এ সপ্তাহের সাক্ষাৎকার

নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে তাঁরা যা বললেন

>২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে গত বুধবার। সেখানে বেসরকারি খাতের জন্য ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমানো হলেও বাড়ানো হয়েছে সরকারি খাতের জন্য। মুদ্রার সরবরাহ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে সহায়তার কথা বলা হয়েছে নতুন মুদ্রানীতিতে। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব
আবুল কাসেম খান
আবুল কাসেম খান


বেসরকারি খাতের ঋণ যাতে সরকারি খাতে চলে না যায়

প্রথম আলো: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি কেমন হলো?
আবুল কাসেম খান: মুদ্রানীতিতে নতুন কিছু নেই, আগেরই ধারাবাহিকতা। বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। তবে এটা ৭ দশমিক ৮ থেকে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট। এখন লক্ষ রাখতে হবে, যাতে বেসরকারি খাতের ঋণ সরকারি খাতে চলে না যায়। এখন সরকারের বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলছে, আরও প্রকল্প আসছে। নির্বাচনের কারণে গত ছয় মাসে বেসরকারি খাত ঋণ কম নিয়েছিল, সরকারি খাত সেই ঋণ নিয়েছে। এখন কিন্তু ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করবেন, ঋণও নেবেন। ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে গেছে। ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ খেলাপি ঋণ তো অনেক বেশি। আশা করেছিলাম, ব্যাংক খাতের সুশাসন নিশ্চিতে ও খেলাপি ঋণ কমাতে বিশেষ উদ্যোগ থাকবে। মুদ্রানীতি ঘোষণায় তার কিছু দেখা যায়নি। আমরা অনেক দিন ধরে ঋণে এক অঙ্কের সুদ চেয়ে আসছি। এত খেলাপি ঋণের কারণে সব ব্যাংক তা করতে পারছে না।

প্রথম আলো: অর্থনীতি বড় হচ্ছে। শুধু ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভর করে কত দূর যাওয়া যাবে?
কাসেম খান: বাংলাদেশে অর্থায়নের প্রধান উৎস ব্যাংক খাত। এর বিকল্প খাত গড়তে গত মুদ্রানীতিতেও ঘোষণা ছিল। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পুরো অর্থনীতি এখনো ব্যাংক খাতের ওপর ভর করে বড় হচ্ছে। এখানে পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেট থেকে অর্থায়নের উৎস বাড়াতে হবে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশের দিকে যাচ্ছি, এ জন্য ব্যাংকের বিকল্প অর্থায়নের উৎসের উন্নতি ঘটাতেই হবে। আমরা অনেক দিন ধরেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অর্থায়ন নিয়ে কথা বলছি, কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ছোটদের ঋণ পেতে অনেক সমস্যা হয়, তারা জমি বা স্বর্ণ বিক্রি করে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যাংক এক গ্রাহককেই বেশি বেশি টাকা দিচ্ছে, বারবার দিচ্ছে। এটা যদি অনেক গ্রাহককে দেওয়া যায়, তাহলে কর্মসংস্থান বাড়বে।

প্রথম আলো: ব্যাংক খাত নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

কাসেম খান: ব্যাংকগুলো যাতে ভালো গ্রাহকদের ঋণ দেয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে খুব শক্তভাবে এর তদারকি করতে হবে। যাঁরা দোষী তাঁদের শাস্তি দিতে হবে। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিয়ে যদি কোনো উদাহরণ সৃষ্টি করা না যায়, তাহলে তো হবে না। সবাই ধারণা করে, দিন শেষে দোষী ব্যক্তিদের কিছুই হয় না। যাঁরা ইচ্ছে করে ব্যাংকের টাকা দিচ্ছেন না, তাঁদের গ্রহণযোগ্য বিচার করতেই হবে।

প্রথম আলো: মধ্যম আয়ের দেশ থেকে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা কি হচ্ছে? ব্যবসার পরিবেশ এখন কেমন?

কাসেম খান: দেশে ভালো ভালো বিনিয়োগ আসছে। চীন, জাপান বড় বিনিয়োগ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে অনেক বিনিয়োগ আসবে। টেক্সটাইল, পোশাক, যন্ত্রপাতি ছাড়াও মোটরসাইকেল, তথ্যপ্রযুক্তিতেও বিনিয়োগ হচ্ছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে। এসব কারখানার উৎপাদন শুরু হলে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হবেই, আরও বেশিও হতে পারে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নতি করতে সরকার নানা রকম উদ্যোগ নিচ্ছে, এসব প্রশংসনীয়। কিন্তু বাস্তবায়ন পরিকল্পনার মধ্যে রয়ে গেছে। চলতি বছরের শুরুতে এক দরজায় সেবা (ওএসএস) চালুর কথা ছিল, কিন্তু এখনো হয়নি। এটা হলে ব্যবসায় পরিবেশের বড় উন্নতি হবে।

প্রথম আলো: এক দরজায় সেবা না থাকায় কি সমস্যা হচ্ছে?

কাসেম খান: আমরা যাঁরা পুরোনো ব্যবসায়ী, সব কাজ করে নিতে পারছি। কিন্তু যাঁরা নতুন, তাঁদের জন্য তো পদে পদে সমস্যা। পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বের করতে তো অনেক সমস্যা। কর বিভাগের সমস্যা হচ্ছে। বিভিন্ন সেবা নিতে যে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়, তা তো কোনো কাগজ–কলমে লেখা থাকে না। কিন্তু টাকা আমাদের দিতেই হয়। এটা ওপেন সিক্রেট, সবাই জানে। এতে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ভালো কোম্পানিও এখন রাজস্ব বোর্ডের নিরীক্ষায় পড়ে যাচ্ছে, এ জন্য অনেক সময় দিতে হচ্ছে। কিছু না পেলে যাঁরা এসব আপত্তি তুলবেন, তাঁদেরও জবাবদিহি করতে হবে। জনগণের টাকায় সরকারি কর্মকর্তারা বেতন পান, কোনো কারণ ছাড়াই তো তাঁরা জনগণকে হয়রানি করতে পারেন না।