অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে মূলধনও কমে গেছে ফারমার্স ব্যাংকের। ৪০০ কোটি টাকা নিয়ে কার্যক্রমে আসা ব্যাংকটি ইতিমধ্যে ২৮৩ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। ফলে ব্যাংকটির মূলধন পর্যাপ্ততার হার (সিআরএআর) গত ডিসেম্বরে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। যদিও ব্যাংকের জন্য এ হার ন্যূনতম ১০ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে সিআরএআর দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
এদিকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৭২৩ কোটি টাকা।
একইভাবে বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩১ কোটি টাকা ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। তবে একই সময়ে ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, দ্য সিটি, ডাচ্বাংলা, ইস্টার্ন, আইএফআইসি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, প্রাইম, স্ট্যান্ডার্ডসহ অন্য ব্যাংকগুলোতেও মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মূলধন-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গতকালের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের দেশীয় ৪০ ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এ সময় ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ২২০ কোটি টাকা ও নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধন ৮০ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মূলধন উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯০ কোটি টাকা।
ব্যাংক সূত্রগুলো বলছে, অনিয়ম-দুর্নীতির পর বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন হলেও নতুন করে মূলধন জোগান দিচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। আবার ঋণের টাকাও ফেরত আনতে পারছে না ব্যাংকটি। ফলে মালিকানা পরিবর্তনের তিন বছর কেটে গেলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি কমার্স ব্যাংক। তবে এখন নতুন করে শাখা বাড়িয়ে লোকবল নিয়োগের উদ্যোগ নিচ্ছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৩৫ কোটি টাকা।
এদিকে সাবেক ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে ব্যাপক দুর্নীতির পর মালিকানা পরিবর্তন শেষে নতুন নাম নেয় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। কিন্তু মালিকানা পরিবর্তন হলেও নতুন করে চাহিদামতো মূলধন জোগান দেননি বিদেশি পরিচালকেরা। এ কারণে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে যে সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার, ব্যাংকটি তা অনুসরণ করতে পারেনি। ফলে দফায় দফায় বেড়েছে পাওনাদারদের টাকা ফেরানোর সময়। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৭০৭ কোটি টাকা।
এদিকে সংকটে পড়া ফারমার্স ব্যাংক ২০১৭ সালে ৫৩ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে। বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত কমে হয়েছে ৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটির ঋণ ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি হওয়ায় ফারমার্স ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। ব্যাংকটির শাখাগুলোতে প্রতিদিন ভিড় করেও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না আমানতকারীরা। অন্যদিকে নানা অনিয়ম করে দেওয়া ঋণও আদায় করতে পারছে না তারা।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে নতুন করে ব্যাংকটির আরও যেসব আর্থিক অনিয়ম বেরিয়ে আসছে, তা হিসাবে নিলে লোকসান বাড়বে কয়েক গুণ। বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি ফেরত না আসার আশঙ্কা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ফারমার্স ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা বের করা হয়েছে মূলত মতিঝিল ও গুলশান শাখার মাধ্যমে।