>*যন্ত্রটি ১০০,৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট গুনে নিচ্ছে
*নোট আসল না জাল, তা-ও যাচাই করছে যন্ত্রটি
*অচল ও কম মানের নোট হলে তা ফেরত দিচ্ছে
*যন্ত্রে প্রতি সেকেন্ডে গোনা হচ্ছে আটটি নোট
ব্যাংকে টাকা জমা করতে এখন আর ব্যাংকিং সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। রাত কি দিন, যেকোনো সময়ই জমা দেওয়া যাচ্ছে টাকা। তাৎক্ষণিকভাবে তা জমা হয়ে যাচ্ছে ব্যাংক হিসাবে। এ জন্য ব্যাংক বন্ধ, না খোলা—তা জানার প্রয়োজন পড়ছে না। এমন সুবিধা নিয়ে দেশের পাঁচটি ব্যাংক ইতিমধ্যে ক্যাশ রি-সাইকেলার মেশিন বা সিআরএম চালু করেছে। যাতে টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি জমাও দেওয়া যাচ্ছে।
আর এসব সিআরএম ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট গুনে নিচ্ছে, আসল না জাল, তা–ও যাচাই করছে। কম মানের নোট ও অচল হলে তা ফেরত দিচ্ছে। এরপরই হিসাবে জমা হচ্ছে। আর জমার স্লিপে থাকছে টাকার নম্বরসহ কী পরিমাণ জমা হলো, তার হিসাব। এ যন্ত্রে প্রতি সেকেন্ডে গোনা হচ্ছে আটটি নোট।
নতুন এ সুবিধার ফলে সিআরএম–সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কার্যালয়ে গিয়ে টাকা জমার চাপ কমে গেছে। কারণ, গ্রাহকেরা এখন শাখায় না গিয়েই সিআরএমের মাধ্যমে টাকা জমা দিচ্ছেন। আর সেই টাকা জমা হচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে, ফলে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। তবে বর্তমানে সিআরএমের মাধ্যমে টাকা জমা বা উত্তোলনের ক্ষেত্রে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করতে হচ্ছে।
এটিএম ও সিডিএম সেবা
১৯৯২ সাল পর্যন্ত টাকা জমা ও উত্তোলনের জন্য ব্যাংক শাখা ছিল একমাত্র মাধ্যম। বাংলাদেশে ১৯৯২ সালে তৎকালীন এএনজেড গ্রিন্ডলেজ (বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংক প্রথম অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) বুথ স্থাপন করে। এ সময় তারা ডেবিট কার্ডের পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডও চালু করে। এরপর অন্য ব্যাংকগুলো এ সেবায় আসে।
ব্যাংক খাতে দীর্ঘ সময় টাকা জমা দেওয়ার জন্য শাখার ওপর নির্ভর করতে হয় গ্রাহকদের। ২০১০ সালের দিকে ব্যাংকগুলো টাকা জমা দেওয়ার মেশিন বসানো শুরু করে। যাকে বলা হচ্ছে ক্যাশ ডিপোজিট মেশিন (সিডিএম)। তবে এ সেবায় গ্রাহকেরা যন্ত্রে টাকা জমা দিলেও তাৎক্ষণিক হিসাবে জমা হয় না। ব্যাংক কর্মকর্তারা দিনে একবার জমাকৃত টাকা শাখায় নিয়ে জমা করেন। দুপুরের পর টাকা জমা হলেই তা পরের দিনের হিসাবে চলে যায়। বর্তমানে ১৩ ব্যাংক মিলে প্রায় ৬০০ সিডিএম বসিয়েছে। এ সেবায় শীর্ষে রয়েছে ডাচ্–বাংলা ও ইসলামী ব্যাংক। সিডিএম সেবা দেওয়া অন্য ব্যাংকগুলো হলো স্টান্ডার্ড চার্টার্ড, ইস্টার্ণ, ব্র্যাক, এনআরবি কমার্শিয়াল, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার, ট্রাস্ট, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এক্সিম, দি সিটি, স্টান্ডার্ড ও পূবালী ব্যাংক।
সিআরএম সেবায় স্বস্তি
তবে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা জমা না হওয়ায় গ্রাহকদের অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। এ সমস্যা সমাধানে ২০১৭ সালের জুনে দেশে প্রথম সিআরএম চালু করে সিটি ব্যাংক। আর গত বছরের শুরুতে সিআরএম চালু করে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল)। এখন পর্যন্ত পাঁচ ব্যাংক মিলে বসিয়েছে প্রায় ১৬০ সিআরএম। ব্যাংকগুলো হচ্ছে দি সিটি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সাউথইস্ট, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ও ইস্টার্ণ ব্যাংক। প্রতিটি সিআরএমই ব্যাংকের কোনো না কোনো শাখার সঙ্গে যুক্ত। জুনের মধ্যে দেশে সিআরএমের সংখ্যা সাড়ে ৩০০ ছাড়াবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। এরই মধ্যে ইসলামী ও ঢাকা ব্যাংক নতুন করে সিআরএম বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানা গেছে। ইউসিবিএল ইতিমধ্যে বসিয়েছে ১১২টি সিআরএম। দেশের সব বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের শাখার পাশে এ যন্ত্র বসিয়েছে ব্যাংকটি।
ইউসিবিএলের রিটেইল ব্যাংকিংয়ের প্রধান তৌফিক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের শেষ তিন মাসে সিআরএমে ৩৯ হাজার লেনদেন হয়েছে। এতে জমা হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। চলতি বছরে সিআরএমের ব্যবহার আরও বেড়েছে।
বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংক বসিয়েছে ৪০টি সিআরএম। ব্যাংকটি রাজধানীর পাশাপাশি বিভাগীয় ও জেলা শহরেও এ যন্ত্র বসিয়েছে। সাউথইস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাঈনুদ্দীন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা বিশ্বেই ডিজিটাল ব্যাংকিং চলছে। বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে। আমাদের সিআরএমে ভালো সাড়া মিলছে।’
সিটি ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। ব্যাংকটি প্রধান কার্যালয়ের নিচে, মতিঝিলের প্রধান শাখায়, বনানী ১১, সীমান্ত স্কয়ার ও যমুনা ফিউচার পার্কে সিআরএম বসিয়েছে। দৈনিক শতাধিক গ্রাহক এসব সিআরএমে টাকা জমা করছেন। যার বড় অংশই ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক। জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকদের সুবিধার্থে জুনের মধ্যে সিআরএম ১০টিতে উন্নীত করা হবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক তাদের বাংলামোটর কার্যালয়ে ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে সিআরএম বসিয়েছে। ব্যাংকটির বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থার (এডিসি) প্রধান রবিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে এরই মধ্যে সিআরএম চালু হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আরও চারটি সিআরএম বসানো হবে। গ্রাহকদের সুবিধার্থে সহজেই টাকা জমার এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
ইস্টার্ণ ব্যাংকও তাদের গুলশানের প্রধান কার্যালয়ের নিচে সিআরএম বসিয়েছে।
দাম–দর
একেকটি এটিএমের দাম গড়ে ৬-৭ লাখ। আর একটি সিআরএমের দাম প্রায় ২০ লাখ টাকা। এ জন্য ব্যাংকগুলো একটু ভেবেচিন্তে এগোচ্ছে।
বর্তমানে দেশে সিআরএম আমদানি ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জারা জামান টেকনোলজি। প্রতিষ্ঠানটির অপারেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান এস এম গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এ যন্ত্রের নানা সুবিধা আছে। আপাতত দেশের মধ্যে যেসব সুবিধা প্রয়োজন ও উপযোগী, তা–ই চালু করা হয়েছে।