ফেসবুক, গুগলের মতো অনাবাসী প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন দিলে ১০০ টাকার জন্য ভ্যাট-করসহ ১৪৩ টাকা ৭৫ পয়সা পরিশোধ করতে হয়। অন্যদিকে হুন্ডি বা অন্য অবৈধ উপায়ে ১০০ টাকা পরিশোধ করলেই হয়। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে এই ধরনের বৈষম্য চলছে। ফলে দেশীয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।
আজ সোমবার ‘ডিজিটাল অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ইন ফরেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মস’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার ভবনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা এ কে এম ফাহিম মাশরুর।
ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি অ্যানালাইজেন বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রিসালাত সিদ্দিক বলেন, ‘এ দেশ থেকে ফেসবুক, গুগলের মতো অনাবাসী প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধ করতে চাইলে ভ্যাট-কর দিতে হয়। গুগল বা ফেসবুকের মতো অনাবাসী প্ল্যাটফর্মে ১০০ টাকার বিজ্ঞাপন দিলে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনাবাসী কর হিসেবে উৎসে ২০ টাকা কাটার কথা। সে হিসেবে তাদের পাওয়ার কথা ৮০ টাকা। কিন্তু যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানগুলো এ কর দিচ্ছে না এবং বাংলাদেশি বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে পুরো ১০০ টাকাই নিচ্ছে, সে জন্য বিজ্ঞাপনদাতাদের ২৫ টাকা মার্কআপ হিসেবে ১২৫ টাকা দিতে হচ্ছে। এর ওপর শতকরা ১৫ ভাগ হিসেবে ভ্যাট দিতে হচ্ছে ১৮টাকা ৭৫ পয়সা। সব মিলিয়ে ১০০ টাকার বিজ্ঞাপনের মূল্যের ওপর ২৫ টাকা কর এবং ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা ভ্যাট মিলেয়ে মোট দিতে হয় ১৪৩ টাকা ৭৫ পয়সা। অন্যদিকে কোনো প্রতিষ্ঠান ভ্যাট-কর ফাঁকি দিতে চাইলে হুন্ডি বা অবৈধ উপায়ে ১০০ টাকায় সেই বিজ্ঞাপন দিতে পারছে। ফলে যারা নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা করতে চান, তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন।’
অনুষ্ঠানে এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, দেশীয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরেকটু কর সুবিধা দিলে বিজ্ঞাপনের নামে টাকা বিদেশে চলে যাবে না।
একই মত দেন এসএসএল ওয়ারলেসের প্রধান পরিচালক কর্মকর্তা আশিস চক্রবর্তী। তিনি মনে করেন, স্থানীয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া উচিত। তারাও পণ্য ও সেবা প্রচার-প্রসারে ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রথম আলোর হেড অব ডিজিটাল বিজনেস জাবেদ সুলতান বলেন, স্থানীয় কনটেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলোকে সরকারের তরফ থেকে সহায়তা দেওয়া উচিত। স্থানীয় কনটেন্ট প্রকাশন প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেন সরাসরি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিজ্ঞাপন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। এতে দেশের টাকা দেশেই থাকবে।
অনলাইন পোর্টাল প্রিয়শপ ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুল আলম খান বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপনের বাজার আকার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এর বেশির ভাগই হিসাবের মধ্যে রাখা যায় না। কারণ বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা ও পণ্যের বিজ্ঞাপনের বিল অনেক ক্ষেত্রেই দেশের বাইরে থেকে পরিশোধ করা হয়। ফলে সরকার রাজস্ব হারায়।
আলোচনায় অনাবাসী করের বিষয়টি বাদ দিয়ে এই বৈষম্য সমাধানের জন্য সরকারের নীতি নির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। তারা মনে করেন এতে এই ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের খাত থেকে সরকারের রাজস্ব কমবে না, বরং বাড়বে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন মাস্টার কার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মো. কামাল, ডেলিগ্রামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াইজ রহিম প্রমুখ।