বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর

বরাদ্দের জমি খালি পড়ে আছে

বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এখন উৎপাদনে আসতে যাচ্ছে। যারা জমি ফেলে রেখেছে, তাদের দ্রুত কারখানা নির্মাণ করতে চিঠি দিয়েছে বেজা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে অনেক কারখানার নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর থেকে তোলা
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ তিন বছর আগে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছিল। মুন্সিগঞ্জের বাউশিয়া থেকে সরে এসে দেশের সবচেয়ে বড় এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি পোশাকপল্লি করার কথা সংগঠনটির। সেখানে বিজিএমইএর ৪৩টি সদস্য প্রতিষ্ঠান গত বছর সরকারের কাছ থেকে জমি ইজারা পেয়েছে। অথচ একটি প্রতিষ্ঠানও এখন পর্যন্ত কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করেনি।

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে সিকদার গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ ও গ্যাসমিন গ্রুপ মিলে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছিল তিন বছর আগে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) মডেলে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা। কিন্তু তিনটি গ্রুপই জমি ফেলে রেখেছে। আরেক শিল্পগোষ্ঠী অনন্ত গ্রুপ ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে আড়াই শ একর জমি বরাদ্দ পেয়েও কাজ শুরু করেনি।

জমি বরাদ্দ নিয়ে যারা কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেনি, তাদের চিঠি পাঠিয়েছি, যাতে তারা দ্রুত কাজ শুরু করে। যদি না করে তাহলে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
শেখ ইউসুফ হারুন নির্বাহী চেয়ারম্যান, বেজা

এভাবে দীর্ঘদিন ধরে যেসব কোম্পানি জমি খালি ফেলে রেখেছে, তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও অনেক উদ্যোক্তা জমি নিয়ে কারখানা করছেন না।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে জমি বরাদ্দ নিয়ে যারা এখনো কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করেনি, তাদের চিঠি পাঠিয়েছি, যাতে তারা দ্রুত কাজ শুরু করে। যদি না করে তাহলে আমরা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি রয়েছে বর্তমান সরকারের। এরই মধ্যে ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদনও হয়ে গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এটি ৩০ হাজারের বেশি একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে।

অনেক কোম্পানি এখনো নিষ্ক্রিয় থাকলেও একই সময়ে জমি বরাদ্দ পাওয়া অন্তত আটটি কোম্পানি এ বছর উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে ভারতীয় রং কোম্পানি এশিয়ান পেইন্টস; দেশীয় প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি; মডার্ন সিনটেক্স; বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল মিলস; আরমান হক ডেনিম; নিপ্পন ও ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রি; বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রি এবং ১৫০ কেভি পাওয়ার প্ল্যান্ট পাওয়ার জোন।

‘পোশাকপল্লি’ নিয়ে টানাপোড়েন

গত মাসে বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধিদল বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। তখন বিজিএমইএ নেতারা জানান, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পোশাক শ্রমিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে সেখানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ নিশ্চিত করতে হবে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে আমাদের জন্য যে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেখানে কারখানা নির্মাণের মতো পরিবেশ এখনো হয়নি। মূল রাস্তা থেকে জমি এখনো ৬ ফুট নিচে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি। বেজার সেখানে প্রচুর জমি আছে। তাই বেজা শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করে দিতে পারে। তারপর কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’

তবে বেজার কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে এশিয়ান পেইন্টস, বসুন্ধরাসহ আরও অনেক কোম্পানি কারখানা নির্মাণ করছে। শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা তারা নিজেরাই করেছে। বিজিএমইএর শ্রমিকদের আবাসন করে দিলে অন্যরাও চাইবে। তাই বিজিএমইএর দাবি অনুযায়ী পোশাকশ্রমিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার সুযোগ নেই।

কর্মকর্তারা আরও জানান, যারা কারখানা নির্মাণ করছে না, তারা নিজেদের জমি অন্যের কাছে বিক্রি করার পথ খুঁজছে। কারণ, তারা এক একর জমি কিনেছিল এক কোটি টাকায়, যা বেড়ে এখন পাঁচ কোটি টাকায় উঠেছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিজিএমইএর এক প্লট থেকে আরেক প্লটে যেতে অভ্যন্তরীণ রাস্তা হয়নি, এটা ঠিক। তবে বড় রাস্তার পাশে যাদের প্লট আছে, তারা তো কারখানার কাজ শুরু করতে পারে। কিন্তু তারা সেটা করছে না।’ বিজিএমইএর দাবি অনুযায়ী শ্রমিকদের জন্য আবাসন করার মতো জমি নেই বলে জানান শেখ ইউসুফ হারুন।

কারখানা নির্মাণের মতো পরিবেশ এখনো হয়নি। মূল রাস্তা থেকে জমি এখনো ৬ ফুট নিচে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি।
ফারুক হাসান সভাপতি, বিজিএমইএ

তিনটি শিল্প গ্রুপ

এদিকে তিনটি শিল্প গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত এসবিজি (সিকদার গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ ও গ্যাসমিন গ্রুপ) ৫০০ একর জমি নিলেও এখনো তারা কারখানার নির্মাণকাজ শুরু করেনি। দ্রুত কাজ শুরু করতে তাদেরও চিঠি দিয়েছে বেজা। জানা গেছে, ৫০০ একর জায়গার মধ্যে তিন কোম্পানির কে কোন অংশ নেবে, তা এখনো ঠিক হয়নি, মাস্টারপ্ল্যানও হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে বসুন্ধরা অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমন্বয়ক ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আমরা তিনটি গ্রুপ সমস্যা সমাধানে বসেছি। আশা করছি, শিগগিরই সুরাহা হবে। বাকি দুটি কোম্পানির কাছ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের জমি কেনার কথাও চলছে। যদি পুরো জায়গায় আমাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রাসায়নিক কারখানা করার পরিকল্পনা রয়েছে।