এক বছরে শিল্প খাতের ৯০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হবে: শিল্প প্রতিমন্ত্রী

গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট নিয়ে সিআইপি ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ

৩৫ ব্যবসায়ীর হাতে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ (সিআইপি) সম্মানসূচক কার্ড তুলে দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। আর ব্যবসায়ীরা ওই অনুষ্ঠানেই শিল্প খাতে গ্যাস-সংযোগ ও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।অবশ্য শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে শিল্প খাতের ৯০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের হাতে সিআইপি (শিল্প) কার্ড তুলে দেওয়া হয়। শিল্প স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ সামগ্রিকভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালের জন্য এই ৩৫ ব্যবসায়ীকে সিআইপি কার্ড দেওয়া হলো।অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের কাজ শিল্প স্থাপন করা না। আমাদের কাজ শিল্পে সহায়তা দেওয়া, সঠিক নীতি প্রণয়ন করা। আমরা সে কাজ করে যাচ্ছি।’সিআইপি কার্ড পাওয়া এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘শিল্পায়নের প্রধান সমস্যা গ্যাস। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা আমাদের এক অনুষ্ঠানে এসে বলেছিলেন, এক মাসের মধ্যে শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু, এখনো গ্যাস দেওয়া হয়নি। কেন হয়নি জানি না।’ গ্যাস না পেয়ে ব্যবসায়ীরা বয়লার চালানো, উৎপাদনের ইউনিট বাড়াতে পারছেন না বলে জানান তিনি।পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়া এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন এ কে আজাদ। তিনি বলেন, ‘হাইওয়ে থেকে পণ্যসহ ট্রাক মাঝেমধ্যেই উধাও হয়ে যায়। এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।’বর্তমানে বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি এ কে আজাদ আরও বলেন, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ তৈরি পোশাকের জন্য যে আলাদা মন্ত্রণালয় করার দাবি করছে তা যুক্তিযুক্ত। তবে এর সঙ্গে বস্ত্র খাতকেও যুক্ত করতে হবে। তৈরি পোশাক নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় করতে পারলে এখনকার দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলারের রপ্তানি পাঁচ হাজার কোটিতে উন্নীত করা সম্ভব।আরেক সিআইপি বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘এখন আমরা শিল্প খাতে ভালো করছি। তবে গ্যাসসংযোগ, বিদ্যুৎ ও রাস্তাঘাটের দিকে নজর দিলে আরও ভালো করব।’রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিংবা খুব গুরুত্বপূর্ণ (ভিভিআইপি) না হতে পারি, কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে তো গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা শুধু বলে দেবেন বিমানবন্দরে যেন আমরা একটু ভালো সেবা পাই।’এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ বলেন, ‘তাজরীনের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ওদের দেশে হাজার হাজার লোক মারা গেলে কেউ কিছু বলে না। আমাদের দেশে দু-একজন মারা গেলেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়।’ তিনি বলেন, রাজনীতিকদের দেখে নয়, বরং ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড দেখেই এ দেশের প্রতি বিদেশিদের আস্থা বাড়ছে।শিল্প প্রতিমন্ত্রীও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘হয়তো দেশে যে গতিতে শিল্পায়ন হচ্ছে সে অনুযায়ী আমরা গ্যাস-বিদ্যুৎ দিতে পারছি না। গ্যাসের, বিদ্যুতের অভাব আছে। কিন্তু এর মধ্যেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত শিল্পসচিব মো. ফরহাদ উদ্দিন।এ বছর ছয়টি বিভাগে মোট ৩৫ জনকে সিআইপি নির্বাচিত করা হয়। এর মধ্যে পদাধিকার বলে আট, বৃহৎ শিল্প বিভাগে ১৩, মাঝারি শিল্প বিভাগে ছয়, ক্ষুদ্র শিল্প বিভাগে তিন, মাইক্রো শিল্প বিভাগে দুই ও সেবা শিল্প বিভাগে তিনজনকে সিআইপি ঘোষণা করা হয়েছে।