সারা দেশের মতো নওগাঁর বাজারেও হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এক দিনের ব্যবধানে স্থানীয় খুচরা বাজারে ৫০ টাকা বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম। দাম বাড়া ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করলেও তা কাজে আসছে না। প্রতিদিন বাড়ছে দাম।
নওগাঁ জেলা শহরের সবচেয়ে বড় খুচরা বাজার গোস্তহাটির মোড় এলাকার পৌর বাজারে গতকাল শুক্রবার কয়েক দফা পেঁয়াজের দাম বাড়ে। এ ছাড়া শহরের সিএ মোড় বাজার, মুক্তির মোড় বাজার, পার নওগাঁ যমুনা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দিনভর একই অবস্থা দেখা যায়।
গতকাল সকাল আটটার দিকে পৌর বাজার ও মুক্তির মোড় বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই সময় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২১০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। তিন ঘণ্টা পর বেলা তিনটার দিকে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ওঠে ২৫০ টাকা।
দুপুর ১২টার দিকে পৌর বাজারে কথা হয় শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার একটি অনলাইনের খবরে দেখলাম, পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। আজ (শুক্রবার) বাজারে দেখছি, ২৩০ টাকার নিচে কোনো পেঁয়াজ নেই। বিদেশি বড় পেঁয়াজগুলোর দাম চাইছে ২৩০ টাকা। আর দেশিটার দাম চাইছে ২৪০ টাকা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ৪০ টাকা দাম বেড়েছে। এটা তো একেবারে মগের মুল্লুক হয়ে গেল।’
বেলা তিনটার দিকে মুক্তির মোড় বাজারে কথা হয় খাস নওগাঁ এলাকার বাসিন্দা আনজুয়ারা খাতুনের সঙ্গে। এই গৃহিণী বলেন, ‘১২৫ টাকায় আধা কেজি পেঁয়াজ কিনলাম। পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগে যেখানে সপ্তাহে এক কেজি পেঁয়াজ খেতাম, এখন সেখানে আধা কেজি পেঁয়াজে সারতে হচ্ছে। যেভাবে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে পেঁয়াজ খাওয়াই ছেড়ে দিতে হবে।’
>নওগাঁয় গতকাল প্রতিকেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম ওঠে ২৫০ টাকা
এই চড়া দামকে ‘মগের মুল্লুক’ বলেছেন ক্রেতারা
পৌর বাজারের খুচরা বিক্রেতা হাশেম আলী বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করে। নওগাঁর পাইকারেরা তাঁদের মজুতসংকটের কথা বলে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কম পরিমাণে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। দেড়-দুই মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। পাইকারি কিনতে বেশি দাম পড়ায় খুচরা বিক্রেতারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন।
পৌর পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল দুপুর পর্যন্ত প্রতি মণ পেঁয়াজ ৯ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তাঁদের দাবি, পেঁয়াজের সরবরাহ কম হওয়ায় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের মোকাম থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কেনায় দাম বাড়ছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হারুন-অর-রশীদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘অক্টোবর থেকে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কয়েকবার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। পেঁয়াজ যাতে কেউ মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা না করে, সে ব্যাপারে আহ্বান জানানো হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। আমি নিজেও শহরের পৌর বাজার পরিদর্শনে যাব।’
বগুড়ার নন্দীগ্রামের হাটে অভিযান
প্রতিনিধি, বগুড়া জানান, নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আখতার বাজারে অভিযান শুরু করতেই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ৩০ টাকা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার রণবাঘা ও ওমরপুর হাটে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
তবে এই দাম বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ইউএনও অভিযান শেষ করে চলে যাওয়ার পরই ফের বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।