করোনার কারণে দেশের পাঁচ তারকা হোটেল ব্যবসায় ধস নেমেছে। রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলগুলো বলতে গেলে এখন প্রায় অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছে। একের পর এক বাতিল হচ্ছে রুম ও অনুষ্ঠানের আগাম বুকিং। বিদেশি অতিথিদের বুকিং বাতিলের পাশাপাশি দেশীয় বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজনও বাতিল করা হচ্ছে।
ঢাকার চার ও পাঁচ তারকা মানের পাঁচটি হোটেলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর মধ্যে হোটেল ব্যবসা ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ কমে গেছে। তাতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন হোটেলের মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জানা গেছে, মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠান সামনে রেখে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ বিদেশি রাষ্ট্রের বহু অতিথির আগাম বুকিং ছিল ঢাকার বিভিন্ন তারকা হোটেলে। করোনার কারণে সরকার ১৭ মার্চের মূল অনুষ্ঠান বাতিল করায় বিদেশি অতিথিরাও তাঁদের সফর বাতিল করেছেন। পাশাপাশি বাতিল হয়ে গেছে হোটেলগুলোতে নির্ধারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনও।
জানতে চাইলে তারকা হোটেল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিহা) উপদেষ্টা ও ইউনিক হোটেলের (ওয়েস্টিন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর আলী বলেন, করোনার প্রভাবে বর্তমানে তারকা হোটেলগুলোতে অতিথির উপস্থিতি ১০ থেকে ১৫ শতাংশে নেমে গেছে। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় এ সময়ে হোটেলগুলোর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অতিথিতে পূর্ণ থাকত।
ওয়েস্টিন হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর আলী আরও বলেন, বিভিন্ন তারকা হোটেলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি কিছু অতিথি দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থান করেন। করোনা–আতঙ্কে তাঁরাও চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে হোটেলগুলো একেবারে অতিথিশূন্য হয়ে পড়বে।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর তা দ্রুত ছড়াতে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে, বর্তমানে বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। তার মধ্যে প্রায় ৯ হাজার মারা গেছে।
>স্বাভাবিক অবস্থায় এই সময়ে যেখানে হোটেলগুলোতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অতিথিতে পূর্ণ থাকে, এখন তা কমে ৮ থেকে ১০ শতাংশে নেমেছে।
বাংলাদেশে ৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত তিন ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার ঘোষণা দেয় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার ঘোষণার পর থেকে তারকা হোটেলগুলোতে অতিথি উপস্থিতি ব্যাপকভাবে কমে যায় বলে জানা গেছে। তবে হোটেল কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সরাসরি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি রাফিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি—এ সময়টা বাংলাদেশে পর্যটন মৌসুম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর পুরো মৌসুমটি কেটেছে পর্যটক খরায়। আমাদের সদস্যদের কাছে যেসব বুকিং ছিল, সেগুলোর শতভাগই বাতিল হয়ে গেছে। বিশ্বজুড়ে করোনার যে প্রভাব, তাতে আগামী মৌসুমেও পর্যটক পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।’
টোয়াব সভাপতি রাফিউজ্জামান আরও বলেন, ‘আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে টোয়াবের উদ্যোগে একটি পর্যটন মেলা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে সেই আয়োজন আমাদের স্থগিত করতে হয়েছে।’
তারকা হোটেলগুলোর ব্যবসার ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাধারণত স্বাভাবিক সময়ে মাসে ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। কিন্তু সেটি এখন কমে নেমে এসেছে ৫ কোটির ঘরে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশি কিছু বিশেষজ্ঞের অবস্থানের কারণে কিছুটা ব্যবসা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের চার তারকা মানের হোটেল পেনিনসুলার কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ নূরুল আজিম বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিদেশিদের আগমনের হার কমেছে। একইভাবে ব্যবসাসহ নানা কাজে দেশের অভ্যন্তরেও মানুষের চলাচল কমে গেছে। তাই দেশি-বিদেশি দুই পর্যায়ের গ্রাহকই কমেছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে পাঁচ তারকা হোটেল ১৭টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় রয়েছে নয়টি, কক্সবাজারে চারটি, চট্টগ্রাম, যশোর, বগুড়া ও মৌলভীবাজারে একটি করে। আর চার তারকা হোটেল আছে চারটি। যার দুটি ঢাকায়, দুটি চট্টগ্রামে।