প্রাইজবন্ড

দুই বছরের মধ্যে না নিলে পুরস্কারের টাকা তামাদি

সমাজের বড় একটা অংশই ভাগ্যে বিশ্বাস করে। ভাগ্যের ওপর আস্থাশীল মানুষের জন্যই দেশে প্রাইজবন্ড আকারে একটা সঞ্চয় কর্মসূচি চালু রয়েছে ১৯৭৪ সাল থেকে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে সঞ্চয়প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য এটি চালু করা হয়। সরকার পরিচালিত এ সঞ্চয় কর্মসূচির নাম ‘বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড’। এটি বিক্রি করে সরকার জনগণের কাছ থেকে সরাসরি ঋণ নেয়। প্রাইজবন্ড মূলত জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের একটি আর্থিক পণ্য। তবে এর সবকিছু দেখভাল করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানে ১০০ থেকে ৪০ হাজার রুপি মূল্যমানের ৮ ধরনের প্রাইজবন্ড থাকলেও বাংলাদেশে ২৩ বছর ধরেই রয়েছে শুধু একটি—১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড। শুরুর দিকে ১০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড ছিল দেশে। গত শতকের আশির দশকে ৫০ টাকা মূল্যমানের এবং নব্বইয়ের দশকে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু করা হয়। এখনো এটিই আছে।

১০০ টাকা মূল্যমানের এ প্রাইজবন্ডের ড্র বছরে চারবার অনুষ্ঠিত হয়। তারিখগুলো হচ্ছে ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই ও ৩১ অক্টোবর। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে গঠিত একটি কমিটি ড্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে। তবে কেনার দুই মাস পার হওয়ার পর প্রাইজবন্ড ড্রয়ের আওতায় আসে। নতুন কেনা প্রাইজবন্ডের পাশাপাশি আগে কিনে রাখা প্রাইজবন্ডও ড্রয়ের আওতায় থাকে।

প্রাইজবন্ডে প্রতি সিরিজের জন্য ৪৬টি পুরস্কার রয়েছে, যার মূল্যমান ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রথম পুরস্কার ১টি ৬ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ১টি ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার ২টি ১ লাখ টাকা করে, চতুর্থ পুরস্কার ২টি ৫০ হাজার টাকা করে এবং পঞ্চম পুরস্কার ৪০টি ১০ হাজার টাকা করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ভাগ্য ফেরানোর জন্য প্রবল আগ্রহ নিয়ে অনেকে প্রাইজবন্ড কিনলেও ড্রয়ের ফলাফল মিলিয়ে দেখার ব্যাপারে অনেকের আলস্য থাকে। গাফিলতি করে অনেকেই প্রাইজবন্ডের নম্বর মিলিয়ে দেখেন না। ফলে পাওয়া পুরস্কারও নিতে পারেন না অনেকে, যদিও ড্র অনুষ্ঠানের দুই বছর পর্যন্ত পুরস্কারের টাকা দাবি করার সুযোগ রেখেছে সরকার। এর মধ্যে কেউ দাবি না করলে পুরস্কারের অর্থ তামাদি হয়ে সরকারি কোষাগারে ফেরত যায়।

ড্রয়ের পর মূল বন্ডসহ নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে বিজয়ীকে পে-অর্ডার দেওয়া হয়। পুরস্কারের টাকার ওপর সরকারকে উৎসে কর দিতে হয় ২০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৫ কোটি পিসের মতো প্রাইজবন্ড রয়েছে।

পুরস্কার বন্ড ও লটারি বন্ড নামেও পরিচিত এই প্রাইজবন্ড। সুদের কোনো ব্যাপার নেই বলে একে কেউ কেউ সুদবিহীন বন্ডও বলে থাকেন। যেকোনো সময় এ প্রাইজবন্ড ভাঙিয়ে টাকা ফেরত নেওয়া যায়। ভাঙানো ও কেনা—দুটোই করা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ক্যাশ অফিস, যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে।

এদিকে প্রাইজবন্ডের পুরস্কার নিয়ে একটি অসাধু চক্র কাজ করছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর একটি চিঠি দিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি বলেন, প্রায়ই দেখা যায়, প্রাইজবন্ডের লটারিতে পুরস্কার বিজয়ী ব্যক্তি নিজে পুরস্কারের অর্থ গ্রহণ না করে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। এভাবে ওই ব্যক্তি অবৈধ অর্থ বৈধ করার সুযোগ পেয়ে যান। এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা দরকার।

এ ধরনের কাজ বন্ধ করতে পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তিকে প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নিকটস্থ ব্যাংক বা ডাকঘরে লিখিতভাবে আবেদন করার বিধান চালুর পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। নিয়মটি অবশ্য আগের মতোই আছে।