চামড়ার সবচেয়ে বড় আড়ত রাজধানীর পোস্তা। এই আড়তের ব্যবসায়ীরা এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ গরুর চামড়া কিনেছেন। এসব চামড়ার লবণ মেশানোর কাজ চলছে। সংগৃহীত এসব চামড়ার বেশির ভাগই ঢাকার, আশপাশের রয়েছে অল্প কিছু। লবণ মেশানোয় এসব চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম। ট্যানারি মালিকেরা আগামী সপ্তাহ থেকে এই লবণ মেশানোর চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে কেনা শুরু করবেন।
চামড়ার আড়তদারদের দাবি, এবার ঢাকা ও এর আশপাশে কোনো চামড়া নষ্ট হয়নি। দামের কম-বেশি হয়েছে। গতবার অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছিল। যেসব সমস্যা হয়েছে, তা ঢাকার বাইরের।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোস্তার আড়তের ব্যবসায়ীরা আরও ২০-২৫ হাজার চামড়া কিনতে পারবে। এসব চামড়া লবণ মেশানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। এবার চামড়া নিয়ে বড় কোনো সমস্যা হয়নি।’
তাহলে চামড়া দাম এত কম কেন জানতে চাইলে আফতাব খান বলেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনে। তাদের অভিজ্ঞতা কম। ৮টা চামড়া কিনতে ৪ জন শ্রমিক প্রয়োজন পড়ে। আবার এসব চামড়ায় লবণ যুক্ত করতে হয়। এ জন্য খরচ তুলতে গিয়ে দাম কমে গেছে। আমাদের লোকবল কম, তাই তাদের ওপর নির্ভর করতেই হয়।’
জানা গেছে, রাজধানীতে গরুর চামড়া আকারভেদে ১৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ২ থেকে ১০ টাকায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে চামড়াশিল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ধরা হয়। আর ঢাকার বাইরে ধরা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া গত বছরের প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৩ থেকে ১৫ টাকা করা হয়। আবার দরপতন ঠেকাতে ২৯ জুলাই কাঁচা ও ওয়েট-ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
বড় আকারের গরুর চামড়া গড়ে ৩৫-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া গড়ে ২৫-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া গড়ে ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। তাতে সরকারের নির্ধারিত দাম হিসাব করলে বড় চামড়া কমপক্ষে দেড় হাজার টাকা, মাঝারি চামড়া হাজার টাকা ও ছোট চামড়ার দাম হয় কমপক্ষে ৬০০ টাকা। তার থেকে প্রক্রিয়াজাত, শ্রমিকের মজুরি ও আড়তদারের মুনাফা বাদ দিলেও যা দাঁড়ায় তার অর্ধেক দামেও চামড়া বিক্রি হয়নি।
তবে চামড়া ঠিকই কিনেছেন আড়তদার ও ট্যানারি মালিকেরা। পোস্তাতেই গতবারের তুলনায় বেশি চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যদিও গতবারের চেয়ে এবার কোরবানি কম হওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকেরা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম কোরবানি হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি কোরবানি হয়। আমরা আগামী শনিবার থেকে সরকার নির্ধারিত দামে লবণযুক্ত চামড়া কেনা শুরু করব। যারা কম দামে চামড়া কিনেছে, তারা আমাদের পরিচিত নয়।
এদিকে চামড়া নিয়ে এমন ঘটনা ঘটবে, এটা পূর্বনির্ধারিত ছিল। ট্যানারি মালিকদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকই এখন পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। এর কারণ, চামড়া খাতের এক ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছে জনতা ব্যাংকের আটকে গেছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকই চামড়া কিনতে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়ে থাকে। ক্রিসেন্টের কারণে ব্যাংকটি চামড়ার ঋণে সতর্ক হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, চামড়া কিনতে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করে জনতা ব্যাংক। তবে এবার ব্যাংকটি চামড়া কিনতে কোনো ঋণ দেয়নি। আমরা আশা করছি, অফিস খোলার দু-এক দিনের মধ্যে ব্যাংকটি টাকা দেবে। যেসব ট্যানারি ঋণ পাবে না, তারা চামড়া কিনতে পারবে না।