মৌসুমি ফসল

পটুয়াখালীতে এবারও মুগ ডালের ভালো ফলন

এই জেলায় এবার ৮৬ হাজার হেক্টর জমিতে মুগ ডালের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন।

ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কবার্তা থাকায় ও বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে আসায় পটুয়াখালী জেলার কিষান–কৃষানিরা এখন মুগ ডাল ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এবারও সব উপজেলায় মুগ ডালের বাম্পার ফলন হওয়ায় তাঁরা ভীষণ খুশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার আটটি উপজেলায় চলতি বছরে মোট ৮৬ হাজার ৪৩১ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের মুগ ডালের আবাদ হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় মুগ ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। বর্তমান বাজারমূল্যে প্রতি কেজি ৬০ টাকা হিসাবে ধরলে এই ডালের দাম ৭৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা দাঁড়াবে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পটুয়াখালীর উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন।

পটুয়াখালী জেলায় প্রতিবছরই মুগ ডালের ফলন ভালো হয়। এখানকার কৃষকেরা খেতে কীটনাশক ব্যবহার করলেও সার ব্যবহার করেন না।
এ কে এম মহিউদ্দিন, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পটুয়াখালী

এবার পটুয়াখালী জেলায় সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে মুগের আবাদ হয়েছে সদর উপজেলায়। এরপর বাউফলে ১৬ হাজার ১৪১ হেক্টর ও গলাচিপায় ১৫ হাজার ৫০০ হেক্টরে মুগ ফসলের চাষ হয়েছে। অন্য উপজেলাগুলোর মধ্যে রাঙ্গাবালী উপজেলায় ১২ হাজার ৯৫০ হেক্টর, দশমিনায় ১২ হাজার ৪৬২ হেক্টর, মির্জাগঞ্জে ৪ হাজার ৯৮৫ হেক্টর, দুমকিতে ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর ও কলাপাড়ায় ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টরে মুগের চাষ করছেন কৃষকেরা।

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এই জেলায় ৯৭ হাজার ১৩২ হেক্টর জমিতে মুগ ডালের আবাদ হয়েছিল। ডাল উৎপাদন হয়েছিল ৯৭ হাজার ১৩২ মেট্রিক টন। এ বছর জেলায় ৮৬ হাজার ৪৩১ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের মুগের আবাদ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে।

গতকাল বোববার সকালে সরেজমিনে সদর উপজেলার শারিকখালী ও বদরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ ও শিশু–বৃদ্ধ নির্বিশেষে কৃষক পরিবারগুলোর প্রায় সবাই খোশমেজাজে খেত থেকে মুগ ডাল তুলছেন। কিষান–কৃষানিদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃষ্টি হওয়ায় খেতে পানি জমেছে। আবার আবহাওয়া অফিসও নিম্নচাপের পূর্বাভাস দিয়েছে। সে জন্য তাঁরা মনে করেন, দ্রুত তুলতে না পারলে খেতেই মুগ ডাল নষ্ট হয়ে যেতে পারে, সেই আশঙ্কায় বাড়ির সবাই মিলে কাজে নেমে পড়েছেন। এর মধ্যে নারীরা সকালে ও বিকেলে মুগ ফসল তুলতে মাঠে আসেন। অন্যরা প্রায় সারা দিনই মাঠে থাকেন।

কৃষক কালাম প্যাদা জানান, মুগ ফসলের আবাদে খরচ কম, আবার বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। এ বছর তিনি দুই একর জমিতে মুগের আবাদ করেছেন। এতে মোট খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ১২ মণ ডাল পাওয়ার আশা তাঁর, যা বিক্রি হতে পারে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা। কালাম প্যাদা বলেন, ডাল পরিপক্ব হয়ে গেছে। ঈদের কারণে এখন লোকজন পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাড়ির নারী, শিশু এবং বৃদ্ধরাও এসেছেন ডাল তুলতে। একই কথা জানান শারিকখালী গ্রামের কৃষক সুরেশ মিস্ত্রি।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকতেই খেত থেকে মুগ ফসল তুলতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে জেলার মুগ ফসলের ৫০ ভাগ তোলা হয়ে গেছে। কর্মকর্তারা বলেন, মুগ ফসল তোলার কাজে গ্রামের দরিদ্র নারীদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ কাজে নারীরাই বেশি পারদর্শী হয়। এ অঞ্চলে সাধারণত তিনবার খেত থেকে ডাল তোলা হয়। এর মধ্যে প্রথম দফায় নারী শ্রমিকেরা পাঁচ ভাগের এক ভাগ পান। এরপর দ্বিতীয় দফায় তিন ভাগের এক ভাগ ও শেষ দফায় দুই ভাগের এক ভাগ পেয়ে থাকেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পটুয়াখালীর উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আমন ফসল ওঠার পরই মুগের আবাদ শুরু হয়। পটুয়াখালী জেলায় প্রতিবছরই মুগ ডালের ফলন ভালো হয়। এখানকার কৃষকেরা খেতে কীটনাশক ব্যবহার করলেও সার ব্যবহার করেন না।

কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, মুগগাছের শিকড়ে রাইজরিয়াম নামের একধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকার ফলে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়। এতে করে পরবর্তী আবাদে কৃষকের রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেকাংশে কমে যায়।