চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেলে খুলবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

দ্রুত এগিয়ে চলেছে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল তৈরির কাজ। সম্প্রতি টানেলের পতেঙ্গা অংশে। ছবি: জুয়েল শীল
দ্রুত এগিয়ে চলেছে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল তৈরির কাজ। সম্প্রতি টানেলের পতেঙ্গা অংশে।  ছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেলের মূল নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। ৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার লম্বা টানেলের ৪৪০ মিটার ইতিমধ্যে খনন করে রিং বসানো হয়েছে। পতেঙ্গা প্রান্তে এখন মাটির নিচে প্রতিদিনই চলছে খননকাজ। চার লেনবিশিষ্ট সড়ক টানেলের খননকাজ এগিয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ হয়ে আনোয়ারা প্রান্তের দিকে। আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই টানেল নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্ণফুলী টানেল দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। এ টানেল মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সারা দেশের সড়কপথে যোগাযোগ সহজ করবে। আবার টানেলের কারণে সহজ যোগাযোগের ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামেও নতুন নতুন আরও শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এরই মধ্যে টানেলকে কেন্দ্র করে আনোয়ারা, কর্ণফুলী ও বাঁশখালী উপজেলায় নতুন নতুন কারখানা তৈরির পরিকল্পনা করছেন উদ্যোক্তারা।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্য টানেল দিয়ে পরিবহন হবে। তাতে বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। ফলে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এ টানেল বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। টানেলের নামকরণ হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটির নির্মাণকাজ করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।

সরেজমিন

গত বৃহস্পতিবার টানেলের পশ্চিম প্রান্ত পতেঙ্গা অংশে গিয়ে দেখা যায়, চীন থেকে সেগমেন্ট (টানেলের রিং তৈরির উপাদান) এনে রাখা হয়েছে একটি চত্বরে। টানেল বোরিং মেশিন বা টানেল খননযন্ত্রে খনন করার পর এই সেগমেন্ট জোড়া লাগিয়ে রিং বানানো হচ্ছে। খনন করার পরপরই সেখানে রিং বসানো হচ্ছে। টানেলটি পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে কাফকো ও সিইউএফএল পয়েন্টের মাঝখান দিয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপারে গিয়ে উঠবে।

প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, পতেঙ্গার পাশাপাশি আনোয়ারায় টানেলের বহির্গমন পথেও কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামোর ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলেন, মূল টানেল লম্বায় ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে গাড়ি আসা-যাওয়ার জন্য থাকবে দুটি আলাদা টিউব। প্রতিটি টিউব লম্বায় ২ দশমিক ৪৫০ কিলোমিটার। এখন একটি টিউব তৈরির কাজ চলছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে সর্বনিম্ন ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ৪২ মিটার নিচ দিয়ে এ টানেল নির্মিত হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে টানেলের দুই পাশে সংযোগ সড়ক তৈরির কাজও।

টানেলে সম্ভাবনার দ্বার

টানেল ঘিরে এখনই ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পকারখানার স্থাপনের জন্য জমি কিনতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ পরিকল্পনা করছেন। আনোয়ারায় এখন কোরিয়ান ইপিজেড রয়েছে।

জানতে চাইলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, টানেলটি চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে পর্যটন বা অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থাপিত শিল্পকারখানার পণ্য যেমন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা-নেওয়া সহজ হবে তেমনি মাতারবাড়ী বন্দর হলে সারা দেশের পণ্য এই টানেল দিয়ে আনা-নেওয়া করা যাবে।