দেশে চার থেকে পাঁচজন বড় ব্যবসায়ী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ কারণেই হঠাৎ হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যায় বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল শনিবার বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন আয়োজিত ‘টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল খান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, শ্রম ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ আবদুর রাজ্জাক। বাণিজ্যসচিব মো. মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ছিলেন সেমিনারের বিশেষ অতিথি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন সরকার গঠিত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই হঠাৎ চালের দাম বেড়ে গেল। তখন আমি খাদ্যমন্ত্রীসহ চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করলাম। জানতে পারলাম, দেশের মাত্র চার-পাঁচজন বড় ব্যবসায়ী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। ফলে তাঁদের মধ্যে একটা যোগসাজশ তৈরি হয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ ধরনের যোগসাজশ থাকলেই সাধারণ জনগণ ক্ষতির মুখে পড়ে।’ তাই কোনো খাতের ব্যবসায়ীরা যেন যোগসাজশ করতে না পারেন, সে জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনকে এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
ব্যবসায়িক খাতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি না হলে সাধারণ জনগণ উপকার পাবে না—এমন মন্তব্য করে টিপু মুনশি বলেন, প্রতিযোগিতা না থাকলে ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে পণ্যের মূল্য ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দিতে পারেন। আর প্রতিযোগিতা থাকলে ১০ টাকার পণ্য ৭ টাকায় পেতে পারে জনগণ। এ জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
টিপু মুনশি বলেন, কোথাও কোথাও এমনভাবে টেন্ডার করা হয় যেখানে অনেকে অংশগ্রহণই করতে পারে না বা অনেককে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয় না। এভাবে চলতে পারে না। দেশের টেকসই উন্নয়নে সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে।
নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন প্রথম মোবাইল ফোন কিনলাম, তখন দেশে একটি মোবাইল কোম্পানি ছিল। সে জন্য সিটিসেলের একটি ফোনের দাম ছিল ৯০ হাজার টাকা। এখন মোবাইল ফোনের দাম অনেক কমে গেছে। অনেকগুলো কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়েছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে।’
পবিত্র রমজান মাসের আগেই পণ্যের অবৈধ মজুত ও দাম বাড়ার সুযোগ দেওয়া হবে না বলে একশ্রেণির ব্যবসায়ীকে হুঁশিয়ার করে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে অশুভ প্রবণতা থেকে দূরে থাকারও আহ্বান জানান তিনি। বলেন, গুটিকয়েক মানুষের লাভের জন্য দেশ স্বাধীন করা হয়নি। পণ্যের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার সবকিছু করবে।
প্রবন্ধে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারদরের তুলনায় বাংলাদেশে নিম্ন ও মধ্যবর্তী ভোক্তাদের ভোগ্যপণ্য কিনতে ৭০ শতাংশ বেশি মূল্য গুনতে হয়। প্রতিযোগিতা কমিশন ঠিকভাবে কাজ করলে এ ব্যবধান কমিয়ে আনা সম্ভব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, পণ্যমূল্য বেশি হওয়ায় দেশে আরও বেশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসার কথা। কিন্তু ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে বাংলাদেশ তলানির দিকে থাকার কারণে আশানুরূপ এফডিআই আসছে না।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত হতে দীর্ঘমেয়াদি কিছু ভালো পরিকল্পনা নেওয়া হলেও স্বল্পমেয়াদি ভালো মানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন আরও বলেন, সরকার বিভিন্ন দরপত্র আহ্বান করলে এমন সব শর্ত জুড়ে দেয় যে নতুনেরা অংশগ্রহণই করতে পারেন না। কেউ কেউ ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শোধ না করলেও একটা ক্লাবে ঢুকে যান। ফলে তাঁদের ঋণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃতফসিল হয়ে যায়। অথচ একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসায় লোকসান করলে দেউলিয়া হয়ে যান। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।