>পেট্রল পরিশোধনকারী কারখানাগুলোতে কাঁচামাল কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ করা হলেও অকটেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
দেশের বেসরকারি ১২টি তেল পরিশোধনকারী কারখানাকে জ্বালানির উপজাত কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ। গতকাল বুধবার থেকে মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। এতে প্রায় দেড় হাজার জনবল বেকার ও কারখানাগুলো ঋণের চাপে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পেট্রল উৎপাদনকারী কারখানাকে কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ থাকলেও অকটেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে তা সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে পেট্রল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে অকটেন আমদানিও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্যাসফিল্ড থেকে পাওয়া জ্বালানির উপজাত কনডেনসেট পরিশোধন করে দেশেই পেট্রল ও অকটেন তৈরি হয়ে আসছে। হঠাৎ করে ১২টি কারখানায় কনডেনসেট বন্ধের সিদ্ধান্তে কারখানার মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মামুন সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে প্রতিটি কারখানাকে এক বছরের বরাদ্দপত্র দেওয়া হতো। সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে প্রতি মাসে বরাদ্দপত্র দিচ্ছে মন্ত্রণালয়। তাতেও আপত্তি ছিল না। কিন্তু চলতি মাসে কোনো বরাদ্দপত্র আমাদের দেওয়া হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘১২টি কারখানায় ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রকৌশলীসহ দেড় হাজার জনবল। আমাদের কিছু না জানিয়ে কারখানায় কনডেনসেট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। তাহলে দেড় হাজার জনবলের কী হবে? বিনিয়োগের কী হবে?’
গত ২৭ জুন মন্ত্রণালয় থেকে কনডেনসেট বরাদ্দের চিঠি তৈরি করা হয়। তাতে পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি লিমিটেডকে দৈনিক আড়াই হাজার ব্যারেল, সুপার পের্টোকেমিক্যাল (প্রা.) লিমিটেডকে চার হাজার ব্যারেল কনডেনসেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই দুটি বেসরকারি কারখানা অকটেন উৎপাদন করছে। এই কারখানাগুলোয় কনডেনসেট সরবরাহ করা হবে। কিন্তু বাদ পড়েছে কেবল ১২টি পরিশোধন কারখানা, যেগুলো পেট্রল উৎপাদন করে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই ১২ কারখানায় ফেব্রুয়ারি বা মার্চের মধ্যে কনডেনসেট বন্ধ করে দেওয়ার কথা ছিল। কারণ, তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের মান (বিএসটিআই গ্রেড) ৭০ থেকে ৮২ পর্যন্ত। কিন্তু পেট্রলের ন্যূনতম মান ৮৫ নির্ধারণ করেছে বিএসটিআই। আনিছুর রহমান আরও বলেন, ‘১২ কারখানা আধুনিকায়নের জন্য মালিকপক্ষকে অনেক তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কথা শুনছেন না। তাই তাঁদের কাঁচামাল (কনডেনসেট) বন্ধ করে দিয়েছি।’
বিপিসি সূত্র জানায়, বেসরকারি পরিশোধন কারখানাগুলোকে পেট্রলের গ্রেড (আরএনও) ৮৭ থেকে নামিয়ে ৮০ নির্ধারণ করে দেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন একজন অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে মান নির্ধারিত হয় এবং বিএসটিআইকে তা পুনর্নির্ধারণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। বৈঠকটি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর। ২০ ডিসেম্বর তা সিদ্ধান্ত আকারে সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
তাই সচিবের বক্তব্য মানতে নারাজ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাদাত আনোয়ার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পেট্রলের মান (আরএনও বা রিসার্চ অকটেন নম্বর) ৮০ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু অনেক কারখানা আরএনও গ্রেড ৮২ পর্যন্ত পেট্রল পরিশোধন করে আসছিল।
এদিকে বিপিসির দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, বেসরকারি কারখানাগুলোর পেট্রলের আরএনও গ্রেড গড়ে ৮০। এর সঙ্গে অকটেন ব্লেন্ডিং বা মিশ্রণ ঘটিয়ে ৮৪ থেকে ৮৬ পর্যন্ত মান উন্নীত করা যায়। বিপিসি দীর্ঘদিন ধরে তা করে আসছিল। ১২ কারখানাকে কনডেনসেট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের।
দেশে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন পেট্রল ব্যবহৃত হয়েছিল। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যবহৃত হয় ২ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরে লকডাউনের কারণে পেট্রলের ব্যবহার কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।