ধান ও আম ছেড়ে কৃষক ঝুঁকছেন মাল্টা চাষে

পাঁচ বছরের ব্যবধানে পোরশায় এখন মাল্টার বাগান হয়েছে ২০০টি। প্রায় ১৫০ জন মালিক এসব বাগান করছেন।

নওগাঁর পোরশার তেঁতুলিয়া গ্রামের ওবায়দুল্লাহ শাহর বাগানের গাছে ঝুলছে মাল্টা

ধান ও আমের আবাদ ছেড়ে বিদেশি ফল মাল্টার চাষ? প্রথম প্রথম লোকসানের আশঙ্কায় চাষিরা এগোতে চাইছিলেন না। এমন অবস্থায় এগিয়ে এলেন শুধু একজন ওবায়দুল্লাহ শাহ। সেটি ২০১৬ সালের কথা। তিনি বাগানের অল্প জমিতে মাল্টা চাষ করলেন। ফলন ও দাম দুই–ই ভালো। এতে উৎসাহিত হলেন এলাকার অন্য চাষিরা। বদৌলতে নওগাঁর পোরশা উপজেলায় পাঁচ বছরে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার ২০০টি বাগান গড়ে উঠেছে। আর বাগানমালিকের সংখ্যা প্রায় ১৫০।

ওবায়দুল্লাহ শাহ বলেন, ‘আমার এক ভাগনে প্রথমে আমাকে মাল্টার বাগান করার পরামর্শ দেয়। এ কথা এলাকার অন্যদের জানালে তাঁরা উৎসাহ দেখাননি। আমি একাই আবাদ শুরু করি। সাফল্য দেখে পরে অন্যরা মাল্টা চাষের জন্য আমার কাছে পরামর্শ চাইতে আসেন।’

সরেজমিন সম্প্রতি পোরশার তেঁতুলিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে সারি সারি মাল্টাগাছ। ছোট ছোট গাছে ঝুলছে থোকা থোকা মাল্টা। একেকটি গাছে ১৫০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত মাল্টা ধরে আছে। গাঢ় সবুজ রঙের মাল্টাগুলোর কোনো কোনোটিতে হলুদাভ রং এসেছে। মানে মাল্টা পরিপক্ব হচ্ছে।

বাগানটির মালিক ওবায়দুল্লাহ শাহ। তিনি জানান, মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখালে উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে তাঁকে বারি মাল্টা-১ জাতের ৬০টি গাছের চারা দেওয়া হয়। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে একই জাতের আরও দেড় হাজার চারা আনেন তিনি। এসব চারা দিয়ে ৭ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তোলেন মাল্টার বাগান। এক বছরের মাথায় গাছগুলোয় ১০-১২টি করে মাল্টা ধরে। পরের বছর গাছে আরও বেশি ফল ধরে। ২০১৮ সাল থেকে বাগানের মাল্টা বিক্রি শুরু করেন। সে বছর আড়াই লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেন। গত বছর বিক্রি বেড়ে হয়েছে ৬ লাখ টাকা। এবারে একেকটি গাছ থেকেই দেড়-দুই মণ মাল্টা পাওয়ার আশা করছেন ওবায়দুল্লাহ। এ ছাড়া চলতি বছর নতুন করে আরও ছয় বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান করেছেন তিনি।

মাল্টা চাষে ওবায়দুল্লাহর সফলতা দেখে ২০১৮ সালে ২৬ বিঘা জমিতে ৭ হাজার মাল্টাগাছ লাগিয়েছেন সারাইগাছী গ্রামের ফরিদুল ইসলাম। এবারই প্রথম তিনি বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা বিক্রি শুরু করেছেন। ফরিদুল বলেন, ‘১০-১২ দিন হলো সংগ্রহ শুরু হয়েছে। প্রতিটি গাছে ১৫–২০ কেজি করে মাল্টা ধরেছে। পাইকারিতে প্রতি মণ মাল্টা ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি প্রথম বছরই ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার মাল্টা হবে। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫-৬ লাখ টাকা।’

বড়গ্রাম এলাকার মাল্টাচাষি আবদুস সবুর শাহ বলেন, ‘ধান ও আমের তুলনায় মাল্টা চাষ অনেক বেশি লাভের। যে ফসলে বেশি লাভ হবে, সবাই সেটি আবাদের চেষ্টা করে। এক বিঘা জমিতে ধান আবাদ করে প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, আমবাগান ৪০ হাজার টাকা আসতে পারে। আর এক বিঘা জমিতে মাল্টাবাগান করলে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের সম্ভাবনা থাকে। তাই অনেকেই ধান ও আম চাষ বাদ দিয়ে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন।’

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ‘চলতি মৌসুমে পোরশায় ১০২ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। সরাইগাছী, তেঁতুলিয়া ও বড়গ্রাম ছাড়াও নিতপুর, ঘাটনগর, তিলনা ও গাঙ্গুরিয়া এলাকায় মাল্টার বাগান বেশি। বর্তমানে দেড় শ মালিকের ২০০টির বেশি মাল্টাবাগান রয়েছে।’

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম প্রথম আলোকে বলেন, পোরশার মাটি মাল্টা চাষের উপযোগী। আকারে বড় ও সুমিষ্ট হওয়ায় এখানে মাল্টা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফলে আমের পর নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মাল্টা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে নানাভাবে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। এখানকার মাল্টা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে।