ব্যাংকিং খাত নিয়ে বিআইবিএমের গবেষণা

ফ্ল্যাট, ব্যবসা আর বিয়ের জন্যই ব্যাংকে যত সঞ্চয়

.

একখণ্ড জমি বা একটি ফ্ল্যাট কেনার আশাতেই মূলত ব্যাংকে টাকা জমা বা সঞ্চয় রাখেন দেশের বেশির ভাগ আমানতকারী। এরপর যথাক্রমে ব্যবসা, শিক্ষা ও বিয়ের প্রয়োজন মেটাতেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন আমানতকারীরা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিআইবিএমের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এ গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বিআইবিএমের তিন শিক্ষক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগের একজন উপপরিচালক মিলে এ গবেষণাটি পরিচালনা করেন। শিক্ষকেরা হলেন মহিউদ্দিন সিদ্দিকী, শহীদ উল্লাহ ও নুর আল ফয়সাল এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা মনজুরে মাওলা।
গবেষণায় অংশ নেওয়া আমানতকারীদের কাছে গবেষকেরা জানতে চেয়েছিলেন, কেন তাঁরা ব্যাংকে আমানত বা সঞ্চয় জমা রাখেন। জবাবে অধিকাংশ আমানতকারী বলেছেন, জমি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য মূলত ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন তাঁরা।
গবেষকেরা জানান, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় তিন হাজার আমানতকারীর সাক্ষাৎকার ও সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। গবেষণাকর্মটির নামকরণ করা হয়েছে: ‘দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমানতকারীর ধারণা ও আচরণ’। আমানতকারীদের কাছ থেকে ব্যাংকিং সেবার বিষয়ে প্রশ্নভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
তিন হাজার আমানতকারীর মধ্যে ১ হাজার ৩৬০ জনই বলেছেন, জমি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্যই মূলত তাঁরা ব্যাংকে সঞ্চয় করেন। ৮০০ জন আমানতকারী বলেছেন, ব্যবসা ও অন্যান্য প্রয়োজনে তাঁরা ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন। ৪৪০ জন বলেছেন, শিক্ষার খরচ মেটাতেই ব্যাংকে আমানত রাখেন তাঁরা। আর ৪০০ জন বলেছেন, বিয়ের খরচ মেটাতে ব্যাংকে টাকা জমান তাঁরা।
গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংক খাতে বিভিন্ন ধরনের যে আমানত রয়েছে, তার ৪০ শতাংশেরও বেশি আমানত কোটি টাকার বেশি হিসাবধারীদের। অর্থাৎ এক কোটি টাকার জমা রাখেন—এমন আমানতকারীর কাছ থেকেই ব্যাংকের সিংহভাগ আমানত আসে। আবার ব্যাংক খাতে মোট আমানতের সিংহভাগই আসে শহরাঞ্চল থেকে।
বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত আমানতগুলো হচ্ছে—চলতি আমানত, সঞ্চয়ী আমানত, মেয়াদি আমানত। গবেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে আমানতকারীরা সবচেয়ে বেশি আমানত জমা রাখেন সঞ্চয়ী আমানত হিসাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে গবেষকেরা জানিয়েছেন, ২০১৪ সাল শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ লাখ ৯৩ হাজার ১১৩ কোটি টাকা; যার মধ্যে ৮১ শতাংশ বা ৫ লাখ ৬০ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে শহরাঞ্চল থেকে। ১৯ শতাংশ বা ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা আমানত গ্রামাঞ্চল থেকে এসেছে।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গতকালের গবেষণা ফলাফল প্রকাশবিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম।
সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী, এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেন মহিউদ্দিন সিদ্দিকী। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের পরিচালক প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতে বর্তমানে যে আমানত রয়েছে, তার প্রায় ৮২ শতাংশ বা ৫ লাখ ৭১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা বেসরকারি খাতের আমানত। বাকি ১৮ শতাংশ বা ১ লাখ ২১ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা সরকারি আমানত। ১৯৮০ সালে ব্যাংক খাতের মোট আমানতের মধ্যে প্রায় ৩৯ শতাংশ ছিল সরকারি আর ৬১ শতাংশ ছিল বেসরকারি খাতের আমানত।
কী দেখে ব্যাংক পছন্দ করেন আমানতকারী: গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, আমানত হিসাব খোলার ক্ষেত্রে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দেন আমানতকারীরা। আমানতের বিপরীতে কোন ব্যাংক কত সুদ দেয়, তার ওপর ভিত্তি করেই প্রধানত বেশির ভাগ আমানতকারী হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর গুরুত্ব দেওয়া হয় আমানতের নিরাপত্তার বিষয়টিকে। অর্থাৎ কোন ব্যাংকে আমানত রাখা কতটা নিরাপদ, তার ভিত্তিতে ব্যাংকে হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত নেন আমানতকারীরা। তৃতীয়ত, বিবেচনায় নেওয়া হয় আমানতকারীর অবস্থান থেকে ব্যাংকের দূরত্বের বিষয়টিকে। এ ক্ষেত্রে আমানতকারীরা তাঁর অবস্থান বা যোগাযোগের সুবিধার্থে নিকটস্থ ব্যাংককেই বেছে নেন। এরপর হিসাব খোলার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের সেবার মানকে।