সাক্ষাৎকার

জ্বালানি খাতে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে ইডকল

মাহমুদ মালিক
মাহমুদ মালিক

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) শতভাগ রাষ্ট্রমালিকানাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কম জ্বালানি ব্যবহারে অর্থায়ন করে প্রতিষ্ঠানটি। ইডকলের আয়োজনে ঢাকায় আজ রোববার শুরু হচ্ছে ক্লিন এনার্জি সামিট। ইডকলের কার্যক্রম ও সামিট নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ মালিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব।
প্রথম আলো: ইডকল একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আর্থিক খাতের তেমন উপস্থিতি দেখা যায় না। আসলে ইডকলের কার্যক্রম কী?
মাহমুদ মালিক: ইডকল বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত শতভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি দেশের জ্বালানি খাতে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য বেসরকারি খাতের মাধ্যমে অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন করা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কম জ্বালানি ব্যবহার নিয়েও ইডকল কাজ করে। অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন ছাড়া ইডকল নিজে কিছু করে না। তবে অন্য খাতে কারিগরি সহায়তা, সচেতনতা ও সক্ষমতা তৈরিতে কাজ করে। বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইডকল অর্থায়ন করে, তারা গ্রাহকদের ঋণ ও পণ্য দেয়। উন্নত চুলা ব্যবহারে ও সৌরচালিত সেচপাম্প ব্যবহারে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে। আমরা উন্নয়ন-সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ ও অনুদান দুটোই পেয়ে থাকি। সরকারের সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয়, আমরা তা বাস্তবায়ন করি। সম্প্রতি গ্রিন ক্লাইমেট তহবিলের সনদ পেয়েছে ইডকল। সরকার ইডকলকে ৩০ কোটি টাকা মূলধন দিয়েছিল। ইডকল মুনাফা থেকে মূলধন ৬০০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে। গত বছর কর-পরবর্তী ৭০ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছিল। চলতি বছর তা ১২০ কোটি টাকায় উন্নীত হবে। ইডকলের ঋণ প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। এর ৬০ শতাংশ গেছে অবকাঠামো খাতে, বাকিটা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে।
প্রথম আলো: অবকাঠামো উন্নয়নে কোথায় অর্থায়ন করেছে ইডকল?
মাহমুদ মালিক: বেসরকারি খাতের প্রথম মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আমরা আট কোটি ডলার দিয়েছি। এ দিয়েই আমাদের যাত্রা। প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইডকল অর্থায়ন করেছে। সামিট, কনফিডেন্স, এনার্জি প্যাক, বারাকা পাওয়ারসহ অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রয়েছে ইডকলের অর্থায়ন। সম্প্রতি ভোলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আমরা আট কোটি ডলার অর্থায়ন করেছি, যার মেয়াদ ১৮ বছর। এ ছাড়া ড্রাই ডক, জাহাজ নির্মাণ, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনালেও (এলএনজি) ইডকলের পক্ষ থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে।
প্রথম আলো: নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে ইডকল কী কাজ করছে?
মাহমুদ মালিক: ২০০৩ সালে আমরা বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাড়িতে সৌরবিদ্যুতের প্রকল্প চালু করি। ৪০ লাখের বেশি বাসায় সৌরবিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। বাসায় সৌরবিদ্যুতের সংযোগের পর আমরা চরাঞ্চলে জ্বালানি দেওয়া শুরু করি। এ সময় ছোট আকারের গ্রিড ও সেচেও সংযোগ দেওয়া হয়। চরে যেসব ঘনবসতি, সেখানে ছোট আকারের গ্রিড নিয়ে যাচ্ছি, এর আকার ২০০ কিলোওয়াট। এরই মধ্যে ২৪টি ছোট আকারের গ্রিড উৎপাদনে আছে, আরও ১৫টি শিগগির যাবে। এর ফলে চরের মানুষের শহরের মতো বিদ্যুৎ-সুবিধা পাবে। এসব এলাকায় মানুষ বিদ্যুৎ খরচ কম হয়, এমন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন। চরের মানুষেরা শহরের চেয়ে বিদ্যুৎ কম ব্যবহারে বেশি সচেতন। পল্লি এলাকায় জ্বালানিতে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমেই এটা সম্ভব হয়েছে। রংপুর, কুষ্টিয়া এলাকায় ১ হাজার ২০০ সৌরচালিত সেচপাম্প বসানো হয়েছে। উন্নত চুলা দেওয়া হয়েছে দেশের ১৬ লাখ বাসায়।
প্রথম আলো: জ্বালানি কম ব্যবহৃত হয়, এ জন্য বিশেষ কী উদ্যোগ নিয়েছে ইডকল?
মাহমুদ মালিক: কম জ্বালানি ব্যবহৃত হয়, এসব প্রকল্পে আমরা অর্থায়ন করছি। পোশাক, সিমেন্ট, টেক্সটাইলসহ যেসব খাতে কম জ্বালানি ব্যবহৃত হয়, এমন যন্ত্র কিনতে অর্থায়ন করা হচ্ছে। ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদে এসব অর্থায়ন পাচ্ছে গ্রাহকেরা। এ ছাড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে মনোযোগ দিচ্ছে। এর ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। পোশাক ও পোলট্রি খাতে এর ব্যবহার হচ্ছে। ৫০ থেকে ৬০টি আবেদন জমা পড়েছে। আগামী ৩ বছরে ৫০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এর মাধ্যমে।
প্রথম আলো: ক্লিন এনার্জি সামিট আয়োজনের উদ্দেশ্য কী?
মাহমুদ মালিক: সৌরবিদ্যুতের বিভিন্ন ব্যবহার ও কম জ্বালানি ব্যবহার নিয়ে কথা বলতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা আসবেন। তাঁরা অভিজ্ঞতা থেকে এর ব্যবহার ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবেন। সাধারণ জনগণের মধ্যে যাতে সচেতনতা গড়ে ওঠে, এটা আমরা চাই। আমরা প্রত্যেকে যদি বাসায় এলইডি বাতি ব্যবহার করি, বিদ্যুৎ কম খরচ করি, তাহলেই ধরণিকে সহায়তা করা হবে। যেকোনো দেশে কেউ কম জ্বালানি ব্যবহার করলে এর উপকার সবাই পাবে। আবার কেউ বেশি ব্যবহার করলে পরিবেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার ভুক্তভোগী হবে পুরো বিশ্ব। তবে আমরা দূষণ অনেক কমিয়েছি। পরিবেশকে আরও সহায়তা করতে চাই। সবাই নিজের পরিবেশে জ্বালানি কম ব্যবহার করলে এর উপকার পাবে পুরো বিশ্ব।