আবদুল খালেক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। ছয় বছর আগে তিনি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে অবসর নিয়েছেন। মোটামুটি ভালোই বেতন পেতেন। তাই নিয়মিত কর দিতেন। এখন ছেলের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন। নাতি-নাতনিদের সঙ্গেই তাঁর দিন কাটে। কোনো আয় নেই। তবু তাঁকে এখনো প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হচ্ছে। কারণ, তাঁর কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই–টিআইএন) আছে। করোনার মধ্যেও তাঁকে ঝুঁকি নিয়ে রিটার্ন দিতে হয়েছে।
বর্তমান আয়কর অধ্যাদেশে টিআইএন বাতিল বা স্থগিত করাসংক্রান্ত ধারা নেই। তাই আপনি একবার টিআইএন নিলে জীবনভর প্রতিবছর আয়-ব্যয়ের বিবরণী জানিয়ে রিটার্ন জমা দিয়ে যেতে হবে।
যেহেতু কয়েক বছর ধরে আয় নেই, সেহেতু ই–টিআইএন বাতিল করতে চেয়েছেন। কিন্তু পারছেন না। কারণ, এ–সংক্রান্ত অধ্যাদেশে টিআইএন বাতিলের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। সে জন্য অনেককে প্রতিবছর খালেক সাহেবের মতো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
বর্তমান আয়কর অধ্যাদেশে টিআইএন বাতিল বা স্থগিত করাসংক্রান্ত ধারা নেই। তাই আপনি একবার টিআইএন নিলে জীবনভর প্রতিবছর আয়-ব্যয়ের বিবরণী জানিয়ে রিটার্ন জমা দিয়ে যেতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণে করযোগ্য আয় না থাকলেও কিন্তু রিটার্ন দেওয়ায় কোনো ছাড় নেই। এমনকি বছরের পর বছর আপনার যদি এক টাকাও আয় না হয়, তবু রিটার্ন দিতে হবে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি টিআইএন বাতিল বা স্থগিত করতে চাইলেও পারবেন না। তবে জমির ক্রেতা ও ক্রেডিটধারীরাই কেবল এ ক্ষেত্রে মাফ পান।
বর্তমানে দেশে ৬৭ লাখ টিআইএনধারী আছেন। এর মধ্যে এ বছর ২৩ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দিয়েছেন। রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারায় জরিমানা ও বিলম্ব সুদ আরোপের বিধান আছে।
সে জন্যই হয়তো দীর্ঘদিন ধরে একটি কথা চালু আছে, একবার করের জালে ঢুকে পড়লে, আর বেরোনোর সুযোগ নেই। কথাটি পুরোপুরি সত্য। ১২ সংখ্যার টিআইএন থাকা মানে আর কর জাল থেকে বের হওয়া যাবে না। এমনকি করদাতার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারদেরও সেই জের টানতে হয়। মৃত্যুর সময় করদাতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বা ব্যবসা থেকে কোনো আয় হলে তাঁর পক্ষে রিটার্ন জমা দিয়ে কর দিতে হবে।
সব টিআইএনধারীর জন্যই রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। বর্তমানে দেশে ৬৭ লাখ টিআইএনধারী আছেন। এর মধ্যে এ বছর ২৩ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দিয়েছেন। রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারায় জরিমানা ও বিলম্ব সুদ আরোপের বিধান আছে।
করযোগ্য আয় না থাকলেও কিছু পেশাজীবী বা বিশেষ শ্রেণির টিআইএনধারীর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আয়কর আইন বা অধ্যাদেশে দুইভাবে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রথমত, নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়সীমা অতিক্রম করলে সব টিআইএনধারী বা নিবন্ধিত করদাতাকে বছর শেষে রিটার্ন দিতে হয়। তবে করযোগ্য আয় না থাকলেও কিছু পেশাজীবী বা বিশেষ শ্রেণির টিআইএনধারীর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয়ত, সব টিআইএনধারীকেই রিটার্ন দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু পেশাজীবী বা বিশেষ শ্রেণির করযোগ্য আয় না থাকলে রিটার্ন দিতে হয় না।
বাংলাদেশের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকার বেশি হলে রিটার্ন জমা দিয়ে কর দিতে হবে। ১২ সংখ্যার ই-টিআইএনধারী সবাইকে রিটার্ন দিতে হয়।
বাংলাদেশের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকার বেশি হলে রিটার্ন জমা দিয়ে কর দিতে হবে। ১২ সংখ্যার ই-টিআইএনধারী সবাইকে রিটার্ন দিতে হয়। তা থেকে কেউই রেহাই পাবেন না। আবার একই ধারায় রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক, এমন কিছু পেশাজীবী বা শ্রেণির কথাও বলা হয়েছে। যেমন গাড়ির মালিক, কোম্পানির পরিচালক, ফার্মের অংশীদার, অভিজাত ক্লাবের সদস্য, ১৬ হাজার টাকার বেশি মূল (বেসিক) বেতনধারী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পর্যায়ের কর্মকর্তা, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ, চেম্বার বা ব্যবসায়িক সমিতির সদস্য, পৌরসভা থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত প্রার্থী, ঠিকাদার, লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মালিক, দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারী।
কোনো করদাতা মারা যাওয়ার পর যদি তাঁর সম্পদ থেকে আয় হয়, তাহলে উত্তরাধিকারীদের কর দিতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, এনবিআর মৃত করদাতার সম্পদ থেকে আয়ের ওপর কীভাবে কর আদায় করবে? এর উত্তর হলো, কর কর্মকর্তারা প্রথমেই মৃত করদাতার একজন উত্তরাধিকারীকে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করবেন।
মারা গেলেও রক্ষা নেই
কোনো করদাতা মারা যাওয়ার পর যদি তাঁর সম্পদ থেকে আয় হয়, তাহলে উত্তরাধিকারীদের কর দিতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, এনবিআর মৃত করদাতার সম্পদ থেকে আয়ের ওপর কীভাবে কর আদায় করবে? এর উত্তর হলো, কর কর্মকর্তারা প্রথমেই মৃত করদাতার একজন উত্তরাধিকারীকে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করবেন। সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনার নোটিশ করে তা ওই উত্তরাধিকারকে জানাবেন। পরে ওই উত্তরাধিকারী মৃত করদাতার পক্ষে প্রতিবছর রিটার্ন জমা দিয়ে নির্ধারিত কর পরিশোধ করবেন। যত দিন পর্যন্ত ওই সম্পদ তাঁর উত্তরাধিকারীদের নামে ভাগ-বাঁটোয়ারা না হবে, তত দিন মনোনীত প্রতিনিধি ওই মৃত করদাতার পক্ষে কর দিয়ে যাবেন।
তবে এটাও মনে রাখুন, মৃত ব্যক্তির নামে থাকা সম্পদ বা ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুধু করযোগ্য আয় থাকলেই রিটার্ন দিয়ে কর দিতে হবে। করযোগ্য আয় না থাকলে রিটার্ন দিতে হবে না।