>
শেরপুরের হাজি কলিম উদ্দিন অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মো. আমজাদ হোসেন। একাধিকবার জেলা শিল্প ও বণিক সমিতি ও চালকল মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। শেরপুরসহ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি, সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং বাজেট সামনে রেখে প্রত্যাশা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেরপুর প্রতিনিধি দেবাশীষ সাহা রায়
প্রথম আলো: শেরপুরের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ কেমন?
আমজাদ হোসেন: বর্তমানে শেরপুরের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খুব ভালো নয়। বিশেষ করে চালকলমালিকদের আর্থিক অবস্থা মোটেও সুবিধার নয়। কারণ, ধানের বাজারমূল্যের সঙ্গে চালের দামের সামঞ্জস্য নেই। যেসব চালকলমালিক বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদন করছেন, তাঁরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। এ ছাড়া ব্যবসার জন্য ব্যাংকঋণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু শেরপুরে সহজে ঋণ পাওয়া যায় না। ঋণ পেতে হলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ‘খুশি’ করতে হয়। অথচ ব্যাংকঋণ ছাড়া বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা কলকারখানা চালানো কঠিন। তাই পুঁজির সংকটে ব্যবসায়ীরা চরম দুশ্চিন্তায় আছেন।
প্রথম আলো: শেরপুরে চালকলশিল্পের বাইরে অন্য শিল্প গড়ে উঠছে না কেন?
আমজাদ হোসেন: খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা শেরপুর। এ জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। তাই চালকলশিল্পে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানকার মানুষ খাদ্য ব্যবসাই ভালো বোঝেন। অন্য শিল্প গড়ে তুলতে হলে বড় ধরনের পুঁজি দরকার। কিন্তু এ জেলার মানুষের হাতে পর্যাপ্ত পুঁজি নেই। ফলে পুঁজির সংকটের কারণেই এখানে অন্য শিল্প গড়ে উঠছে না। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অন্য শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব।
প্রথম আলো: সামনে বাজেট। বাজেট এলেই ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এবারের বাজেট সামনে রেখে আপনাদের চাওয়া কী?
আমজাদ হোসেন: একজন খাদ্য ব্যবসায়ী হিসেবে বলতে পারি, বিদেশ থেকে অবাধে শুল্কমুক্ত চাল আমদানির ফলে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের চালকলমালিকেরা লোকসান গুনছেন। ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়ে অনেক চালকল বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমাদের দাবি, দেশের চালকলগুলো বাঁচাতে হলে আগামী বাজেটে চাল আমদানিতে পর্যাপ্ত শুল্ক আরোপ করতে হবে, যাতে স্থানীয় চালের মূল্যের সঙ্গে আমদানি করা চালের মূল্যের একটা সামঞ্জস্য থাকে। এটি হলে চালকলমালিকেরা লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
প্রথম আলো: শেরপুরে উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে বাধা বা সমস্যা আছে কি?
আমজাদ হোসেন: বর্তমানে রাজধানী ঢাকা বা দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে শেরপুরের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। পরিবহন ধর্মঘট বা অন্য কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলে এ জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই এ জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের জন্য রেলপথ স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। সেটি হলে স্বল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহন করা যাবে এবং সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। এতে মানুষের দুর্ভোগও কমবে।
প্রথম আলো: শেরপুরে শিল্পকারখানা স্থাপনে গ্যাস-বিদ্যুতের সুবিধা কেমন?
আমজাদ হোসেন: এক-দুই বছর আগেও শেরপুরে বিদ্যুতের প্রকট সমস্যা ছিল। তবে এখন কলকারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহের মোটামুটি উন্নতি হয়েছে। তবে গ্যাসের সংকট এখনো তীব্র। অনেক ব্যবসায়ী কারখানার জন্য গ্যাসের আবেদন করেও গ্যাস পাচ্ছেন না। এতে পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
প্রথম আলো: শেরপুরে উৎপাদিত সুগন্ধি আতপ চাল রপ্তানির পরিকল্পনা আছে কি?
আমজাদ হোসেন: আমন মৌসুমে শেরপুর জেলায় বিপুল পরিমাণে সুগন্ধি আতপ চাল (তুলসীমালা) উৎপাদিত হয়, যার গুণগত মান বেশ ভালো। এরই মধ্যে সরকার সুগন্ধি আতপ চালকে শেরপুরের ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। উচ্চমূল্যের কারণে স্থানীয় বাজারে এ চালের কাটতি কম। ফলে উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু রপ্তানির দুয়ার খুলে গেলে একদিকে যেমন এই চালের যথাযথ মূল্য পাওয়া যাবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে। তাই আমরা এই চাল রপ্তানিতে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।
প্রথম আলো: জেলার শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি কেমন? এ ব্যাপারে আপনারা কী ভাবছেন?
আমজাদ হোসেন: বর্তমান সরকার শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। শেরপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ শেষ হলে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা সেখানে শিল্প করতে পারবেন। শিক্ষিত তরুণেরা যেন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, সে জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। আমি মনে করি, কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পের বিকল্প নেই। আর তা করতে হলে অর্থায়ন-প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। ঋণের সুদহার একের ঘরে নামিয়ে আনা জরুরি।