চামড়াজাত পণ্য ও জুতা কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয়েছে ৭ হাজার ১০০ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ৩ হাজার ৫০০ টাকা, বাড়িভাড়া ১ হাজার ৭৫০, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৩৫০ ও খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা।
ন্যূনতম মজুরি ৭ হাজার ১০০ টাকা হলেও এই খাতের শিক্ষানবিশ শ্রমিকের মজুরি হবে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। শিক্ষানবিশকাল তিন মাস। তবে শ্রমিকের কাজ সন্তোষজনক না হলে তা আরও তিন মাস বৃদ্ধি করতে পারবেন নিয়োগদাতা।
নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী গত সপ্তাহে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে ‘চামড়াজাত পণ্য ও জুতা কারখানা’ খাতের ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করেছে। এতে শ্রমিকদের জন্য ছয়টি গ্রেড ও কর্মচারীদের জন্য চারটি গ্রেড রয়েছে। প্রতিটি গ্রেডের শ্রমিক-কর্মচারীর জন্য চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৩৫০ ও খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা অর্থাৎ ১ হাজার ৮৫০ টাকা রয়েছে। তবে বিভাগীয় শহরের জন্য বাড়িভাড়া মূল মজুরির ৫০ শতাংশ হবে। অন্যান্য এলাকার জন্য ৪০ শতাংশ।
কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার ৫২৫ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ৪ হাজার ৪৫০ টাকা। তবে শিক্ষানবিশ কর্মচারীদের মজুরি সর্বসাকল্যে ৬ হাজার টাকা। কর্মচারীদের শীর্ষ গ্রেডের মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা।
নতুন মজুরি–কাঠামোতে সহকারী অপারেটর, কাটিং, ফিটিং, আয়রনম্যানসহ বিভিন্ন পদের শ্রমিকদের ষষ্ঠ গ্রেডে রাখা হয়েছে। তাঁদের মোট মজুরি ৭ হাজার ১০০ টাকা। জেনারেল অপারেটর, ডেসপাচম্যান, সাপ্লাই লাইনিং, প্যাকিংম্যানসহ ২৫ পদের শ্রমিকেরা পঞ্চম গ্রেডে আছেন। তাঁদের মোট মজুরি ৭ হাজার ৭৭৫ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ৩ হাজার ৯৫০ টাকা। জুনিয়র অপারেটর, ডেসপাচম্যান, স্ক্রিন প্রিন্টারম্যানসহ ২৪ পদের শ্রমিকেরা চতুর্থ গ্রেডে আছেন। তাঁদের মজুরি ৮ হাজার ৫২৫ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ৪ হাজার ৪৫০ টাকা।
এ ছাড়া অপারেটরসহ ২২ পদের শ্রমিকেরা রয়েছেন তৃতীয় গ্রেডে। এই গ্রেডের মোট মজুরি ৯ হাজার ৩৫০ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ৫ হাজার টাকা। দ্বিতীয় গ্রেডে থাকা সিনিয়র অপারেটরসহ ১৮ পদের শ্রমিকদের মোট মজুরি ১০ হাজার ৫২০ টাকা। প্রথম গ্রেডের মোট মজুরি ১৩ হাজার ৫২০ টাকা। এই গ্রেডে রয়েছেন প্রধান মান নিয়ন্ত্রণকারী, লাইন লিডার ও স্যাম্পলম্যান।
অন্যদিকে কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার ৫২৫ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ৪ হাজার ৪৫০ টাকা। তবে শিক্ষানবিশ কর্মচারীদের মজুরি সর্বসাকল্যে ৬ হাজার টাকা। কর্মচারীদের শীর্ষ গ্রেডের মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা।
বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ৭ হাজার ১০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি কোনোভাবেই ন্যায়সংগত নয়। রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের চেয়ে জুতার কারখানার শ্রমিকের মজুরি কোনোভাবেই কম হতে পারে না। ২০১৮ সালে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করা হয়েছিল।আবুল কালাম আজাদ, সভাপতি, ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন
তৈরি পোশাকের পর দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত জুনে শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২২ কোটি ডলারের চামড়াজাত পণ্য ও ৪৭ কোটি ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের চামড়াজাত পণ্য ও ১০ কোটি ৫২ লাখ ডলারের চামড়া জুতা রপ্তানি হয়েছে।
চামড়াজাত পণ্য ও জুতা কারখানার শ্রমিকদের নতুন মজুরি–কাঠামোর বিষয়ে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ৭ হাজার ১০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি কোনোভাবেই ন্যায়সংগত নয়। রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের চেয়ে জুতার কারখানার শ্রমিকের মজুরি কোনোভাবেই কম হতে পারে না। ২০১৮ সালে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করা হয়েছিল।