পেঁয়াজের বাজারে দামের তেমন কোনো হেরফের নেই। পেঁয়াজের ঝাঁঝ সামলাতে নাভিশ্বাস ক্রেতাদের। এরইমধ্যে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ইতিমধ্যে বেড়েছে। অন্যদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়িয়েছে বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। তারা বলছে, আন্তর্জাতিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ খরচ বৃদ্ধি পাওয়াই দাম বাড়ানোর কারণ।
তিনটি কোম্পানি গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সেগুলোর কর্মকর্তারা। সাধারণত দেখা যায়, একটি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ালে অন্যরাও দাম বাড়িয়ে দেয়।
দেশের বোতলজাত সয়াবিন তেলের বাজারে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, এস আলম, বসুন্ধরা, গ্লোবসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরা খোলা সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি করে। আবার বোতলজাত করেও বিক্রি করে।
জানতে চাইলে টি কে গ্রুপের পরিচালক (ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশনস) মো. শফিউল আথহার তাসলিম বলেন, বাজেটের পরই নতুন করকাঠামোর কারণে এই দাম বাড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু তখন বাড়ানো হয়নি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দর বেড়েছে। পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বেড়েছে। এ কারণে দাম কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এক মাস আগে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেল প্রতি টনের দাম ছিল ৭১০ মার্কিন ডলার, যা এখন ৭৫০ ডলার ছাড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, এবারের বাজেটে ভোজ্যতেল আমদানি মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) তিন স্তরে আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। এতে লিটারে ৩ টাকার মতো প্রভাব পড়ার কথা জানায় কোম্পানিগুলো।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত সয়াবিন তেলের এক লিটারের এখনকার সর্বোচ্চ খুচরা (এমআরপি) মূল্য ১০২ থেকে ১১০ টাকা। তবে কোম্পানিগুলো খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা লিটার দরে সয়াবিন তেল বিক্রি করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বড় বাজারের খুচরা বিক্রেতারা এমআরপির চেয়ে কম দামে তেল বিক্রি করেন। কোম্পানিগুলো দাম বাড়ালেও এমআরপিতে পরিবর্তন আসছে না। অবশ্য লিটারে ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়লে খুচরা বিক্রেতারাও আর ছাড় দিয়ে বিক্রি করতে পারবেন না। সব মিলিয়ে প্রভাব পড়বে মানুষের সংসারের ব্যয়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুরের দুজন পরিবেশক বলেন, কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর বিষয়ে তাঁদের ইঙ্গিত দিয়েছে। কেউ কেউ ইতিমধ্যে দাম বাড়িয়েছে।
অবশ্য সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, দাম বাড়ানোর বিষয়ে এখনো তাঁদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
ঢাকার খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩ টাকা ও পাম তেলের দাম ২ টাকার মতো বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। খুচরা বাজারভেদে এখন খোলা সয়াবিন ৮০-৮৪ টাকা ও পাম তেল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আবুল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, এক মাস আগের তুলনায় প্রতি মণ সয়াবিন তেলের দাম ৭০ টাকার মতো বাড়তি। এতে লিটারে প্রায় ২ টাকার প্রভাব পড়ে।
পেঁয়াজের বাজারে দামের তেমন কোনো হেরফের নেই। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১৪০ টাকা, দেশি কিং নামের পেঁয়াজ ১৩০ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১২০-১২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের আড়তের পাইকারি দোকানে (৫ কেজি করে কেনা যায়) দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১২৬ টাকা, দেশি কিং ১২০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১১০ টাকা ও চীনা পেঁয়াজ ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের নবীন ট্রেডার্সের মালিক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘পেঁয়াজের বড় চালান আসবে শুনছি। ফলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে দাম কমবে আশা করা যায়।’ তিনি বলেন, বাজারে এখন পেঁয়াজ কম। দাম চড়া বলে বেচাকেনাও কম।