করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যবসা–বাণিজ্য। চলতি বছর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি যেমন হয়েছে, তেমনি কাঁচমালের মূল্যবৃদ্ধি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে। আবার নতুন করে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে অমিক্রন। বছরটি কেমন গেল, তা নিয়ে শিল্প ও ব্যবসা–বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছয়জনের অভিমত ছাপা হলো আজ। কথা বলেছেন শুভঙ্কর কর্মকার।
ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ালেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চলতি বছর আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল পোশাকের দাম। সেটি বাড়াতে আমরা ক্রেতাদের সঙ্গে দর-কষাকষি করেছি। যখন ক্রয়াদেশ বেশি থাকে, তখন বাছাই করার সুযোগ থাকে। ফলে কম দামের পোশাক আমরা বাদ দিতে পারছি। আমরা আমাদের মার্চেন্ডাইজারদের দর-কষাকষি করতে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছি। পুরোনো ডিজাইনের (নকশা) পোশাকের দাম বাড়াতে না পারলেও নতুন ডিজাইনের ক্ষেত্রে আমরা পেরেছি।
আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—কাঁচামালের সরবরাহব্যবস্থা খুবই খারাপ। দাম অনেক বেড়ে গেছে। আবার রপ্তানিতে যেটি সমস্যা হচ্ছে, পণ্য পাঠাতে এক-দুই সপ্তাহ দেরি হলেই ক্রেতারা ওই পণ্য উড়োজাহাজে পাঠাতে বলছে। করোনার পর উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানোর খরচ আগের চেয়ে চার গুণ বেড়ে গেছে। আগে প্রতি কেজি পোশাক ৩ ডলারে পাঠানো গেলেও বর্তমানে ১২ ডলার দিতে হচ্ছে। উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে হলে ক্রেতাদের সঙ্গে আবার দর-কষাকষি করতে হয়। তারা সব সময় এই খরচ আমাদের ঘাড়ে চাপাতে চায়। তবে পোশাকের ব্যবসায় যে মার্জিন, তাতে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে বলাই উচিত নয়। বর্তমানে ক্রেতারা কারখানায় কাপড় আসার পর তিন সপ্তাহের মধ্যে পণ্যের শিপমেন্ট চায়। দেরি হলেই উড়োজাহাজে পাঠাতে হয়। এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাপড় আমদানিতেও সমস্যা হচ্ছে। বেনাপোলে কাঁচামাল দিনের পর দিন পড়ে থাকছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও সময় বেশি লাগছে। এসব চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি করোনার কারণে চলতি বছর আমরা ব্যবসায় বড় ধরনের কোনো সম্প্রসারণে যাইনি। তবে অন্তর্বাসের কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছি। তাতে ২ হাজার কর্মী বেড়েছে। বর্তমানে অন্তত গ্রুপের ৭ কারখানায় কাজ করছেন ২৭ হাজার কর্মী।
চীনের কাঁচামাল সরবরাহে বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে দেশটির অনেক কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবার গত দুই বছরে লম্বা সময় তারা লকডাউনে ছিল। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাংলাদেশমুখী হয়েছে। তারা পোশাকের পাশাপাশি সিনথেটিক জুতাসহ অন্যান্য পণ্যও বাংলাদেশ থেকে নিতে চাইছে। আমাদের উদ্যোক্তারা যদি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বিনিয়োগ করেন, তাহলে ব্যবসা আরও আসবে।
শরীফ জহির
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অনন্ত গ্রুপ