দুই পক্ষেরই হাতিয়ার গ্রাহকেরা

দুই মোবাইল ফোন অপারেটরের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের পাওনা আদায়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়ার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে মূলত ‘জিম্মি’ হয়েছেন দেশের মুঠোফোন গ্রাহকেরা। তাঁরা কলড্রপের শিকার হচ্ছেন, অনেক জায়গায় ইন্টারনেটের গতি কমে যাওয়ার অভিযোগও আসছে। অন্যদিকে সেই গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা বলেই ব্যান্ডউইথের বাধা কাটাতে চাচ্ছে দুই অপারেটর।

মাঝখানে ক্ষতির মুখে পড়ছেন মুঠোফোন গ্রাহকেরা। প্যাকেজ কিনে ঠিকমতো ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারার ক্ষতিপূরণ কী হবে, আদৌ মিলবে কি না, সে বিষয়েও গ্রাহকদের প্রতি স্পষ্ট কোনো কোনো নির্দেশনা নেই বিটিআরসি বা অপারেটরদের। 

নিজের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে টেলিযোগাযোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে তাঁর একটি পোস্ট-পেইড সংযোগে ৩০ গিগাবাইট ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়া আছে। কিন্তু ইন্টারনেটে গতি না থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘অপারেটর যে ব্যান্ডউইথ আছে, তা দিয়ে শহরে ভালো সেবা নিশ্চিত করছে। বঞ্চিত হচ্ছে মফস্বল ও গ্রামের মানুষ। বিটিআরসির পদক্ষেপ কার্যত ডিজিটাল বিভাজন তৈরি করছে।’

বিটিআরসি ৪ জুলাই ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা পাওনা আদায়ের পদক্ষেপ হিসেবে গ্রামীণফোনের ৩০ শতাংশ ও রবি আজিয়াটা বারহাদের ১৫ শতাংশ ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ১৯৯৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গ্রামীণফোনের ওপর নিরীক্ষা করে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা পাওনা দাবি করছে বিটিআরসি। রবির কাছে দাবি করা হচ্ছে ৮৬৭ কোটি টাকা। এ অর্থের মধ্যে বিলম্বের মাশুল ও সুদও ধরা আছে। 

>গ্রামীণ ও রবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা পাওনা
বিটিআরসি ব্যান্ডউইথ কমানোয় কলড্রপ ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ভোগান্তিতে গ্রাহকেরা


প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যান্ডউইথ না থাকলে কলড্রপ বাড়ে এবং ইন্টারনেটের গতি কমে যায়। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহক। বিটিআরসির পদক্ষেপের পর গ্রামীণফোন ও রবি গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছে, তাতে গ্রাহকের ভোগান্তির কথাই বলা হয়েছে। বিটিআরসি ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়ার পর গ্রামীণফোন ও রবি সেবা বিঘ্নের কথা জানিয়ে গ্রাহকের খুদে বার্তা পাঠিয়েছে। কিন্তু বিঘ্ন হলে গ্রাহক কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন কি না, তা বলা হয়নি। 

গ্রাহককে ভোগান্তিতে না ফেলে পাওনা আদায়ে অন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ ছিল কি না, জানতে চাইলে আইনজীবী অনিক আর হক বলেন, ‘অন্য অনেক উপায় ছিল। এখন যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে অপারেটরের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। ভুগতে হচ্ছে গ্রাহককে।’ তিনি বলেন, বিটিআরসি পাওনা আদায়ে পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি আইনের আওতায় সার্টিফিকেট মামলা করে দিতে পারে। নইলে অপারেটরের সরঞ্জাম আমদানি বন্ধ করে দিতে পারে।

সালিসের নোটিশ নিষ্পত্তির চিঠি

গ্রামীণফোন ও রবি চায় পাওনার বিষয়টি সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হোক। এ নিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সালিসি ব্যবস্থায় যাওয়ার নোটিশ দিয়েছে। 

সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে বিটিআরসিকে একটি চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, রবির সালিসের নোটিশ নিষ্পত্তির আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগের মাধ্যমে বলেন, বিটিআরসির আইনে সালিসের সুযোগ নেই। অপারেটররা চাইলে এ বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে। বিটিআরসির দরজা খোলা।