজার চড়া থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গত শুক্রবার এক কেজি পেঁপে বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকায়। বিক্রেতা মজিবর রহমান গতকাল তা বিক্রি করেছেন ২০ টাকায়। একইভাবে ২০ টাকার বাঁধাকপি ও ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, ৫০ টাকার করলা ৬০ টাকায়, ৫০ টাকার সিম ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন।
আরেক সবজিবিক্রেতা শহীদুল বরবটি বিক্রি করেছেন ৮০ টাকায়। গত শুক্রবার এ সবজি তিনি বিক্রি করেছেন ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এর বাইরে ৩০ টাকার শসা ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, ১০০ টাকার টমেটো ১২০ টাকা, ১০০ টাকার গাজর ১২০ টাকায়, ৩০ টাকার মুলা ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। কাঁচামরিচের দর প্রতি কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে।
তিন-চার দিনে আগেও এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সেই মরিচের কেজি এখন ১২০ টাকা। আলুর দাম গত সপ্তাহেই বেড়েছে। এখনো সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ২০ থেকে ২২ টাকা।
পেঁয়াজের দর এখনো চড়া। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। যদিও এই পেঁয়াজ ১১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। দেশি রসুন ৭০ থেকে ৭৫ আর চীনা রসুন ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়ত থেকে বেশি দামে তাঁদের কাছে সবজি বিক্রি করা হচ্ছে। তাই তাঁরাও বাড়তি দামে সবজি বিক্রি করছেন।
কারওয়ান বাজারের একজন আড়তদার জানান, বিভিন্ন তরিতরকারির দাম কেজিপ্রতি তিন থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে আরেক আড়তদার বলেন, দাম বাড়েনি। হরতাল দেখে খুচরা বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দাম রাখছেন।
বাবুবাজারের কয়েকজন চাল ব্যবসায়ী জানান, টানা হরতালে বিভিন্ন স্থান থেকে চাল আসবে কি না, তা নিয়ে তাঁরা শঙ্কায় আছেন। কারণ, অনেক মিলমালিকই ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় চাল পাঠাতে চাচ্ছেন না। তাই দাম কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।
ভোজ্যতেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ নিত্যপণ্যের প্রায় সবকিছুরই পাইকারি বিকিকিনি হয় রাজধানীর মৌলভীবাজারে। মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা হরতালের কারণে মুদি দোকানিরা এখান থেকে একসঙ্গে বেশি করে পণ্য নিয়ে গেছেন। আবার মৌলভীবাজারের পাইকাররাও মিলমালিকদের কাছ থেকে চার দিনের পণ্য নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। এ ক্ষেত্রে সমস্যা করছে ট্রাকভাড়া। টানা হরতাল দেখে সব পথেই পণ্য পরিবহনের ভাড়া কয়েক হাজার টাকা করে বেড়ে গেছে।
ট্রাকভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করছেন ট্রাকমালিকেরাও। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকায়। কিন্তু হরতাল সামনে রেখে শনিবার ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা যেমন—রংপুর ও দিনাজপুর থেকে ঢাকায় পণ্য নিয়ে আসতে একটি ট্রাকমালিক ভাড়া নেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এখন তাঁরা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার নিচে ঢাকায় আসতেই চাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ হাজার ট্রাক চলাচল করে। হরতালে চলাচল করে হাতে গোনা কিছু ট্রাক। তিনি বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়ে আর কত দিন ট্রাক বের করবেন মালিকেরা। সে কারণে এখন হরতালে ট্রাকও কম চলে। ভাড়াও বেড়ে যায়।’