দেশ জয় করে সীমানা পেরিয়ে

রেফ্রিজারেটরের বাজারে ওয়ালটনই সেরা। তৈরির পর এখন কেবল বাজারে পাঠানোই বাকি। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
রেফ্রিজারেটরের বাজারে ওয়ালটনই সেরা। তৈরির পর এখন কেবল বাজারে পাঠানোই বাকি। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বৈশ্বিক বাজারে ইলেকট্রনিকসের অনেক বড় বড় নাম আছে। পৃথিবীর আনাচকানাচে বিশ্বখ্যাত এসব ব্র্যান্ডের পণ্য সুপরিচিত, বাংলাদেশেও সহজলভ্য। কিন্তু এ দেশে বাজার দখলের লড়াইয়ে সবাইকে টেক্কা দিচ্ছে ওয়ালটন। রেফ্রিজারেটরে বা ফ্রিজের বাজারে ওয়ালটনের হিস্যা ৭০ শতাংশের বেশি। অন্য ইলেকট্রনিক পণ্যেও কম যায় না তারা।

এই ওয়ালটন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড, উদ্যোক্তারা এ মাটির সন্তান, পণ্যও তৈরি হয় বাংলাদেশেই। কারখানায় কাজও করেন বাংলাদেশি শ্রমিকেরা। এ দেশের উদ্যোক্তারা যে ইলেকট্রনিকসের মতো উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য উৎপাদনের কারখানা করতে পারেন, বাজারের সিংহভাগ দখল করতে পারেন, তা প্রমাণ করেছে ওয়ালটন।

অবশ্য শুরুটা হয়েছিল বিদেশি পণ্য আমদানি করে। ১৯৯৯ সালে চীন থেকে আমদানি করা টেলিভিশন বিক্রির মাধ্যমে ওয়ালটন ইলেকট্রনিকসের বাজারে যাত্রা শুরু করে। লক্ষ্য ছিল একসময় দেশেই কারখানা করা। ওয়ালটনের উদ্যোক্তা প্রয়াত এস এম নজরুল ইসলাম সে লক্ষ্য পূরণে বেশি সময় নেননি। ২০০৫ সালের শেষ দিকে ওয়ালটন গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জমি কিনে কারখানার কাজ শুরু করে। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২০০৮ সালে, ফ্রিজ দিয়ে।

পাখির চোখে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্স। পুরো এলাকায় জমির পরিমাণ ৭৬৪ একর। ছবি: ওয়ালটনের সৌজন্যে

এরপর শুধু সামনে তাকানোর পালা। এখন ওয়ালটনের অধীনে প্রতিষ্ঠান আছে ১৫টির বেশি। তারা ফ্রিজের পাশাপাশি টেলিভিশন, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি), কম্পিউটার ও ল্যাপটপ, মুঠোফোন, গৃহস্থালি বিভিন্ন সরঞ্জাম, ইলেকট্রিক পণ্য, তার, রাসায়নিক, এলিভেটর বা লিফট, এলইডি বাতি ইত্যাদি তৈরি করে। টেলিভিশন বাজারে তাদের হিস্যা প্রায় ৪৫ শতাংশ। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের বাজারে ২৫ শতাংশের বেশি।

বিক্রিও দ্রুত বাড়ছে। এ বছর তারা ২০ লাখ ফ্রিজ বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করেছিল, ৮ মাসেই ১৬ লাখ বিক্রি হয়েছে। এসি বিক্রি বছর শেষে আগের বছরের তিন গুণে দাঁড়াবে। টেলিভিশনের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ১০০ শতাংশের কাছাকাছি।

ওয়ালটনে একদিন

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ওয়ালটনের সব কারখানা। পুরো স্থাপনার নাম ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্স। জমির পরিমাণ ৭৬৪ একর, যা প্রায় ১৪টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সমান। 

রাজধানী থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে গেলে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সের দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটারের কিছু বেশি। প্রাঙ্গণজুড়ে নানা ধরনের গাছপালা, খোলা জায়গা ও লেক মিলিয়ে মনোরম পরিবেশ। 

ফ্রিজ উৎপাদনেই ওয়ালটনের সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। চারটি ইউনিটে ফ্রিজ তৈরি হয়। পণ্য মোড়কীকরণের জন্য রয়েছে আলাদা ইউনিট। এ ছাড়া মাছ চাষসহ বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে। আছে হেলিপ্যাডও। ওয়ালটন খুব কম পণ্য বাইরে থেকে কেনে বা আমদানি করে। কারখানায় কর্মীদের খাওয়ার জন্য বিস্কুট, দুগ্ধজাত পণ্যও নিজেরাই তৈরি করে তারা। 

বাংলাদেশে তৈরি

ওয়ালটনের স্লোগান হলো ‘আমাদের পণ্য’। আর পাঁচজনের মতো আমারও ধারণা ছিল ওয়ালটন মনে হয় চীন থেকে পণ্য আমদানি করে শুধু জোড়া দেয়। ভুল ভাঙল কারখানায় গিয়ে। দেখা গেল, ফ্রিজ তৈরির জন্য যা কিছু লাগে, সবকিছুই তারা তৈরি করে। কাঁচামাল আসে বিদেশ থেকে। তাদের সবচেয়ে স্বকীয়তা কমপ্রেসার তৈরিতে। ওয়ালটনের দাবি, বিশ্বে মোট ১৪টি কমপ্রেসার কারখানা রয়েছে, যার একটি তাদের। 

ওয়ালটন মাদারবোর্ড তৈরির মতো প্রযুক্তিও রপ্ত করেছে। ব্যাটারিও তাদের কারখানায়ই তৈরি হয়। তবে টেলিভিশনের মনিটর ও ফোনের ডিসপ্লে তৈরি করে না। এগুলো উৎপাদন করে বিশ্বের গুটিকয় কোম্পানি। ফ্রিজ ছাড়াও টেলিভিশন, এসি, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ, মুঠোফোন, গৃহস্থালি বিভিন্ন সরঞ্জাম, ইলেকট্রিক পণ্য, তার, রাসায়নিক, এলিভেটর বা লিফট, এলইডি বাতি—এসব পণ্য বাংলাদেশেই তৈরি হয়। স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

ওয়ালটন নিজের পণ্যের নকশা ও উন্নয়ন নিজেই করে। গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগে বিশাল কর্মিবাহিনী রয়েছে তাদের। এরই মধ্যে একজন ই এম ইয়াং, যিনি কোরীয় নাগরিক। এর আগে ৩২ বছর স্যামসাংয়ের হোম অ্যাপলায়েন্স বিভাগে মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ওয়ালটনে এখন মান নিয়ন্ত্রণের কাজটি সামলাচ্ছেন। প্যানাসনিকের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে বাংলাদেশে এনে নকশা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব দিয়েছে ওয়ালটন।

ওয়ালটনের কারখানায় কাজ করছেন নারী শ্রমিকেরা

দেশজুড়ে ওয়ালটন, নজর বিদেশে

ওয়ালটন বিপণনজালও দেশজুড়ে বিস্তৃত। নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৫০টির বেশি, যাকে তারা ওয়ালটন প্লাজা বলে। পরিবেশক আছে ১২ হাজারের বেশি। 

ওয়ালটনের ব্যবস্থাপনা মনে করে, দেশের বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি সুউচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন নজর বিদেশে।

যেদিন ওয়ালটনের কারখানায় গেলাম, সেদিনই ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড হুন্দাইয়ের কাছে এক লাখ ফ্রিজ রপ্তানির চুক্তি করে ওয়ালটন। এখন মোট ২৫টি দেশে পণ্য রপ্তানি করে। বৈশ্বিক বাজারে ওয়ালটনের পদচিহ্ন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাদের বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা। পাশাপাশি তারা ইউরোপ ও সার্কভুক্ত দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশ কিছু ক্রেতা আসছে, যারা চীন থেকে আমদানিতে শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক পণ্য নিতে আগ্রহী। পণ্য বিক্রির জন্য তারা আমাজনের সঙ্গেও চুক্তি করেছে।

আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে ওয়ালটন এডওয়ার্ড কিম নামের একজন কোরীয় নাগরিককে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে, যিনি কোরীয় ইলেকট্রনিক ‘জায়ান্ট’ এলজির বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

‘আমরা ভালো আছি’

ওয়ালটনে এখন ২৫ হাজারের মতো মানুষ কাজ করেন, যাঁদের একজন কাকলি রানী ঘোষ। ২০১০ সালে একজন শ্রমিক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর তিনি এখন টেলিভিশন উৎপাদনের একটি লাইনের দলনেতা। 

দুই মেয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়ে। স্বামী ছোট ব্যবসায়ী। জানতে চাইলাম দিন কেমন চলছে। কাকলি রানীর জবাব, ‘আমরা ভালো আছি।’

কমপ্রেসার তৈরির কারখানা করতে একটি জার্মান কোম্পানির যন্ত্রপাতি কিনে এনেছিল ওয়ালটন। ১০০ জনের মতো কর্মীকে তারা প্রশিক্ষণে পাঠিয়েছিল জার্মানিতে। তাঁদেরই একজন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশলবিদ্যায় স্নাতকোত্তর করা রিজওয়ান আজিজ বলেন, ‘আমি সৌভাগ্যবান। কমপ্রেসার তৈরির প্রশিক্ষণ পেলে যন্ত্রকৌশলে অনেক কিছুই শেখা হয়ে যায়।’

 নানা ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির সঙ্গেও জড়িত ওয়ালটন। তবে এর প্রচার চায় না মালিকপক্ষ। একটি উদাহরণ দিতে রাজি করানো গেল। সেটি হলো, ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ তারকা হওয়ার অনেক আগে থেকেই তাঁকে খেলা ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বেশ ভালো অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দিত ওয়ালটন। এখন মিরাজ ওয়ালটনের ‘স্পোর্টস অ্যাম্বাসেডর’। 

ওয়ালটনের কারখানায় কাজ করছেন পুরুষ শ্রমিকেরা

বাংলাদেশের বিস্ময়

কারখানায় ঘুরতে ঘুরতে বিকেল হয়ে গেল। সন্ধ্যায় ঢাকায় ফেরার পথে মনে হলো, বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। পোশাক ছাড়াও নতুন যে কটি খাত উঠে আসছে, তার মধ্যে ইলেকট্রনিকস অন্যতম। এ খাতে নতুন একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হয়ে উঠছে বাংলাদেশের ওয়ালটন। 

একনজরে ওয়ালটন

উদ্যোক্তা
এস এম নজরুল ইসলাম। তিনি ৯৩ বছর বয়সে ২০১৭ সালে ইন্তেকাল করেন।

প্রতিষ্ঠান
ওয়ালটনের অধীন বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের কারখানা আছে ১৫টির বেশি। ফ্রিজ উৎপাদনের ইউনিট সবচেয়ে বেশি।  

কারখানা
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে। নাম ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্স। জমির পরিমাণ প্রায় ৭৬৪ একর।  

পণ্য
ফ্রিজ, টেলিভিশন, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ, মুঠোফোন, গৃহস্থালি সরঞ্জাম, ইলেকট্রিক পণ্য ইত্যাদি। 

দেশের বাজার
ফ্রিজের বাজারে হিস্যা প্রায় ৭৪ শতাংশ। অন্য পণ্যেও শীর্ষস্থানীয়। ৩৫০টির বেশি ওয়ালটন প্লাজা, ১২ হাজারের বেশি পরিবেশক ও অন্যান্য দোকানে ওয়ালটন পণ্য বিক্রি হয়।

রপ্তানি
ওয়ালটন পণ্য পৌঁছে গেছে ২৫টি দেশে। সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট আমাজনের সঙ্গে পণ্য বিক্রির চুক্তি।

কর্মী
ওয়ালটনে কাজ করে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী।

স্লোগান
‘আমাদের পণ্য’। 

সাক্ষাৎকার

যেতে চাই বিশ্বের সেরার তালিকায়

ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলামের সাত সন্তানের একজন এস এম আশরাফুল আলম। তিনি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ালটন কত দূর যেতে চায়, তা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ

প্রথম আলো: ওয়ালটনের শুরুর কথা বলুন। কীভাবে যাত্রা শুরু হলো। কত বছর হলো।
আশরাফুল আলম: এ বছর আমরা ২০ বছর পূর্ণ করলাম। ১৯৯৯ সালে ওয়ালটন আমদানি করা ইলেকট্রনিক পণ্যের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। এত বছরের চেষ্টায় আমরা একটা অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এখন ওয়ালটন প্রচুর পণ্য উৎপাদন করে। দেশের বাজারের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে। আমরা ভবিষ্যতে বেশি গুরুত্ব দিই। আগামী দিনগুলোতে রপ্তানিতে ওয়ালটন বেশ জোর দিচ্ছে।

প্রথম আলো: আপনারা একটি বড় কোম্পানির সঙ্গে ফ্রিজ সরবরাহের চুক্তি করলেন। 
আশরাফুল আলম: আমাদের চুক্তিটি হয়েছে হুন্দাইয়ের সঙ্গে। তারা ভারতের বাজারে ১ লাখ ফ্রিজ নেবে। কয়েক দিনের মধ্যে আরও একটি ভারতীয় বড় কোম্পানির সঙ্গে আমাদের চুক্তি হবে, যারা বৈশ্বিকভাবে সুপরিচিত। এ রকম বিশ্বের বড় আরও ১০টি কোম্পানি বাংলাদেশে আমাদের সঙ্গে পণ্য কেনার চুক্তি করতে আসবে। আমি এখনই তাদের নাম বলছি না। এসব কোম্পানিকে মানসম্মত পণ্য সরবরাহ করা, দেশের সুনাম রক্ষা করাই এখন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা সেটা পারব। 

প্রথম আলো: বাংলাদেশের ফ্রিজের বাজারে ৭৪ শতাংশ হিস্যা ওয়ালটনের। কীভাবে সম্ভব হলো? 

আশরাফুল আলম: আমাদের একটা স্লোগান আছে, ফিট ফর অল (সবার উপযোগী)। আমরা সবার চাহিদা, পছন্দ ও প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য তৈরি করার চেষ্টা করি। দামটাও সাধ্যের মধ্যে রাখার চেষ্টা করি। এ দেশের মানুষ ভালো পণ্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দামে কিনতে চায়। 

বাংলাদেশে মানুষ বৈচিত্র্যময় পণ্য কেনার চেষ্টা করে। আমরা সেটা পূরণ করার চেষ্টা করি। আমাদের এখন ৭৯টি রঙের ফ্রিজ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি মাসে অন্তত ২০টি করে রং আমরা পাল্টাই। আমরা সব সময় চেষ্টা করি, যারা ফ্রিজ পাল্টাতে চায়, তারা যেন আবার ওয়ালটনই কেনে। ওয়ালটন যদি কখনো মানুষকে নতুন কিছু দিতে না পারে, পণ্য মানুষের আগের চেয়ে বেশি ভালো না লাগে, তাহলে সেদিনই কোম্পানির মরণযাত্রা শুরু হবে বলে আমি মনে করি।

প্রথম আলো: আপনাদের পণ্য কতটা টেকসই? 

আশরাফুল আলম: ওয়ালটন যদি কোনো ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কোথাও নজর দেয় সেটা মান। কয়েক বছর আগে আমরা একটি ফ্রিজের মডেল করেছিলাম। তিন বছর ধরে সেটি দেখে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি বলে বাজারে ছাড়িনি। 

প্রথম আলো: বিদেশি কোম্পানিগুলো গবেষণা ও পণ্য উন্নয়নে প্রচুর ব্যয় করে। ওয়ালটন এ ক্ষেত্রে কতটুকু জোর দেয়? 

আশরাফুল আলম: গবেষণা ও পণ্য উন্নয়ন যেকোনো শিল্পের মূল জায়গা। এখানে শক্তি অর্জন করতে পারলে কোম্পানি এগিয়ে যায়। আমরা যে খাতে মূল ব্যবসা করি, এ খাতে আমাদের চেয়ে বড় গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ আছে বিশ্বের পাঁচ থেকে ছয়টি কোম্পানির। 

প্রথম আলো: ফ্রিজের বাইরে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি), টেলিভিশন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবসা কেমন?

আশরাফুল আলম: দেশে এসির চাহিদা বাড়ছে। আমাদের ব্যবসাও বাড়ছে। ওয়ালটনের টেলিভিশন কারখানা খুবই সমৃদ্ধ, এটা খুব কম দেশেই আছে বলে আমার ধারণা। আমরা শুধু ওপেন সেল (মনিটর) তৈরি করি না, কারণ সেটা তৈরি করতে বিপুল চাহিদার প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া মাদারবোর্ড, রিমোট, স্পিকার, কেসিং—সবকিছুই আমরা তৈরি করি। 

প্রথম আলো: আমি দেখলাম আপনারা কমপ্রেসারও তৈরি করছেন। 

আশরাফুল আলম: বিশ্বে মোট ১৪টি কারখানা আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে একটি। এশিয়ায় আমরা অষ্টম দেশ হিসেবে কমপ্রেসার কারখানা করেছি। আমরা এখন কমপ্রেসার রপ্তানি করছি। আমাদের কমপ্রেসার মানের দিক দিয়ে খুবই ভালো। বিশ্বের সবচেয়ে কম শব্দ উৎপাদনকারী কমপ্রেসার তৈরি করি। সাধারণত একটি কমপ্রেসার ৩৮-৪০ ডেসিবল শব্দ উৎপাদন করে। ওয়ালটনের কমপ্রেসার করে ২৮-৩০ ডেসিবল। আমাদের কমপ্রেসার তৈরি হয় জার্মান প্রযুক্তিতে। 

প্রথম আলো: ওয়ালটন ভবিষ্যতে কত দূর যেতে চায়? 

আশরাফুল আলম: আমরা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিকস কোম্পানি হতে চাই। একসময় আমরা বলেছিলাম, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রনিকস কোম্পানি হবে ওয়ালটন। অনেকেই বিশ্বাস করতে চায়নি। এখন বলছি, বিশ্বের সেরার তালিকায় যেতে চাই। অনেকে হাসবে। কিন্তু স্বপ্ন আমাদের ঘুমাতে দেয় না।