দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পাকা বাড়ি তৈরি করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ১৬ হাজার ১২৪ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে, প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে বিনা সুদে ঋণ দেওয়া। সরকার এ জন্য ‘মুক্তিযোদ্ধা গৃহনির্মাণ ঋণ’ নামে একটি প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের পাকা বাড়ি তৈরির এ ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের এপ্রিলে একটি প্রতিবেদন পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এত দিন পড়ে থাকলেও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে অর্থ মন্ত্রণালয় সরব হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে, যাতে প্রতিবেদনটির নানা দিক খতিয়ে দেখা হয়েছে।
জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলাপ-আলোচনা চলছে। আরও বৈঠক করে অর্থ বিভাগের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ পাঠানোর দরকার পড়বে।’
গৃহনির্মাণ ঋণ দেওয়ার যুক্তি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঋণের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা ও মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা পাওয়ার যোগ্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত উত্তরাধিকারীদের জন্য আবাসিক গৃহনির্মাণ। ঋণের সম্ভাব্য প্রার্থী হবেন ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪৪ জন। সে হিসাবে দরকার পড়বে ১৬ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। ভূমিহীন ও অসচ্ছল জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নেতৃত্বাধীন সাম্প্রতিক বৈঠকে প্রতিবেদনটির যেসব দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে প্রথম প্রশ্নই ওঠে ঋণের সুদ নিয়ে। বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হলে ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদের দায় কে বহন করবে?
আলোচনা শেষে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে যে ৫ শতাংশ সুদ ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি আকারে দেবে সরকার। প্রতিবছরের বাজেটেই এ ব্যাপারে বরাদ্দ রাখা হবে। ২ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে নেওয়া হবে সেবা মাশুল হিসেবে। আর ১ শতাংশ ব্যাংকগুলো তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) তহবিল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ব্যয় করবে।
ঋণগ্রহীতা মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে বাড়ির উত্তরাধিকারী কে হবেন—এ প্রশ্নের সমাধানও এসেছে। বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার অবর্তমানে ভাতা যিনি পান, তিনিই হবেন বাড়ির উত্তরাধিকারী।
জীবিত মুক্তিযোদ্ধা অজানা
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে গেজেটভুক্ত মোট মুক্তিযোদ্ধা ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৯ জন। তাঁদের মধ্যে সম্মানী ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৩৭ জন এবং খেতাবপ্রাপ্ত সম্মানী ভাতাভোগী ৫৮৭ জন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কমিটির কাছে জীবিত মুক্তিযোদ্ধার সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি। বলেছে, সংখ্যাটি তাদের কাছে আগে থেকে সংগৃহীত নেই। এ সংখ্যা নিরূপণ করা সময়সাপেক্ষ এবং অনেকটা কষ্টসাধ্য হবে। তা ছাড়া বয়সের কারণে অনেক মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবিত ও মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাভোগী উত্তরাধিকারীদের মধ্যে আনুমানিক ৭০ শতাংশ ঋণপ্রার্থী হবেন। সে বিবেচনায় সম্ভাব্য ঋণপ্রার্থী হবেন ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪৪ জন। প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা ঋণ দিলে টাকার দরকার পড়বে ১৬ হাজার ১২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
সুদের টাকা সরকার দেবে
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরের এ প্রকল্পের আওতায় সব ঋণ দেওয়া হবে বিনা সুদে অথবা ৫ শতাংশ সরল সুদে। সুদে দেওয়া হলে ঋণগ্রহীতাদের সুদের টাকা পরিশোধ করতে হবে না, করবে সরকার। সরকার প্রতিবছরের বাজেটে সুদ বাবদ বরাদ্দ রাখবে।
এর বিকল্পও রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, সুদের খরচের জন্য সরকার শুরুতেই একটি তহবিল গঠন করতে পারে। ওই তহবিলের টাকা বিনিয়োগ করে বছরে ৫ শতাংশ হারে নিট মুনাফা অর্জন করলেও কোনো অসুবিধা হবে না। সুদ ব্যয়ের জন্য প্রথমে যদি ৩ হাজার ৪২০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়, তাহলে পরের বছরের সুদ ব্যয় বাবদ টাকাটা উঠে আসবে।