>চলতি বছরের ৯ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে ভিয়েতনাম।
চলতি বছরই হয়তো ভিয়েতনামের কাছে দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারকের মুকুট হারাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে রপ্তানি ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে যাওয়ায় শঙ্কাটি আরও প্রবল হচ্ছে। ইতিমধ্যে বছরের প্রথম ৯ মাসে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে ভিয়েতনাম।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ৬১০ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে ভিয়েতনাম থেকে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৯৩০ কোটি ডলারের পোশাক। তার মানে, ৯ মাসে বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনাম ৩২০ কোটি ডলারের পোশাক বেশি রপ্তানি করেছে—এমন তথ্যই দিচ্ছে দেশটির গণমাধ্যম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে ভিয়েতনাম অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যমতে, ভিয়েতনাম চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ৩৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৪৫৬ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে বাজারটিতে শীর্ষ রপ্তানিকারক চীনের রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ১০ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে চীন রপ্তানি করেছে ২ হাজার ১০ কোটি ডলারের পোশাক।
ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ভিয়েতনামের জাতীয় দৈনিক ভিয়েতনাম নিউজ–এর এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে, চলতি বছর কয়েকটি বাজারে জটিলতা থাকার পরও দেশটির পোশাক রপ্তানি চার হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাবে। ইতিমধ্যে ৯ মাসে ২ হাজার ৯৩০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানির পাশাপাশি ভিয়েতনামের অভ্যন্তরীণ পোশাকের বাজারও ৯০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে।
পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম যে বাংলাদেশকে ধরে ফেলতে যাচ্ছে, তা কয়েক মাস আগে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ ২০১৯ প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ভারত, তুরস্ক, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—এই শীর্ষ ১০টি দেশ ৪২ হাজার ১০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা মোট রপ্তানির ৮৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে চীন। বিশ্ববাজারে দেশটির হিস্যা ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ।
চীনের পরই একক দেশ হিসেবে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ স্থানে আছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ ৩ হাজার ২৯২ কোটি এবং ভিয়েতনাম ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। উভয় দেশের বাজার হিস্যা প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। গত বছর ১০ শীর্ষ রপ্তানিকারকের মধ্যে বাংলাদেশের বাজার হিস্যা ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে ভিয়েতনামের বাজার হিস্যা বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম আমাদের ইতিমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে। বছর শেষে সেটি অব্যাহত থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রয়াদেশ চীন থেকে ভিয়েতনামে স্থানান্তরিত হয়েছে। ভিয়েতনামের পোশাক খাতে চীনাদের বিনিয়োগই বেশি। বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর তারাই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের ভিয়েতনামে নিয়ে গেছে। অন্যদিকে নানা কারণে আমাদের কারখানাগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে গেছে। সে জন্য আমরা বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিতে পারিনি।’
ফয়সাল সামাদ আরও বলেন, ‘সরকার পোশাক রপ্তানিতে নতুন করে ১ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নও কিছুটা হয়েছে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে আরও কী করা যায়, সেসব নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। ফলে আশা করছি, আগামী বছর আমাদের পোশাক রপ্তানি কিছুটা ভালো হবে।’