মুজিব বর্ষে সরকারের উপহার

ঘর পাবেন আরও আড়াই লাখ গৃহহীন

প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হবে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা পরে বেড়ে ২ লাখ ৭০ হাজারে উন্নীত হবে।

নতুন করে আরও আড়াই লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর উপহার দেবে সরকার। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে গৃহহীন মানুষকে এসব ঘর দেওয়া হবে। প্রথম দিকে প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হবে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা পরে বেড়ে দাঁড়াবে ২ লাখ ৭০ হাজারে। আড়াই লাখ গৃহহীনকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য ‘আশ্রয়ণ–২’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্থাপনের কথা রয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে বর্তমান সরকারের। প্রথম দফায় গত বছরের ২৩ জানুয়ারি ৬৯ হাজার ৯০৪ পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করা হয়। দ্বিতীয় দফায় গত জুনে আরও ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবারকে ঘর উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন পর্যন্ত দুই দফায় ১ লাখ ২৩ হাজার ২৪৪ পরিবারকে ঘর দিয়েছে সরকার। তৃতীয় দফায় আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে আরও প্রায় ৫০ হাজার পরিবারকে ঘর হস্তান্তরের কথা রয়েছে। সারা দেশে এখন সেসব ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় চতুর্থ দফায় নতুন করে আরও আড়াই লাখ গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

প্রতিটি ঘর নির্মাণে আগে ব্যয় ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ করা হবে।
মাহবুব হোসেন, বিদায়ী পরিচালক, আশ্রয়ণ–২ প্রকল্প

জানতে চাইলে আশ্রয়ণ–২ প্রকল্পের সদ্যবিদায়ী পরিচালক (পিডি) মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একক গৃহ নির্মাণের নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে আগে ব্যয় ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ করা হবে।

এদিকে সারা দেশে দরিদ্র মানুষদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর দেওয়া কর্মসূচিতে বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে। এ জন্য সরকারকে বিব্রত হতে হয়েছে। যেমন কোথাও কোথাও ঘর দেওয়ার নামে গৃহহীনদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আবার বিভিন্ন জায়গায় ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার মাত্র দেড়–দুই সপ্তাহের মাথায় দেয়াল ভেঙে পড়েছে।

কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর পাওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বরগুনার তালতলী উপজেলার করইবাড়িয়া ইউনিয়নের বেহেলা গ্রামের ঊর্মিলার ঘরটি ভেঙে যায়। সেই ঘরের একটি দেয়াল ভেঙে পড়ে। একই ঘটনা ঘটেছে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়। সেখানে দরিদ্র মমতাজ বেগমের নামে বরাদ্দ দেওয়া ঘরটির দেয়াল গত বছরের ৩ জানুয়ারি ধসে পড়ে। এতে মমতাজ বেগম দেয়ালচাপা পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

শুধু ঘর ভেঙে যাওয়াই নয়, প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়ার কথা বলে গৃহহীনদের কাছ থেকে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। তা ছাড়া যাঁদের পাওয়ারই কথা নয়, এমন অনেক লোককেও ঘর দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ ও বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনিয়ম নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হলে একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে টিম গঠন করে মাঠপর্যায়ে পরিদর্শনে পাঠানো হয়।

এরপর ঘরের নকশায় সংশোধনী আনা হয়। ঘর নির্মাণে টাকা বরাদ্দের পরিমাণও বাড়ানো হয়। এ ছাড়া ঘর নির্মাণের স্থান নির্বাচনেও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। যেমন নদীর পাশে, ডোবা কিংবা নিচু জায়গায় ঘর নির্মাণ না করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেশের সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, কোনো অবস্থাতেই উপকারভোগীর কাছ থেকে টাকা নেওয়া যাবে না। ঘর নির্মাণে গুণগত মান নিশ্চিতে কোনো আপস করা যাবে না। কাঠ, টিন, ইট, বালু ও সিমেন্টের গুণগত মান নিশ্চিত করে ঘর নির্মাণে ব্যবহার করতে হবে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, আশ্রয়ণ–২ প্রকল্পটি চতুর্থবারের মতো সংশোধন করে আজ মঙ্গলবার একনেক সভায় উত্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে প্রথমে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। পরে তা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এখন সেটি বাড়িয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এভাবে দফায় দফায় সংশোধনের ফলে প্রকল্পটির ব্যয় ৪ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে এখন ১১ হাজার ১৪২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা বা প্রায় আড়াই গুণ। সেই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।