চীনে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলেও ভারতে বেড়েছে ফেলনা বোতল রপ্তানি। ফলে বাংলাদেশের পুরোনো প্লাস্টিকের বোতলের বড় বাজার হিসেবে দাঁড়িয়েছে ভারত। প্রতিবেশী দেশটির পাশাপাশি তুরস্ক, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও কোরিয়া যায় ফেলনা বোতল।
শুধু বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ২৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা মূল্যের প্লাস্টিকের বোতলকুচি রপ্তানি হয়। বেনাপোল কাস্টম হাউস জানিয়েছে, পরিমাণের দিক দিয়ে তা ৬ হাজার ৯৩৪ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ পেট ফ্লেক্স ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, এখন মাসে গড়ে সাড়ে ৪ হাজার টন বোতলকুচি রপ্তানি হয়। তিনি বলেন, ২০১৭ সাল পর্যন্ত চীন ছিল বোতলকুচির বড় বাজার। চীনে বর্তমানে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
দেশজুড়ে পানীয়, পানি, ভোজ্যতেল ও অন্যান্য পণ্য বিপণনে যে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়, তা ফেলে দেওয়ার পর সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা। এরপর কারখানার মালিকেরা তা কিনে নিয়ে যন্ত্রে কুচি কুচি করেন। ওই কুচি রপ্তানি করা হয়। এসব বোতলকুচি দিয়ে আমদানিকারক দেশের কারখানায় নানা পণ্য তৈরি করা হয়। রপ্তানিমুখী শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকার প্লাস্টিকের বোতলের কুচি রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দিত। চলতি অর্থবছরে তা কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। রপ্তানিকারকেরা অবশ্য আগের ১০ শতাংশ ভর্তুকি বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন।
যশোর শহরের শংকরপুর এলাকায় লিহাম প্লাস্টিক কারখানা নামে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে পৌনে ১ কোটি টাকা মূল্যের ১৫০ থেকে ২০০ টন বোতলকুচি ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে। কারখানার মালিক লোকমান হোসেন একজন তরুণ উদ্যোক্তা। স্নাতক পাস করার পর চাকরি না খুঁজে তিনি ২০১১ সালে ফেলনা প্লাস্টিকের বোতল কেনাবেচার কাজ শুরু করেন। ২০১৫ সাল থেকে তাঁর পণ্য বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়। এখন প্রতি মাসে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ টাকা মূল্যের ১৫০ থেকে ১৮০ টন বোতলকুচি ভারতে রপ্তানি করেন তিনি। কারখানায় বর্তমানে ২৭ জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
লোকমান হোসেন বলেন, কারখানাটি করতে তিনি বিনিয়োগ করেছেন সাত-আট লাখ টাকা। আরও অন্তত ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা দরকার।
লিহাম প্লাস্টিকে কর্মরত শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, এখানে কাজ করে যে টাকা রোজগার হয়, তাতেই সংসার চলে যায়। নারী শ্রমিক সালমা বেগম বলেন, তাঁর কাজ বোতল বাছাই করা। দৈনিক আয় ১৫০ টাকার মতো। স্বামী আর তাঁর নিজের রোজগারে সংসার চলে যায়।
লোকমান হোসেন জানান, তাঁর কারখানায় রপ্তানির জন্য ১০০ টনের বেশি বোতলকুচি মজুত রয়েছে, যা ভারতের কলকাতা, কানপুর, দিল্লি ও উত্তর প্রদেশে পাঠানো হবে। সেখানে এগুলো প্রক্রিয়াজাত করে সুতা, প্লাস্টিকের শিট, পাইপ, নতুন বোতলসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র তৈরি হবে।