দেশে বৈষম্য বাড়ছে। কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। ১৯৯১-৯২ সাল থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৫ বছরে দেশের সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের আয় ১২১ গুণ বেড়েছে। আর এখন প্রতিবছর ৮ লাখ বেকার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হচ্ছে। রোববার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক উপস্থাপনায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
সামাজিক উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য অগ্রাধিকার শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সংলাপে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরীসহ অর্থনীতিবিদ, গবেষক, এনজিও ব্যক্তিত্বরা অংশ নেন।
সিপিডির মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য ব্যবহার করে বলা হয়েছে, দেশে ক্রমশ বৈষম্য বাড়ছে। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের হাতে ছিল মোট সম্পদের ১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। একইভাবে ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশের কাছে ছিল ১ শতাংশের কিছু বেশি সম্পদ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে নেমেছে দশমিক ২৩ শতাংশে। এই সময়ের মধ্যে শীর্ষ ৫ শতাংশের সম্পদ ১২১ গুণ বেড়েছে।
সিপিডি আরও বলছে, প্রতিবছর গড়ে ১৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। ২০১৩ থেকে প্রতিবছর গড়ে ২১ লাখ তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন, যা ২০২৩ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এর ফলে প্রতিবছর গড়ে ৮ লাখ বেকার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির জন্য অর্থনীতিতে দুটি হুমকি রয়েছে বলে মনে করে সিপিডি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান হচ্ছে না। আর প্রবৃদ্ধির সুবিধা অসমভাবে বণ্টন হচ্ছে, সমৃদ্ধির সুফল সবাই সমহারে পাচ্ছে না। এতে বৈষম্য ক্রমেই বেড়েছে।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরীসহ অর্থনীতিবিদ, গবেষক, এনজিও ব্যক্তিত্বরা অংশ নেন।
সংলাপের সভাপতি ও সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা আনতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, তাইওয়ানের মতো দেশ মানসম্পন্ন শিক্ষা দিয়ে এত উন্নতি করেছে। রেহমান সোবহান বলেন, প্রকল্পগুলোর ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির কারণ গভীরভাবে অনুসন্ধান করা উচিত। এর পেছনে দুর্নীতি আছে, নাকি প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতার অভাব, সেটি খুঁজে বের করা দরকার।
সংলাপের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা চাই বৈষম্য দূর হোক। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে তুলে আনতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা ৯০ শতাংশ প্রকৃত সুবিধাভোগী পান। প্রথম দিকে কিছু চুরি-চামারি হয়েছে। এখন অনেক কমে গেছে।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক ইশতেহার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তৈরি করা হয়। মাঠের বাস্তবতায় রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে হয়। তিনি আরও জানান, শিক্ষা খাতে সিডিপিসহ অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সুপারিশ নেওয়া হবে।
সিপিডির বিশেষ ফেলো রওনক জাহান বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন কীভাবে তদারকি করা হবে, তা পরিষ্কার হওয়া উচিত। প্রচলিত পন্থার বাইরে আরেকটি নাগরিক কণ্ঠস্বর তৈরি করা উচিত।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চোধূরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি রশিদ ই মাহবুব প্রমুখ।
সংলাপ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে সিপিডির ‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি অ্যান্ড ন্যাশনাল ইলেকশন ২০১৮: প্রায়োরিটিজ ফর ইলেট্ররাল ডিবেটস’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।