বিপিসির উদ্যোগ

বছরে ৫০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা

>
  • স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিপিসি
  • বিপিসি একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে
  • বিপিসি বছরে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা হারাবে

জ্বালানি তেল বিপণন কোম্পানির কাছ থেকে দ্রুত টাকা আদায় করতে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উদ্যোগটি ভালো, কিন্তু দরপত্র ছাড়া যে পদ্ধতিতে বিপিসি একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হলে বিপিসি বছরে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা হারাবে।

বিপিসি সূত্র জানায়, বিপণন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, এসএওসিএল এবং এলপিজির কাছে জ্বালানি সরবরাহ করে বিপিসি। কোম্পানিগুলো মাসের পর মাস বিপিসির হাজার কোটি টাকা আটকে রাখে। এ জন্য স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় বিপিসি।

বিভিন্ন বিপণন কোম্পানি থেকে টাকা দ্রুত আদায়ের জন্য বিপিসি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস (সিএনএস) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে যাচ্ছে। আগামী ২ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দিতে বিপিসি ২০ মার্চ চুক্তি সম্পাদনের জন্য আদেশ (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড বা এনওএ) জারি করেছে। বিপিসির সঙ্গে নামমাত্র খরচে ‘অটোমেশন’ চুক্তি করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে যে শর্তে চুক্তি হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বিপিসি সূত্র জানায়, দরপত্র আহ্বান না করে সিঙ্গেল সোর্সের ভিত্তিতে সিএনএসকে অটোমেশনের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ বছরে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা প্রত্যক্ষভাবে পাবে সিএনএস। কিন্তু বিভিন্ন বিপণন কোম্পানির কাছ থেকে আদায় করা টাকা ব্যাংকে সর্বোচ্চ আট কার্যদিবস পড়ে থাকবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এসএনডি (শর্ট নোটিশ ডিপোজিট বা স্বল্প মেয়াদের আমানত) হিসাবে বিপিসির টাকা জমা থাকবে। এই হিসাব নিয়ন্ত্রণ করবে জ্বালানি তেল বিপণন কোম্পানি এবং সিএনএস। ফলে বিপুল অঙ্কের টাকার সুদ থেকে বঞ্চিত হবে বিপিসি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে সারা দেশে বিপিসির প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি বাজারজাত হয়েছে। প্রতিবছর জ্বালানির চাহিদা ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। এতে এক দিনে গড়ে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা বিভিন্ন বিপণন কোম্পানির কাছে বিপিসির পাওনা থাকে। ফলে প্রতি আট দিনে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা এসঅ্যান্ডডির হিসাবে থাকলে সুদ থেকে বঞ্চিত হবে বিপিসি।

চুক্তির শর্তাবলিতে ‘আট কার্যদিবসের’ ফাঁদ থাকার কারণে বছরে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা ‘অপরচুনিটি কস্ট’ বাড়বে। তাতে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হলে বিপিসির আড়াই শ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। এ ছাড়া শত শত কোটি টাকার লেনদেনের ক্ষেত্রে সরকারের ক্রয় কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। বিপিসি চুক্তির সবকিছু চূড়ান্ত করলেও ক্রয় কমিটির অনুমোদন নেয়নি।

বিপিসির পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, মাসের পর মাস বিপিসির টাকা বিপণন কোম্পানির কাছে পড়ে থাকে। এ জন্য অটোমেশনে যাচ্ছে বিপিসি, যাতে জ্বালানি বিক্রির টাকা দ্রুত পাওয়া যায়। কিন্তু যে অভিযোগ উঠেছে, তা ঠিক নয়।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘বিপিসি অটোমেশনে যেতে কার সঙ্গে চুক্তি করছে, তা অফিশিয়ালি জানি না। একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারের শত শত কোটি টাকা সাত-আট দিন কী করে পড়ে থাকবে? যদি এই টাকার কিছু হয় দায় কে নেবে?