কর চিহ্নিত নম্বর বা টিআইএনে আছে ১২টি সংখ্যা। অনেকেরই প্রশ্ন, ১২ ডিজিটের এই টিআইএন আছে কিন্তু করযোগ্য আয় নেই। তাহলে কি আয়কর বিবরণী বা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন কি জমা দিতেই হবে? এক কথায় এর উত্তর হচ্ছে অবশ্যই দিতে হবে। কর যোগ্য আয় না থাকলেও দিতে হবে। তবে সামান্য একটু ব্যতিক্রম আছে।
তিন শ্রেণিতে টিআইএন থাকলেও যদি করযোগ্য আয় না থাকে, তাহলে কর রিটার্ন দেওয়ার দরকার নেই। যেমন অনেকে জমি বিক্রি করতে নিয়ম মেনে টিআইএন নিয়েছিলেন, কিংবা টিআইএন নিয়েছিলেন ক্রেডিট কার্ড করার জন্য। করযোগ্য আয় না থাকলে তাঁদের আর কর রিটার্ন দেওয়ার দরকার নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশে কোনো ‘ফিক্সড বেজ’ বা স্থায়ী ভিত্তি নেই, এমন অনাবাসীদেরও কর রিটার্ন দিতে হচ্ছে না। এর বাইরে যাঁদেরই করযোগ্য আয় আছে, তাঁদের রিটার্ন দিতেই হবে।
কোনো ব্যক্তি-করদাতার আয় যদি বছরে তিন লাখ টাকার বেশি হয়; নারী এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হয় এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয়—এটাই করযোগ্য আয়। আরও পরিষ্কার করে বলা যায়—
১. প্রথম বার্ষিক তিন লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর কোনো কর দিতে হয় না।
২. তিন লাখের পরের আয়ের ১ লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ কর দিতে হয়। ওই আয়ের ওপর ব্যক্তির আয়কর হবে বার্ষিক ৫ হাজার টাকা।
৩. পরবর্তী ৩ লাখ টাকা আয়ের ওপর কর বসে ১০ শতাংশ, ফলে ব্যক্তির করের পরিমাণ দাঁড়াবে আরও ৩০ হাজার টাকা।
৪. পরবর্তী ৪ লাখ টাকার ওপর কর ১৫ শতাংশ। তখন করদাতাকে আরও ৬০ হাজার টাকা কর দিতে হয়।
৫. পরবর্তী ৫ লাখ টাকার ওপর কর হয় ২০ শতাংশ, এতে ব্যক্তিকে দিতে হয় আরও ১ লাখ টাকা কর।
৬. অবশিষ্ট টাকার ওপর কর আরোপ হয় ২৫ শতাংশ হারে। ফলে যত বেশি আয় হবে, তত বেশি করে দিতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেশ কিছু ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে।
১. এবারে যারা রিটার্ন দাখিল করবে, তাদের আয় বছর হচ্ছে ২০১৯-২০। এ আগের তিন বছরের যেকোনো বছরে যদি কর নির্ধারণ হয়ে থাকে, তাহলেও রিটার্ন দিতে হবে।
২. কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডারের কর্মচারী হলে।
৩. কোনো ফার্মের অংশীদার হলে।
৪. সরকার অথবা সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন বা ইউনিটের কর্মচারী হিসেবে যদি ১৬ হাজার টাকা বা এর বেশি মূল বেতন পান।
৫. কোনো ব্যবসায় বা পেশায় নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদে বেতনভোগী কর্মী হলে।
৬. আয়কর অব্যাহতি পেলেও হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য হলে।
৭. মোটরগাড়ির মালিক হলে (জিপ বা মাইক্রোবাসকেও বোঝাবে)।
৮. কোনো সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কোনো ব্যবসা বা পেশা পরিচালনা করলে।
৯. মূল্য সংযোজন কর আইনের অধীন নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদ থাকলে। ১০. চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার হিসেবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার নিবন্ধিত হলে।
১১. আয়কর পেশাজীবী হিসেবে এনবিআরে নিবন্ধিত হলে।
১২. কোনো বণিক বা শিল্পবিষয়ক চেম্বার অথবা ব্যবসায়িক সংঘ বা সংস্থার সদস্য হলে
১৩. কোনো পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের কোনো পদে বা সাংসদ পদে প্রার্থী হলে
১৪. কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কোনো স্থানীয় সরকারের কোনো টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলে।
১৫. কোনো কোম্পানির বা কোনো গ্রুপ অব কোম্পানিজের পরিচালনা পর্ষদে থাকলে।
১৬. মোটরযান, স্পেস বা স্থান, বাসস্থান অথবা অন্যান্য সম্পদের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত থাকেন (যেমন উবারে গাড়ি দেওয়া) এবং
১৭. লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মালিক হলে।
২০২০-২১ কর বছরের জন্য ২০২০–এর ৩০ নভেম্বর হচ্ছে রিটার্ন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব না হলে সময়সীমা বাড়ানো যায়। এ জন্য নির্ধারিত ফরমে উপযুক্ত কারণ উল্লেখ করে উপ–কর কমিশনারের কাছে আবেদন করতে হয়। এনবিআরের ওয়েবসাইটে সময় বাড়ানোর আবেদন ফরম পাওয়া যায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করলে জরিমানা, ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সরল সুদ এবং বিলম্ব সুদ আরোপ করবে এনবিআর। আর সময় বাড়ানোর অনুমোদন থাকলে কেবল জরিমানা দিতে হবে না, কিন্তু অতিরিক্ত সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ দিতে হবে।
প্রতিটি শ্রেণির করদাতার রিটার্ন দাখিলের জন্য আয়কর সার্কেল নির্দিষ্ট করা আছে। যেমন ঢাকা জেলায় অবস্থিত সব বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী ও পেনশনভুক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর নাম ‘এ’ ‘বি’ ‘সি’ অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে, তাঁদের ডাকা কর অঞ্চল-৪–এর কর সার্কেল-৭১–এ রিটার্ন জমা দিতে হবে। পুরোনো করদাতারা বর্তমান সার্কেলে রিটার্ন জমা দেবেন। নতুন করদাতারা তাঁদের নাম, চাকরিস্থল বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানার ভিত্তিতে নির্ধারিত সার্কেলে টিআইএন উল্লেখ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন।
রিটার্ন দাখিলের সময় অনেকে বিদেশে অবস্থান করলে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসেও রিটার্ন দাখিল করা যায়। আবার কোনো সরকারি কর্মকর্তা প্রেষণে বা ছুটিতে উচ্চশিক্ষা বা প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে থাকলে বা লিয়েনে বাংলাদেশের বাইরে থাকলে, প্রেষণ বা লিয়েন শেষ করে দেশে আসার তিন মাসের মধ্যে সব রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
উপ–কর কমিশনার, সদর দপ্তরের (প্রশাসন) টেলিফোন নম্বর
কর অঞ্চল-১, ঢাকা: ০২-৯৩৩৪৩৭৮
কর অঞ্চল-২, ঢাকা: ০২-৯৩৩১৯৬৮
কর অঞ্চল-৩, ঢাকা: ০২-৯৩৩০৫৫২
কর অঞ্চল-৪, ঢাকা: ০২-৯৩৩০৮৬৫
কর অঞ্চল-৫, ঢাকা: ০২-৯৩৩৩১৪৫
কর অঞ্চল-৬, ঢাকা: ০২-৯৩৪৯০৮৬
কর অঞ্চল-৭, ঢাকা: ০২-৮৩২২০৪০
কর অঞ্চল-৮, ঢাকা: ০২-৯৫৮৫২৩১
কর অঞ্চল-৯, ঢাকা: ০২-৭৯১৩৭৭২
কর অঞ্চল-১০, ঢাকা: ০২-৮৩৯১২০৮
কর অঞ্চল-১১, ঢাকা: ০২-৯৫১৪৮৩২
কর অঞ্চল-১২, ঢাকা: ০২-৭১১৯৮৮৪
কর অঞ্চল-১৩, ঢাকা: ০২-৯৫৮৮৬২৫
কর অঞ্চল-১৪, ঢাকা: ০২-৯৫১৩২৬০
কর অঞ্চল-১৫, ঢাকা: ০২-৮৩৩১৬৭৮
কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রাম: ০৩১-৭২৩১১৬
কর অঞ্চল-২, চট্টগ্রাম: ০৩১-২৫১৫৫৭২
কর অঞ্চল-৩, চট্টগ্রাম: ০৩১-৭২৮৩২৬
কর অঞ্চল-৪, চট্টগ্রাম: ০৩১-৭২৬৪৬৬
কর অঞ্চল-খুলনা: ০৪১-৭৬১৯৮৩
কর অঞ্চল-রাজশাহী: ০৭২১-৭৭৫৭৯৭
কর অঞ্চল, রংপুর: ০৫২১-৬১৭৭৩
কর অঞ্চল, সিলেট: ০৮২১-৭২৫৪৩২
কর অঞ্চল-বরিশাল: ০৪৩১-২১৭৭৭৯০
কর অঞ্চল-গাজীপুর: ০২-৯২৬১৮০৪
কর অঞ্চল-নারায়ণগঞ্জ: ০২-৭৬৪৬২৬২
কর অঞ্চল-বগুড়া: ০৫১-৬৭৯২১
কর অঞ্চল-কুমিল্লা: ০৮১-৭২৬৭০
কর অঞ্চল-ময়মনসিংহ: ০৯১-৬৬১৭৫
বৃহৎ করদাতা ইউনিট: ০২-৯৩৩২০১০, এক্স-১০৬
কেন্দ্রীয় জরিপ অঞ্চল, ঢাকা: ০২-৯৫১৪৪৬৯