মোহাম্মদপুর চিলড্রেনস গার্ডেন স্কুলের ছাত্র মুমতাহিন ইসলাম বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছে বসুন্ধরা শপিং মলে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরুর আগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি কেনার বায়না ধরেছে ছয় বছরের মুমতাহিন। কয়েক দোকান ঘুরেও সবুজ রঙের জার্সিটি না মেলায় শিশুটির মন খারাপ। শেষমেশ লাল রঙের অ্যাওয়ে জার্সি কিনে দিলেন বাবা। সেই জার্সি পরে শিশুটির কী উচ্ছ্বাস!
শুরু হয়ে গেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ। আজ থেকে মাঠে নামবে দলগুলো। রাস্তাঘাটে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের জার্সি পরা কিশোর–তরুণ–যুবকদের দেখা মিলছে হরহামেশা। যতই দিন গড়াচ্ছে, বাড়ছে জার্সি বিক্রি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অফিশিয়াল জার্সি বিক্রির স্বত্ব দিয়েছে স্পোর্টস অ্যান্ড স্পোর্টস ডিজাইনকে। জার্সির দাম ১ হাজার ১৫০ টাকা। ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’স ও জেন্টল পার্কের শতাধিক আউটলেটে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশ দলের জার্সি। অনলাইনে ক্রিকশপ বিডি ও জার্সি ফ্রিক বিডিতেও পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া ডিমানির অ্যাপ ব্যবহার করেও কেনা যাচ্ছে জার্সি। আর সারা দেশে জার্সি ছড়িয়ে দিতে আলাদাভাবে কাজ করছে রবিন স্পোর্টস। প্রবাসী দর্শকদের কথা ভেবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে জার্সি বিক্রি করছে স্পোর্টস অ্যান্ড স্পোর্টস।
অনেকে আবার অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে জার্সিতে নিজের নাম লিখিয়ে নিচ্ছেন। জার্সি ফ্রিক বিডি থেকে নিজের নাম লিখিয়ে জার্সি কেনার সুযোগ আছে। অনেকে অঞ্জন’স ও জেন্টল পার্কে গিয়ে নির্ধারিত দামে কিনছেন জার্সি। কিন্তু গত কয়েক দিন মিরপুর, বসুন্ধরা শপিং মল, বেইলি রোডসহ বিভিন্ন এলাকার মার্কেটে ঘুরে দেখা গেল, জার্সির দাম নিয়ে অনেক ক্রেতাই অসন্তুষ্ট।
একটি ক্রীড়াসামগ্রীর দোকান থেকে ছোট ভাই তাসনিম ফেরদৌসের জন্য ৮০০ টাকায় সবুজ রঙের জার্সি কেনেন মুশফিক আল মুতাকাব্বির। যেটি দেখতে হুবহু অফিশিয়াল জার্সির মতো। সস্তায় জার্সি কিনতে পেরে খুশি মুশফিক বলেন, ‘এবার দুই ভাই একই সঙ্গে জার্সি পরে খেলা দেখব।’
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জিন্নাতুল মওলা পাইকারি দরে ১২টি জার্সি কিনেছেন। বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে খেলা দেখবেন। কম দামে জার্সি কিনে উচ্ছ্বসিত তিনি। বললেন, ‘আমাদের পক্ষে বিসিবির বেঁধে দেওয়া দামে জার্সি কেনা কঠিন। তাই তো এক বড় ভাইকে বলে হোল সেলে ৭৫০ টাকা করে জার্সিগুলো কিনেছি।’
জার্সি ফ্রিক বিডি থেকে নির্ধারিত দামে জার্সি কিনেছেন শাহজাহানপুরের তাইন রহমান। অন্যদের চেয়ে বেশি দামে কিনেও খুশি এই যুবক। বললেন, ‘জার্সির দাম বেশি হওয়ার নির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে। ক্রিকেটাররা যে জার্সি পরে খেলবেন, আমরা তো সেটাই পাচ্ছি। জার্সির দাম তাই বেশি।’ ধানমন্ডির আশরাফুল ইসলাম অবশ্য বেশি দাম দিয়ে জার্সি কিনতে চান না। এ জন্য সাধারণ আউটলেট থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে কিনেই খুশি। বাড়তি টাকা খরচ করে শুধু জার্সির পেছনে নিজের নামটা লিখিয়ে নিয়েছেন।
এর বাইরে বাজারে কম দামে মিলছে রেপ্লিকা জার্সি। পুরো বিষয় নিয়ে হতাশ স্পোর্টস অ্যান্ড স্পোর্টস ডিজাইনের কর্মকর্তা মেহতাব উদ্দিন আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আমি মোটেও সন্তুষ্ট না। আমরা জার্সি বিক্রির স্বত্ব কিনেছি যে আশায়, সেটা তো হচ্ছে না। মার্কেটে এত বেশি রেপ্লিকা জার্সি চলে এসেছে যে এগুলো করে কোনো লাভ নেই। পুরো ব্যাপারটা নিয়েই আমি হতাশ।’
মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বিপরীতে অঞ্জন’স–এর শোরুমে অফিশিয়াল জার্সি প্রচুর বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০টা জার্সি বিক্রি করছি। ঈদের কেনাকাটার সঙ্গে মানুষ জার্সিও কিনছে। খেলা শুরু হলে এই চাহিদা আরও বাড়বে।’
দাম যতই আকাশছোঁয়া হোক কিংবা মান নিয়ে যতই অভিযোগ থাকুক—মাশরাফিরা জিতলে সব ভুলে এরাই তো নেমে পড়বে আনন্দ মিছিলে।