বন্ধঘোষিত সরকারি পাটকলশ্রমিকদের গত জুনের শেষ সপ্তাহের বকেয়া ও ৬০ দিনের নোটিশ মেয়াদের মজুরি পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনকে (বিজেএমসি) ৮০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। করপোরেশনটিকে পরিচালন ঋণ হিসেবে এই বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বরাদ্দ দেওয়া ৮০ কোটি ৭৯ লাখ টাকার মধ্যে শ্রমিকদের গত জুনের শেষ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ১০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ও ৬০ দিনের নোটিশ মেয়াদের মজুরি বাবদ ৭০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই অর্থ শ্রমিকের বেতন-ভাতার বাইরে অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। বিজেএমসিকে আগামী ২০ বছরে ৫ শতাংশ সুদে ষাণ্মাসিক কিস্তিতে এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। সে জন্য অর্থ বিভাগের সঙ্গে বিজেএমসিকে একটি ঋণচুক্তি করতে হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে এই অর্থ পৌঁছে যাবে। তবে ৬০ দিনের নোটিশ মেয়াদের মজুরি বাবদ বরাদ্দ করা অর্থ শ্রমিকদের প্রাপ্যতার ভিত্তিতে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে যদি বাড়তি টাকা থাকে, তাহলে তা বন্ধ ঘোষিত পাটকলের শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটি বা পিএফের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
বেসরকারি পাটকল যখন লাভের মুখ দেখছে, সেখানে বছরের পর বছর ধরে লোকসানে ডুবছিল সরকারি পাটকল। গত ১০ বছরেই লোকসানের পরিমাণ ৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। আর পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে এক যুগের চেষ্টার ইতি টেনেছে সরকার। ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে ১ জুলাই পাটকল বন্ধ করা হয়েছে।
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ৭৮টি পাটকল নিয়ে বিজেএমসি গঠিত হয়। ১৯৮১ সালে মিলের সংখ্যা বেড়ে হয় ৮২টি। তৎকালীন এরশাদ সরকার ৩৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়। ৮টি পাটকলের পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীকালে বিশ্বব্যাংকের পাট খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১১টি পাটকল বন্ধ, বিক্রি ও একীভূত করা হয়। ২০০২ সালের জুনে বন্ধ হয় আদমজী জুট মিল। বর্তমানে বিজেএমসির আওতায় ২৬টি পাটকলের মধ্যে গত সপ্তাহ পর্যন্ত চালু ছিল ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও ৩টি ননজুট কারখানা।
সম্প্রতি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, পাটকলশ্রমিকদের জুন মাসের মজুরি ও নোটিশ মেয়াদের অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের ৬০ দিনের মজুরিও জুলাই মাসে পরিশোধ করা হবে। এ ছাড়া পিএফ, গ্র্যাচুইটি, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধাসহ অবশিষ্ট সব পাওনার ৫০ শতাংশ শ্রমিকের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে এবং বাকি ৫০ শতাংশ তাঁদের নিজ নামে সঞ্চয়পত্র আকারে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। সব পাওনা ২০১৫ সালের মজুরি কমিশনের ভিত্তিতে পরিশোধের কথা বলেন তিনি।
গোলাম দস্তগীর গাজী আরও জানান, ২০১৪ সাল থেকে অবসরে যাওয়া ৮ হাজার ৯৫৪ শ্রমিক তাঁদের সব বকেয়া এবং বন্ধের আগ পর্যন্ত ২৪ হাজার ৮৮৬ স্থায়ী শ্রমিকের বকেয়া মজুরি, পিএফ, গ্র্যাচুইটি ও তার সঙ্গে গ্র্যাচুইটির সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ হারে অবসায়ন সুবিধা একসঙ্গে শতভাগ পরিশোধ করা হবে। এ জন্য সরকারের বাজেট থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে।