আলুর দাম

নেওয়ার কথা ৩৫ টাকা, নিচ্ছে ৪৫

আলু
 ছবি: সংগৃহীত

আলুর সরকার নির্ধারিত দাম বাজারে কার্যকর হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। সরকার দাম বেধে দিয়েছিল কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে গত ২০ অক্টোবর আলুর কেজিপ্রতি দর হিমাগার পর্যায়ে ২৭ টাকা, পাইকারিতে ৩০ টাকা ও খুচরায় ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। এর আগে ৭ অক্টোবর খুচরায় সর্বোচ্চ দর ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

দ্বিতীয় দফা দাম নির্ধারণকালে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দুদিন পর থেকে বাজারে কম দামের আলু পাওয়া যাবে। আজ ঢাকার কয়েকটি বাজারে দেখা যায়, ছোট আলু কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা ও বড় আলু ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের আড়তে আজ বিকেলে আলু পাইকারি কেজিপ্রতি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেন বিক্রেতারা।

চলতি মাসের মাঝামাঝিতে বাজারে আলুর কেজিপ্রতি দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সে তুলনায় এখন দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা কম।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তালিকা অনুযায়ী, আজ ঢাকায় আলুর কেজিপ্রতি দর ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে তা ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা। যদিও এ দর বাজারে দেখা যায়নি। জনপ্রিয় দুটি ই–কমার্স সাইটে আলু কেজিপ্রতি ৪৯ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘আমরা যে দাম নির্ধারণ করেছি, তার যৌক্তিকতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। এখন বাজারে দামটি কার্যকর করতে বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালাচ্ছে।’

এদিকে ভোজ্যতেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলো মিলগেটে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম লিটারপ্রতি দুই টাকা কমিয়ে বিক্রির ঘোষণা দিলেও পাইকারি বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। বরং দাম কিছুটা বেড়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২২ অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মিলগেটে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম লিটারপ্রতি দুই টাকা কমিয়ে বিক্রি করবে বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। তবে বিজ্ঞপ্তিতে কত দাম হবে তা বলা হয়নি। অবশ্য ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, খোলা সয়াবিন লিটারপ্রতি ৯০ টাকায় বিক্রি করবেন তারা। ওই দিন পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে খোলা সয়াবিন তেলের সরবরাহ আদেশ (এসও) লেনদেন হয়েছিল লিটারপ্রতি ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে। আজ তা ৮৬ টাকা দরে বিক্রি হয়। ওদিকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ২২ অক্টোবর খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি সাড়ে ৮৪ টাকা ছিল। আজ বিক্রি হয় ৮৭ টাকা দরে।

ঢাকার কারওয়ান বাজারে আজ খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ৯৭ টাকার আশপাশে বিক্রি হয়। আর পাম সুপার তেল বিক্রি হয় ৯৪ টাকা লিটার দরে। কারওয়ান বাজারের আবদুর রব স্টোরের এক বিক্রেতা বলেন, খোলা সয়াবিনের দাম বাড়তি।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে ঢাকায় এক সপ্তাহে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি তিন টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে টিসিবি বলছে, এক সপ্তাহ আগে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৯২ থেকে ৯৭ টাকা। আজ তা ৯২ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়।

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা প্রথম আলোকে বলেন, মিলগেটে খোলা সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৯০ টাকা নির্ধারণের আগে পাইকারি বাজারে দাম কম ছিল। এরপর তা বেড়ে যায়।

বাজারে চীন, পাকিস্তান ও মিশরের পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এসব পেঁয়াজ দেশির তুলনায় কম দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে চীনা পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৭০ টাকার আশপাশে এবং দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করেন বিক্রেতারা।

ডিমের দাম কমছেই না। আজ ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম প্রতি ডজন (১২টি) ১১০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা দরে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। হাঁসের ডিমের ডজন ১৬৫ টাকা। বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৩৫ টাকা ও গরুর মাংস ৫২০ থেকে ৫৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

সবজির দাম এখনো চড়া। বিভিন্ন ধরনের সবজি কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে দাম কমতে পারে।

সার্বিক বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে আজ সকালে শেওড়াপাড়ার অলি মিয়ার টেক বাজারে কেনাকাটা করতে যাওয়া স্থানীয় বাসিন্দা মো. শামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ এখন খুব বিপদে রয়েছে। সংসারে যা বেশি লাগে, সবকিছুর দামই চড়া। তিনি বলেন, ‘তিন আটি লালশাক কিনলাম ৬০ টাকা দিয়ে। এটা স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুণ।’