সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর অনিয়মের দায় গিয়ে পড়ল বেসিক ব্যাংকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে ব্যাংকটি গতকাল রোববার নিজস্ব বেতনকাঠামো বাতিল করেছে।
জানা গেছে, সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের বেতনকাঠামো ছিল আলাদা। এতে তারা অন্য ব্যাংকের চেয়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি বেতন ভাতা ভোগ করতেন। কিন্তু চেয়ারম্যান হিসেবে আবদুল হাই বাচ্চু ব্যাংকটিকে বিপর্যয়ে ফেলে দিয়ে গেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে খরচ কমাতে অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের বেতনকাঠামো অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটি। সে জন্য প্রশ্ন উঠছে, সাবেক চেয়ারম্যানের দায় কেন সব কর্মীরা নেবেন?
জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আলম আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নতুন যোগ দিয়েছি। আমাকেও ব্যাংক নিয়ে জবাবদিহি করতে হয়। তাই ব্যাংকের এ অবস্থার দায় সবার ওপরে পড়ছে।’
গত রোববার ব্যাংকটির মানবসম্পদ বিভাগ থেকে একটি চিঠি সব শাখার প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসিক ব্যাংক বিগত সাত বছর ক্রমাগত লোকসান দেওয়ায় বিদ্যমান অতিরিক্ত বেতন-ভাতা ব্যাংকের পক্ষে বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই ব্যাংকের বিদ্যমান বেতনকাঠামো ও অন্য সুবিধাদি বাতিল করা হলো। এই সিদ্ধান্ত রোববার থেকে কার্যকর বলে জানানো হয়।
এদিকে হঠাৎ বেতন কমে যাওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যাংকটির কর্মীরা। এ নিয়ে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে আজ সোমবার দুপুরে এমডির কক্ষের সামনে জড়ো হন কয়েকজন কর্মকর্তা। তবে তারা কোনো বিক্ষোভ প্রদর্শন করেননি।
জানা গেছে, বেসিক ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) পদে মূল বেতন স্কেল ছিল প্রায় ১ লাখ টাকা, যা অন্যান্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৬৬ হাজার টাকা। একইভাবে বেসিক ব্যাংকের ডিজিএমের মূল বেতন ৬৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সরকারি ব্যাংকে তা ৫৬ হাজার টাকা।
রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে একসময় বেসিক ব্যাংকই খুব ভালো অবস্থায় ছিল। কিন্তু আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান হওয়ার পরই ব্যাংকটি খারাপ করতে থাকে। তাঁর সময়েই ব্যাংকটিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি হয়। ওই সময়ে দেওয়া প্রায় সব ঋণই এখন খেলাপি। এ ছাড়া ব্যাংকটির অন্য অনেক ঋণও খারাপ হয়ে পড়েছে। ফলে গত জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১১৩ কোটি টাকা।