বৈদেশিক মুদ্রাবাজার

দাম কিছু কমলেও সংকট কাটেনি ডলারের

দেশে এখন আমদানির জন্য যে পরিমাণ অর্থ বা ডলার খরচ হচ্ছে, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে তা মিটছে না। এর ফলে সংকট তৈরি হয়েছে।

ডলার
ছবি: সংগৃহীত

খোলাবাজারে ডলারের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এক দিনের মধ্যে কমে এসেছে। রাজধানীতে গতকাল বুধবার প্রতি ডলার ১০০ টাকা ও তার নিচে বেচাকেনা হয়েছে। ডলারের সরবরাহ না থাকায় তেমন লেনদেন হয়নি, চাহিদাও তেমন ছিল না।

এদিকে ব্যাংকগুলো এখনো ৯৫ টাকার বেশি দামে প্রবাসী আয় আনছে ও রপ্তানি বিল নগদায়ন করছে। ফলে আমদানিকারকদের প্রতি ডলারের জন্য ৯৬-৯৭ টাকা গুনতে হচ্ছে। এ সময়ে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন দেশের বাইরে ১ কোটি ১০ লাখ ডলার লভ্যাংশ পাঠাবে। এ জন্য কয়েকটি ব্যাংক আগ্রহ প্রকাশ করেছে, সেখানে প্রতি ডলারের দাম ধরা হয়েছে ৯৮ টাকা, যা মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

এদিকে এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) নির্বাহী কমিটির সভা রাজধানীর কাকরাইলের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান। সভায় ডলার সরবরাহের পাশাপাশি আরও কিছু সুপারিশ আকারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

■ ব্যাংকগুলো এখনো ৯৫ টাকার বেশি দামে প্রবাসী আয় আনছে ও রপ্তানি বিল নগদায়ন করছে। ফলে আমদানিকারকদের প্রতি ডলারের জন্য ৯৬-৯৭ টাকা গুনতে হচ্ছে। ■ যাঁরা বিদেশ সফরে যেতে চান, তাঁরা নগদ ডলারের পরিবর্তে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন।

দেশে এখন আমদানির জন্য যে পরিমাণ অর্থ বা ডলার খরচ হচ্ছে, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে তা মিটছে না। এর ফলে সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতি মাসে প্রায় ১০০ কোটি ডলার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আমদানি ব্যয় বেড়েছে জ্বালানি, ভোগ্যপণ্য, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া বাড়ার কারণে। ডলার-সংকট মোকাবিলায় বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক, আর সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাতিল করেছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১০২ টাকায় পৌঁছায়। তবে গতকালই তা আবার কমে আসে।

বাজার পরিস্থিতি

উত্তরার একটি মানি চেঞ্জারের কর্ণধার আরিফুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ডলার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মতিঝিলের ডলার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত ডলার কেনার জন্য অনেকেই এসেছেন। প্রয়োজন ছাড়াও অনেকে ডলার কিনে সংগ্রহ করছেন। বেশি দাম পেলে ছেড়ে দেবেন। ফলে সংকট বেড়েছে। আর বুধবার চাহিদাও তেমন ছিল না। পুলিশের নজরদারিও বেড়েছে। ফলে দাম না বেড়ে কমে গেছে। ৯৮ টাকায় কিনে ৯৯-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এদিকে যেসব ব্যাংক প্রবাসী আয়ে ভালো দাম দিচ্ছে, তারা প্রবাসী আয় বেশি পাচ্ছে। বেসরকারি খাতের বড় একটি ব্যাংক গতকাল ৮৯ টাকা দরে প্রবাসী আয় সংগ্রহের বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউস ও ব্যাংকগুলোকে জানায়। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে প্রতি ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা।

একই অবস্থা রপ্তানি বিল নগদায়নের ক্ষেত্রেও। যে ব্যাংক নগদায়নে বেশি দাম দিচ্ছে, রপ্তানিকারকেরা সেদিকে ছুটছেন। এই সুবিধা পাচ্ছেন বড় রপ্তানিকারকেরা। আর আমদানিকারকদের এর চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনে দায় শোধ করতে হচ্ছে। এতে ডলারের দাম ৯৭ টাকা পর্যন্ত উঠছে।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আলম খান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডলারের চাপ কমেনি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি নিজেদের আয় দিয়ে ব্যয় মেটানোর। সমস্যা হচ্ছে বেশি দামের আশায় অনেকে রপ্তানি বিল ধরে রাখছে।’

সরকারি আমদানি বিলের দায় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল রিজার্ভ থেকে ৯ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কমে হয়েছে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

ব্যাংকাররা পরামর্শ দিয়েছেন, যাঁরা বিদেশ সফরে যেতে চান, তাঁরা নগদ ডলারের পরিবর্তে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে খরচে প্রতি ডলারের দাম ৮৮ টাকার নিচে। তাহলে ডলারের জন্য ছোটাছুটি করতে হবে না।